ক্রাইমবার্তা আন্তর্জাতিক ডেস্ক :বিশ্বকে নেতৃত্ব দিতে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে বিশেষ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানিয়েছেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে।
বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে যুক্তরাষ্ট্রের ফিলাডেলফিয়ায় ক্ষমতাসীন রিপাবলিকান কংগ্রেস সদস্যদের সঙ্গে সভায় তিনি এ আহ্বান জানান।
তবে এই বিশেষ সম্পর্ক সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ ও বারাক ওবামা এবং সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার ও ডেভিড ক্যামেরনের মতো জোড়া বেঁধে আফগানিস্তান-ইরাকে আগ্রাসন চালানোয় পর্যবসিত হবে না বলে জানান থেরেসা।
বরং বিশ্বে ফের নিজেদের ভাবমূর্তি গড়ে তুলতে যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্য আর কোনো সার্বভৌম দেশে আগ্রাসন চালাবে না বলে আশাবাদ জানান যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট পদে বসার পর ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে হোয়াইট হাউজে শুক্রবার প্রথম বিদেশী নেতা হিসেবে থেরেসা মের সাক্ষাৎ অনুষ্ঠিত হবে।
এ উপলক্ষে যুক্তরাষ্ট্র সফর করছেন থেরেসা মে। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে ফিলাডেলফিয়ায় ক্ষমতাসীন রিপাবলিকান কংগ্রেস সদস্যদের সঙ্গে সভা করেন তিনি।
ওই সভায় দেয়া ভাষণে যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্য এবং এর নেতাদের ঐক্যব্ধ হয়ে নতুন চ্যালেঞ্জসমূহ মোকাবিলা করার আহ্বান জানান যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী।
এরমধ্যে তিনটি চ্যালেঞ্জের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেন তিনি। তা হলো- এশিয়ার অর্থনৈতিক উত্থানের কারণে পশ্চিমা শক্তির শক্তি ম্লান হয়ে যাওয়া নিয়ে লোকজনের ভীতি, ইসলামী চরমপন্থার হুমকি এবং রাশিয়ার পুনরুত্থানের চ্যালেঞ্জ।
এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্যকে যৌথ নেতৃত্ব গড়ে তুলতে বলেন থেরেসা মে। তিনি বলেন, ‘আমাদের দুই দেশেরই যৌথভাবে নেতৃত্ব দেয়ার কর্তব্য রয়েছে। কারণ আমরা পিছিয়ে পড়লে অন্যরা এগিয়ে যাবে, এটি আমেরিকা, ব্রিটেন এবং বিশ্বের জন্য খারাপ ব্যাপার।’
তবে দুই দেশের নতুন সর্ম্পক মানে আগের মতো একযোগে সার্বভৌম দেশে আগ্রাসন চালানোর ব্যর্থ নীতিতে ফিরে যাওয়া নয় বলেও স্পষ্ট করেন থেরেসা মে।
তিনি বলেন, বিশ্বকে নিজেদের ভাবমূর্তির আলোকে পুনর্গঠন করতে গিয়ে সামরিক হস্তক্ষেপের ব্যর্থ নীতিতে যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্য আর ফিরে যেতে পারে না।
তবে সত্যিকারে কোনো হুমকি দেখা দিলে তা মোকাবেলায় যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্য বসে থাকবে না বলেও মন্ত্যব করেন থেরেসা মে।
রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে সাবেক প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যানের নীতি অনুসরণ করতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে পরামর্শ দেন তিনি।
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বলেন, পুতিনের সঙ্গে যোগাযোগের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকুন। রাশিয়ার সঙ্গে কথা বলার সময় প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যানের নীতি অনুসরণ করাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ। তিনি রুশ প্রেসিডেন্ট মিখাইল গর্বাচভের সঙ্গে আলোচনার ব্যাপারে ‘যাচাই করে বিশ্বাস করো’ নীতি মেনে চলতেন।
সংঘাত অনিবার্য বা স্নায়ুযুদ্ধের মতো বিরোধের তেমন শংকা না থাকলেও রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষার ক্ষেত্রে শক্ত অবস্থান বজায় রাখার আহ্বান জানান থেরেসা মে।
এছাড়া তিনি মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের প্রভাব কমিয়ে আনাকে অন্যতম প্রধান বিদেশী নীতি আখ্যা দিয়ে ওই অঞ্চলের আরব দেশগুলোকে ইরানের আগ্রাসনের বিপক্ষে সমর্থন দেয়ার কথা বলেন।
ইরানকে চাপে রাখতে ছয় পরাশক্তির পারমাণবিক চুক্তির শর্তগুলো ইরান ঠিকমতো মানছে কিনা, তা আরও সতর্কভাবে খেয়াল রাখারও আহ্বান জানান যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী।
এদিকে ট্রাম্প প্রশাসন জিজ্ঞাসাবাদের ক্ষেত্রে নির্যাতনমূলক পদ্ধতি ফিরিয়ে আনার ঘোষণা দিলেও এক্ষেত্রে নিজেদের নির্যাতন বিরোধী অবস্থান বজায় রাখার কথা বলেন তিনি।