৮০ মণ গরু ও ১০ মণ খাসির মাংসে আ. লীগ নেতার প্রীতিভোজ!

ক্রাইমবার্তা রিপোট:দেড়’শ মণ চালের ভাত। সঙ্গে ৮০ মণ গরু ও ১০ মণ খাসির মাংস, ৫০ মণ মাছ ভাজা, ৫০ মণ দই ও ২০ মণ মিষ্টি। রান্না করেছেন ১২০ জন বাবুর্চি, পরিবেশন করেছেন দেড় হাজার স্বেচ্ছাসেবী। আর খেয়েছেন ৩০ হাজার অতিথি। জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার রোয়াইর গ্রামে ‘শীত উপভোগ’ করতে এই মহাআয়োজন করা হয়। আর অভিনব এই উদ্যোগ নেন আক্কেলপুর উপজেলা কৃষক লীগের আহ্বায়ক জিয়াউল হক জিয়া। রান্নার আয়োজন

জানা গেছে, রীতিমত কার্ড ছাপিয়ে ওই আয়োজনে দাওয়াত করেন জিয়াউল হক জিয়া।  জেলার পাঁচ উপজেলার সরকার দলীয় নেতা-কর্মী, গণ্যমান্য ব্যক্তি, বিভিন্ন দফতরের কর্মকর্তা, অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী, মুক্তিযোদ্ধা, সাংবাদিক এবং এলাকার সাধারণ মানুষেরাও ছিলেন অতিথি তালিকায়।

আজ মঙ্গলবার (৩১ জানুয়ারি) দুপুরে আক্কেলপুরের রোয়াইর গ্রাম সংলগ্ন ২০ একর জায়গা জুড়ে দাওয়াতি মানুষদের আপ্যায়িত করতে সাজানো হয় প্যান্ডেল। দুপুর ১২টার মধ্যেই দাওয়াতি মানুষের পদভারে মূখরিত হয়ে উঠে পুরো এলাকা। সুষ্ঠুভাবে মানুষদের আপ্যায়ন করতে নিযুক্ত করা হয় দেড় হাজার স্বেচ্ছাসেবীকে। রান্না-বান্নার জন্য বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলা থেকে বাবুর্চি আনা হয় ১২০ জন। ভাত দিয়ে আপ্যায়নের পাশাপাশি অতিথিদের শীতের শুভেচ্ছা জানাতে পরিবেশন করা হয় হরেক রকমের পিঠাপুলিও।.

জয়পুরহাটে প্রীতিভোজঅনুষ্ঠানে সাজ-সজ্জার পাশাপাশি আসবাবপত্র ও বিভিন্ন উপকরণ সরবরাহকারী বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলার জিয়ানগরের মিম ডেকোরেটরের ইলেকট্রিক মিস্ত্রি আব্দুর রহমান জানান, রান্নার জন্য শুধু বড় সসপেনই তাদের সরবরাহ করতে হয়েছে ২৫০টি। অনুষ্ঠানে নিরাপত্তার জন্য আক্কেলপুর থানার ওসিসহ পুলিশের দল সার্বক্ষণিক দায়িত্বও পালন করেন।

অনুষ্ঠানস্থল রোয়াইর গ্রামের পার্শ্ববর্তী আওয়ালগাড়ি গ্রামের সেকেন্দার আলী জানান, প্রায় ৩০ হাজার মানুষকে খাওয়ানোর জন্য সোমবার থেকে তারা কাজ করছেন। মাছ ও মাংস রান্নার জন্য বগুড়ার দুপচাঁচিয়া থেকে আসা বাবুর্চি তোজাম্মেল হোসেন বলেন,‘সোমবার সকাল থেকে আমরা ৫০টি চুলায় মাছ ও মাংস রান্না শুরু করি। মঙ্গলবার সকাল ১১টার মধ্যে আমাদের এই রান্না সব কাজ শেষ হয়।’

আক্কেলপুর সদরের মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাই বলেন, ‘এ ধরণের আয়োজন আমাদের এলাকায় এই প্রথম। দাওয়াত পেলেও পুরো অনুষ্ঠান দেখার জন্যই মূলত এসেছি। খাবার-দাবারের জন্য মাছ, মাংস, দই ও মিষ্টির যে আয়োজন করা হয়েছে তাতে কমপক্ষে ৪৫-৫০ লাখ টাকা খরচ হতে পারে।’ .অতিথিদের জন্য এভাবেই রাখা হয় ভাত

আক্কেলপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘বেলা ১২টা বাজার সঙ্গে সঙ্গেই মানুষের ঢল নেমেছে অনুষ্ঠানস্থলে। হাজার হাজার মানুষের এই আয়োজনে যেন অনাকাঙ্ক্ষিত কোনও ঘটনা না ঘটে সেজন্য আমরা অনুষ্ঠানস্থল দেখভাল করছি।’

বেলা ২টার দিকে খাওয়ানোর জন্য দাওয়াতিদের সবাইকে সারিবদ্ধভাবে বসার জন্য মাইকে অনুরোধ জানানো মাত্র কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায় পুরো প্যান্ডেল। স্বেচ্ছাসেবকরা শান্তিপূর্ণভাবে সবাইকে খাবার পরিবেশন করেন। খবার সরবরাহ করা হয় ওয়ানটাইম প্লেটে। আর পানি পরিবেশন করা হয় ওয়ানটাইম গ্লাসে।.

জয়পুরহাটে প্রীতিভোজএলাকাবাসী জানান, আয়োজক জিয়াদের পরিবার এলাকায় প্রভাবশালী। গত ইউপি নির্বাচনে জিয়া আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হলেও শেষ পর্যন্ত নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান। হঠাৎ করে তার এই গণদাওয়াত নিয়ে এলাকায় অনেক আলোচনাই তৈরি হয়েছে। তবে সামনে উপজেলা নির্বাচনে জিয়াউল হক চেয়ারম্যান প্রার্থী হতে পারেন এমন কথাও এলাকায় চাউর হয়েছে। তবে এসব আলোচনা অস্বীকার করেছেন জিয়াউল হক জিয়া। জিয়া বলেন, ‘আমার এ আয়োজন শুধু বাঙালির শীতকালীন কৃষ্টিকালচার মনে রাখতেই।  একারণেই এলাকার মানুষের জন্য এই ডাল-ভাতের আয়োজন। অন্য কোনও উদ্দেশ্যে নয়।’

 

Check Also

কুমিল্লা ও ফরিদপুরকে বিভাগ করার সুপারিশ দেবে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন

কুমিল্লা ও ফরিদপুরকে বিভাগ করার সুপারিশ করতে যাচ্ছে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন। মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) সচিবালয় …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।