সার্চ কমিটির সুপারিশে কমিশন বাংলাদেশে নির্বাচনের ক্ষেত্রে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করবে

ক্রাইমবার্তা রিপোট: নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য রাষ্ট্রপতি যে সার্চ কমিটি করে দিয়েছেন তাদের সুপারিশের ভিত্তিতেই নির্বাচন কমিশন গঠন হবে, এর বাইরে কিছু হবে না-এমনটাই প্রত্যাশা বিশিষ্ট নাগরিকদের। সার্চ কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে যে কমিশন হবে সেটা বাংলাদেশে নির্বাচনের ক্ষেত্রে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করবে বলে মনে করছেন তারা।
27
সার্চ কমিটির সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এমন প্রত্যাশার কথা জানান দেশের বিশিষ্ট চার নাগরিক। বুধবার বেলা ১১টা থেকে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্ট জাজেস লাউঞ্জে সার্চ কমিটির সঙ্গে তারা বৈঠক করেন।

চার বিশিষ্ট নাগরিক হলেন- সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার আবু হেনা, বিশিষ্ট আইনজীবী রোকন উদ্দিন মাহমুদ, দৈনিক সমকাল পত্রিকার সম্পাদক গোলাম সারোয়ার ও ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনাম।

বৈঠক শেষে আবু হেনা সাংবাদিকদের বলেন, ‘সার্চ কমিটি সুশীল সমাজের সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময়ের যে উদ্যোগ নিয়েছেন এটা খুব শুভ পদক্ষেপ। এটা কনটিনিউ করা উচিত।’

সার্চ কমিটির নিরপেক্ষতা নিয়ে কোনো প্রশ্ন আছে কি না-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘না, তাদের অন্যভাবে দেখার কোনো সুযোগ নেই।’

গোলাম সারওয়ার সাংবাদিকদের বলেন, ‘অত্যন্ত হৃদ্যতাপূর্ণ পরিবেশে বৈঠক হয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি সার্চ কমিটি নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করবে।’ তাদের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার অবকাশ নেই বলে মনে করেন তিনি।

সমকাল সম্পাদক বলেন, ‘আমি বলেছি, অসাম্প্রদায়িক ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে যার সামান্য বিরোধ আছে তাকে নির্বাচন কমিশনের কোনো দায়িত্ব দেয়া যাবে না। এ কথাটি আমরা জোর দিয়ে বলেছি।’

গোলাম সারওয়ার বলেন, ‘সার্চ কমিটিকে বলেছি আমরা যে সুপারিশ করেছি তা যেন লিপিবদ্ধ করা হয় এবং তা যেন পরবর্তী নির্বাচন কমিশনকে দেয়া হয়।’

প্রবীণ এই সাংবাদিক বলেন, ‘আমরা মনে করি মহামান্য রাষ্ট্রপতি সার্চ কমিটিতে যোগ্য এনেছেন। তারা যে নাম পাঠাবেন সেটাও যোগ্য হবে। রাষ্ট্রপতির ওপর আমাদের আস্থা আছে।’ তিনি বলেন, ‘এই প্রথম সুশীল সমাজকে মূল্যায়ন করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে গণমাধ্যমেরও ভূমিকা আছে।’ এজন্য তিনি সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।

গোলাম সারওয়ার বলেন, ‘সবচেয়ে বড় কথা হলো চিফ ইলেকশন কমিশন। তিনি দৃঢ় হলে সব ঠিক। আমরা দৃষ্টান্ত দিয়ে বলেছি ভারতের নির্বাচন কমিশনের কথা। সেখানকার নির্বাচন কমিশন কারও কথা মানে না। মেরুদ- সোজা থাকতে হবে নির্বাচন কমিশনের। তাদের বয়স অবশ্যই ৭০ এর মধ্যে থাকতে হবে।’

সমকাল সম্পাদক বলেন, ‘আমি বলেছি, নির্বাচনী আইনের কথা বলা হচ্ছে। পৃথিবী অনেক এগিয়ে গেছে। নির্বাচনী বিষয় এখন সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা দরকার।’

মাহফুজ আনাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি একটা কথা বলেছি, আমি মনে করি ঐতিহাসিকভাবে ইলেকশন কমিশনের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। সুষ্ঠু নির্বাচনে কমিশনের গুরুত্ব অনেক।’ সার্চ কমিটির একটা ভিশন থাকা উচিত বলে মনে করেন তিনি।

ডেইলি স্টার সম্পাদক বলেন, ‘উনাদের যে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে তারা তা সুষ্ঠুভাবে পালন করবেন বলে আমাদের বিশ্বাস। উনাদের বিচক্ষণতায় নাম প্রস্তাব করবেন রাষ্ট্রপতির কাছে।’ সার্চ কমিটি একনিষ্ঠভাবে কাজ করছে বলেও মনে করেন মাহফুজ আনাম।

রোকন উদ্দিন মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘সার্চ কমিটি রিপোর্ট জমা দেয়ার সময় নাম প্রস্তাবের আগে একটি ভূমিকা রাখবেন। সেখানে বলবেন উনারা উনাদের দায়িত্ব পালনের জন্য সুশীল সমাজের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন। মতবিনিময়ের সময় কাইটেরিয়ান্সগুলো এই এই ছিল।’

প্রবীণ এই আইনজীবী বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন সম্পর্কে উনারা কিছু বক্তব্য দিয়েছেন। তা হয়ত উনাদের কার্যপরিধির মধ্যে পড়ে না। তবুও তা রাষ্ট্রপতির কাছে উপস্থাপন করবেন। যদি সম্ভব হয় ভবিষ্যতে এটা ফলো করা যেতে পারে।’

রোকন উদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘সার্চ কমিটি আমাদের চাহিদা অনুযায়ী কিছু লোক সিলেক্ট করলেন। সেই ব্যক্তি রাষ্ট্রপতি দ্বারা মনোনীত হওয়ার পর ফেইল করলে সার্চ কমিটিকে দোষারোপ করা চলবে না।’

আবু হেনা ১৯৯৬, আবু সাঈদ ২০০১ এবং শামসুল হুদা ২০০৮ সালে যে নির্বাচন করেছেন সেটাকে দৃষ্টান্তমূলক হিসেবে দেখছেন রোকন উদ্দিন মাহমুদ। তবে তার মতে আগামী নির্বাচনে যে কমিশন থাকবে এই তিনজনের সঙ্গে তাদের একটা পার্থক্য আছে। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘উনারা নির্বাচন করেছিলেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে। আর নতুন কমিশন নির্বাচন করবে রাজনৈতিক সরকারের অধীনে।’ এজন্য নতুন নির্বাচন কমিশনকে নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে হলে চ্যালেঞ্জ নিতে হবে বলে মনে করেন তিনি।

নির্বাচন কমিশন নিয়ে আইনের ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘অনেক বিষয়েই আইন করা দরকার। কমিশনারদের কী কী যোগ্যতা থাকবে সেটাও আইনে থাকা দরকারি। তিনি বলেন, ‘আমরা ধরে নিয়েছি সার্চ কমিটি যে নাম দেবে এর বাইরে বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর কাছে যাবে না। কিন্তু যদি যায় তাহলে কী হবে? এটাও একটি বিষয়।’

রোকন উদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘আমাদের সবার প্রত্যাশা হলো সার্চ কমিটির সবচেয়ে বড় সাকসেস হবে, তারা যে নাম প্রস্তাব করবে এর বাইরে কিছু হবে না।’ তিনি মনে করেন সবচেয়ে বড় বিষয় হলো কে সিইসি হবেন। তার নামের ওপর সবকিছু নির্ভর করে বলে মনে করেন প্রবীণ এই আইনজীবী।

নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের সরকার কোনো হস্তক্ষেপ করবে না এটা প্রত্যাশা করেন রোকন উদ্দিন মাহমুদ। সার্চ কমিটির প্রস্তাবের আলোকেই রাষ্ট্রপতি নতুন কমিশন গঠন করবেন বলেও আশা তার।

Check Also

ভোমরা বন্দরে চার মাসে ৪০০ কোটি টাকা আয়

দক্ষিণবঙ্গ সাতক্ষীরার আধুনিক নিরাপদ ও পরিবেশ বান্ধব বাণিজ্যিককেন্দ্র ভোমরা স্থল বন্দর। আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও দারিদ্র্য …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।