ক্রাইমবার্তা রিপোট:পরীক্ষা শুরুর দিনে বাংলা ১ম পত্র পরীক্ষা দেওয়ার কথা থাকলেও উত্তরপত্র লেখার সুযোগ আর পাননি সাগর। কেন্দ্রে প্রবেশের আগেই পুলিশ তাকে জোর করে থানায় নিয়ে যায়। আগে থেকেই পুলিশ কেন্দ্রের আশেপাশে ওঁত পেতে ছিল। এসময় ওই পরীক্ষার্থ কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে। এক পর্যায়ে সে পুলিশের হাতে পায়ে ধরে আকুতি জানাতে থাকেন পরীক্ষার পর যেন তাকে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু এতে পুলিশের মন গলেনি। শিক্ষকদের অনুনয় অনুরোধকে পাত্তা না দিয়েই পুলিশ তাকে একপ্রকার ছিনিয়ে নিয়ে যায়। এসময় কেন্দ্রে অন্যান্য পরীক্ষার্থীরা হতভম্ব হয়ে পড়ে এবং কিছুটা সময় হলেও তাদের পরীক্ষায় ব্যাঘাত ঘটে। আর পরীক্ষার হলের পরিবর্তে সাগরকে যেতে হয় থানায়। কেন্দ্রের বাইরে অনেক অভিভাবক বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন।
প্রতিবেশীর সঙ্গে জমি জমা নিয়ে বিবাদের জের ধরে প্রতিপক্ষ সাগর ইসলামসহ তার পরিবারের আরও কয়েকজনকে আসামী করে থানায় অভিযোগ করা হয়। অভিযোগ দায়েরের পর প্রতিপক্ষ আটকের ভয় দেখালে সাগর আত্মগোপন করে।
এলাকাবাসীরা অভিযোগ করেছে মোটা অংকের টাকা খরচ করে সাগরকে পরীক্ষার হল থেকে বের করে আনা হয়েছে।
এদিকে পরীক্ষা শুরুর পূর্বেও প্রবেশপত্র সংগ্রহ না করলে স্কুলের প্রধান শিক্ষক আবুল বাশার প্রবেশ নিয়ে হলের সামনে সাগরের জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন। গ্রেপ্তার আতঙ্কে থাকা সাগর শেষ মুহুর্তে প্রধান শিক্ষককে বলে পরীক্ষা দিতে গেলে ‘আটক হতে পারেন’ বলে নিজের শঙ্কার কথা জানালে প্রধান শিক্ষক তাকে নির্ভয়ে পরিক্ষার কেন্দ্রে আসতে বলেন।
প্রধান শিক্ষকের নির্দেশে নির্ভয়ে সাগর কেন্দ্রের সামনে সিএনজি অটোরিক্সা থেকে নামার পরপরই শাহরাস্তি থানার এসআই কামাল হোসেন তাকে আটকের পর চড় থাপ্পরসহ শারীরিক নির্যাতন করে থানায় নিয়ে যান।
বিষয়টি স্কুলের সভাপতি ইলিয়াস মিন্টুকে জানালে তিনি ইউএনও হাবিব উল্লাহ মারুফকে জানান। ইউএনও সাগরকে কেন্দ্রে আনার ব্যবস্থা করলেও ততক্ষণে দেরি হয়ে যাওয়ার অজুহাতে হল সচিব সাগরের পরীক্ষা নিতে অস্বীকৃতি জানান। পরে সাগরকে আবারও থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।
সাগর পরীক্ষায় অংশ নিতে না পারায় নিজের ব্যর্থতার জন্য ক্ষমা চেয়ে স্কুলের সভাপতি ইলিয়াস মিন্টু জানান, বিদ্যালয়ের সভাপতি হিসেবে আমি একজন ছাত্রের জন্য কিছুই করতে পারলাম না। আমার ব্যর্থতার জন্য আমাকে ক্ষমা করবেন। বাদির সাথে আঁতাত করে মোটা অংকের উৎকোচের বিনিময়ে এসআই কামাল হোসেন এই শিক্ষার্থীকে আটক করেছেন বলে জানা গেছে। এরকম পুলিশ সদস্যদের জন্য পুলিশের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। এ সময় তিনি পুলিশের ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি ভেবে দেখার অনুরোধ জানান।
এ ঘটনায় গত শুক্রবার সাংবাদিক সম্মেলন করেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। সেখানে বলা হয় বিষয়টির সুষ্ঠু তদন্ত করে পুনরায় পরীক্ষার দিতে হবে নাহলে উচ্চতর আদালতে যাবেন তারা।
চাঁদপুরের শাহরাস্তি উপজেলার দেবকরা মারগুবা ড. শহীদুল্লাহ মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগের একজন মেধাবী ছাত্র হিসেবে পরীক্ষায় অংশ নেন। সাগরের ক্লাস রোল ০৭ এবং এসএসসি’র রোল নাম্বার ১৭৫৯৪৯।