ক্রাইমবার্তা আন্তর্জাতিক ডেস্ক :যুক্তরাষ্ট্রে ৬ থেকে ৮ মিলিয়ন মানুষ অবৈধভাবে অন্যদেশ থেকে এসে দেশটিতে বাস করছে এবং বহিষ্কারের তালিকায় তারাই এগিয়ে আছে। ট্রাম্পের অভিবাসী নিষেধাজ্ঞার দিক নির্দেশনা যারা খতিয়ে দেখেছেন এমন সব বিেেশষজ্ঞ এধরনের মন্তব্য করে বলেছেন, এ সম্পর্কিত দলিলাদি পর্যবেক্ষণ করেও তাই মনে হচ্ছে। ট্রাম্প আগেও বলেছেন, সীমান্ত দিয়ে যারা অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকে পড়েছে তারাই বহিষ্কারের টার্গেটে পড়বেন। এখন বিশেষজ্ঞরা বলছেন গত এক দশকে সাতটি মুসলিম দেশ থেকে দশলাখ মানুষ যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকে পড়েছে। ওই সাতটি দেশের বিরুদ্ধে প্রথম অভিবাসী নিষেধাজ্ঞা জারি করেন ট্রাম্প এক নির্বাহি আদেশে। দেশগুলো হচ্ছে, ইরান, ইরাক, সোমালিয়া, লিবিয়া, সিরিয়া, ইয়েমেন ও সুদান।
তবে এধরনের অভিবাসীর ওপর নির্ভর করে যুক্তরাষ্ট্রের যেসব শিল্প, কৃষি, ব্যবসা, বাণিজ্য ও প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে সেসব খাতে শ্রমসংকট দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। জাল সনাক্তকরণ নম্বর দিয়ে যে সব অভিবাসী যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে বাস করছে তারা ছাড়াও বিশেষ করে ল্যাটিন আমেরিকার দেশগুলোর সঙ্গে এধরনের অভিবাসী বহিষ্কার শুরু হলে যুক্তরাষ্ট্রের টানাপোড়েন শুরু হতে পারে। এমনকি সামাজিক নিরাপত্তা বিঘিœত হতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে।
এর আগে ওবামা প্রশাসনের সময় অন্তত ১৪ লাখ অভিবাসী অবৈধভাবে বসবাস করছে বলে তাদের অপসারণের জন্যে চিহ্নিত করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসী আইনজীবী এ্যাসোসিয়েশনের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডেভিড লিওপোল্ড বলেছেন, আমরা ফের বিশৃঙ্খলার মধ্যে ফিরে যাচ্ছি।
অভিবাসী নিষেধাজ্ঞায় যে নির্বাহী আদেশ দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে শুধু অপরাধীদের ধরতে বলা হয়েছে তা নয়, একই সঙ্গে সন্দেহভাজনদেরও আটক করতে বলা হয়েছে। অভিবাসীদের কোনো কার্যকলাপ ফৌজদারি অপরাধ মনে হলেও তাকে আটক করার কথাও বলেছেন ট্রাম্প।
পিউ রিসার্চ সেন্টারের এক জরিপ অনুয়ায়ী ৬০ লাখ অভিবাসী যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকে পড়েছে অবৈধভাবে। বাকি ১১ লাখেরও বেশি অভিবাসী যুক্তরাষ্ট্রে বাস করছে বৈধ কোনো কাগজপত্র ছাড়াই। এদের কারো ভিসার মেয়াদ ফুরিয়ে গেলেও তা নবায়ন করা হয়নি। কারো কোনো কাগজপত্র নেই। কেউ গ্রিনকার্ডের জন্যে অপেক্ষা করছেন বছরের পর বছর।
পিউ রিসার্চ সেন্টারের জরিপে আরো দেখা গেছে ১১ লাখ অভিবাসীর মধ্যে ৮ লাখ যুক্তরাষ্ট্রে কোনো না কোনো কাজের সঙ্গে জড়িত। ফেডারেল এমপ্লয়মেন্ট ফর্ম অনুসারে বৈধ কাগজপত্র না থাকার পরও তারা কাজ করেও যুক্তরাষ্ট্রের আইন ভঙ্গ করছেন। ফেডারেল এমপ্লয়মেন্ট ফর্মে কেউ কোনো অসত্য তথ্য দিয়ে থাকলে তাও খতিয়ে দেখার নির্দেশ দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। এ নির্দেশনায় যারা বিভিন্ন ধরনের অপরাধ ছাড়াও বিনা লাইসেন্সে গাড়ি চালনা বা খাদ্য সহায়তা নিচ্ছে তাদেরও চিহ্নিত করার কথা বলা হয়েছে এবং এধরনের অভিবাসীর সংখ্যা কত হবে তা বলা মুস্কিল।
সাতটি মুসলিম দেশের অভিবাসী নিষেধাজ্ঞায় নির্বাহী আদেশের পরপরই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অভিবাসী দেখভাল করেন এমন কর্মকর্তা ও সীমান্ত প্রহরায় নিযুক্ত প্রতিনিধিদের বলেছেন, দীর্ঘদিন ধরেই তারা তাদের কাজ যথাযথভাবে পালন করে আসতে পারছেন না। ঠিক কত সংখ্যক অভিবাসীকে যুক্তরাষ্ট্র ছেড়ে চলে যেতে হবে তা নিরুপন করতে আরো বেশ কয়েকমাস সময় লাগবে বলেও বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।
ট্রাম্প ইতিমধ্যে পরিস্কারভাবে বলে দিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের শাসনভার হাতে নেওয়ার এক বছরের মধ্যে অবৈধ অভিবাসীদের ৭৫ ভাগ অপসারণ করতে হবে। সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার ৪ লাখ অভিবাসীকে তাদের দেশে ফেরত পাঠানো হয়। ওহাইও, ক্লেভল্যান্ড, চার্ডন এলাকার অভিবাসী আইনজীবী এলিজাবেথ ফোর্ড বলেন, অভিযোগ রয়েছে কিন্তু অভিযুক্ত হননি এমন অভিবাসীকেও আটক শুরু হয়েছে। এমনকি এদের কারো কারো বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ পরবর্তীতের প্রত্যাহার করে নেয়া হয়। আগে কেবল অভিযুক্ত অভিবাসীকেই আটক করা হত। আগামী কয়েকমাসের মধ্যে এ পরিস্থিতির আরো অবনতি হবে এবং তা হয়ে উঠবে আগ্রাসী। এমএসএন