ক্রাইমবার্তা রিপোট:নতুন নির্বাচন কমিশনকে স্বাগত জানিয়ে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বলেছেন, আমরা এই ইসির অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। নতুন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা কথা দিয়েছেন সুষ্ঠু নির্বাচন করবেন। তিনি বলেন, জাতীয় পার্টি এমন একটি শক্তি যা দেশে প্রকৃত শান্তি ফিরিয়ে আনতে পারে। তাই জাতীয় পার্টিকে জনগণ আবার ক্ষমতায় দেখতে চায়। জাতীয় পার্টির নাম ইতিহাসে লিপিবদ্ধ দেখতে চাই। ‘৯১ সাল থেকে প্রতিটি নির্বাচন কমিশনই তার দলের প্রতি অন্যায় করেছে। আশা করি নতুন সিইসি সেটা করবেন না। গাইবান্ধার আসন্ন উপ-নির্বাচনে ইসি নিরপেক্ষতার পরিচয় দিতে না পারলে জাতি তাদের ক্ষমা করবে না।
বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর কাকরাইলের ইঞ্জিনিয়ার্স ইনিস্টিউট মিলনায়তনে দলের যৌথসভায় জেলা ও উপজেলা নেতাদের উদ্দেশ্যে তিনি এসব কথা বলেন। সভায় দলের সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ, কো-চেয়ারম্যান জি এম কাদের, দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য সাইদুর রহমান টেপা, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এমপি, এসএম ফয়সল চিশতি, তাজ রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান আরিফুর রহমান খান, দিদারুল আলম দিদার, উপদেস্টা শামীম হায়দার পাটোয়ারি, যুগ্ম মহাসচিব ইয়াহিয়া চৌধুরী এমপি, আমির হোসেন ভ’ইয়া এমপি, ফখরুল আহসান শাহাজাদা, ইসহাক ভ’ইয়া, মহিলা পার্টির অন্যন্যা হোসাইন মৌসুমী, সৈয়দ ইফতেখার আহসান প্রমুখ বক্তৃতা করেন।
এরশাদ বলেন, নতুন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা নাকি জাতীয় পার্টির প্রস্তাবনা থেকে এসেছে। পত্রিকায় খবর প্রকাশিত হয়েছে- আমি জানি না। তবে খুশি হয়েছি, আমাদের নামের প্রস্তাবনা থেকে সিইসি হয়েছে। আসন্ন গাইবান্ধার উপ-নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নবগঠিত নির্বাচন কমিশনের এটাই প্রথম নির্বাচন। এ নির্বাচনে যদি ইসি নিরপেক্ষতার পরিচয় দিতে না পারেন তাহলে জাতি তাদের ক্ষমা করবে না।
এরশাদ আক্ষেপ করে বলেন, কোনো নির্বাচন কমিশনই আমার সাথে সুবিচার করেননি। ১৯৯১ ও ৯৬ সালে জেলে থেকে নির্বাচন করেছি। ২০০১ সালে আমাকে নির্বাচন করতে দেয়া হয়নি। অথচ আওয়ামী লীগ আমাদের সমর্থনেই ক্ষমতায় এসেছিলো। আমাদের কোনো বন্ধু নেই উল্লেখ করে সাবেক এই রাষ্ট্রপতি বলেন, জাতীয় পার্টি যেন ক্ষমতায় আসতে না পারে এবং শক্তিশালি হতে না পারে সেজন্য আওয়ামী লীগ-বিএনপি এক। তাই আমাদের আরো শক্তিশালি হতে হবে। তিনি বলেন, আমরা ২৬ বছর ক্ষমতার বাইরে। সেনাপ্রধান ছিলাম, রাজনীতিবিদ হয়েছি। কিন্তু এ পথ খুব পিচ্ছিল। বহু ঘাত-প্রতিঘাত অবিচার সহ্য করে আমরা আজও টিকে আছি। জাতীয় পার্টি আগের যেকোন সময়ের চেয়ে এখন অনেক বেশি শক্তিশালি। আমরা সারাদেশে প্রার্থী বাছাই কাজ ইতিমধ্যে শুরু করেছি। তিনি জেলা নেতাদের আগামী ১৫ দিনের মধ্যে যারা জাতীয় নির্বাচন করবে তাদের তালিকা দেয়ার আহবান জানান।
নির্বাচনকে যুদ্ধক্ষেত্র হিসেবে উল্লেখ করে সাবেক এই সামরিক শাসক বলেন, এখানে সেনাপতি লাগে, সৈনিক লাগে। আগামী নির্বাচনের জন্য আমি সেনাপতির দায়িত্ব পালন করব। প্রত্যেক জেলা কমিটির সভাপতির কাছে আমার নির্দেশ থাকবে, আগামী নির্বাচন যারা করতে চান তাদের লিস্ট পাঠান। নির্বাচনে জেতার জন্য সৈনিক চাই, সেনাপতি চাই। আর সময়ক্ষেপণ করা যাবে না। সর্বশক্তি নিয়ে মাঠে নামতে হবে। তবে নেতাকর্মীদের উদ্দেশে এরশাদ বলেন, জাতীয় পার্টির কোনো বন্ধু নেই। আমরাই আমাদের বন্ধু। দুর্বলের সাথে কেউ হাত মেলাতে আসে না। জাতীয় পার্টিকে শক্তিশালী দেখতে চাই। জাতীয় পার্টিকে ইতিহাসের পাতায় দেখতে চাই। আমরা একনো মরে যাইনি, নিঃশেষ হয়ে যাইনি।
নেতাকর্মীদের মনোভাব দেখে মনোনয়ন দেয়ার দাবি রওশনের
আগামী সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন দেয়ার ক্ষেত্রে স্থানীয় নেতাকর্মীদের মনোভাব বিবেচনায় রাখার তাগিদ দিয়ে পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ও সংসদে বিরোধী দলের নেতা রওশন এরশাদ বলেন, এলাকাভিত্তিক নেতাকর্মীর মনোভাব বুঝে মনোনয়ন দিতে হবে। চিন্তা-ভাবনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে এবং সেই সিদ্ধান্তে অটল থাকতে হবে। আগামী নির্বাচনে আমাদের কোনো রকম ভ’ল করা চলবে না। সিদ্ধান্ত নিয়ে তা পাল্টানো যাবে না।
রওশন এরশাদের এই বক্তব্য চলাকালে ছাত্র সমাজ ও যুব সংহতি হট্টগোল করে। এ সময় রওশন বলেন, ছাত্র সমাজ ও যুব সংহতি তোমাদের যা কথা আছে আমি শুনব। এভাবে বিশৃঙ্খলা করলে দল ক্ষতিগ্রস্ত হবে। পরে রওশন বলেন, এ যাবত চারটি নির্বাচন করেছে জাতীয় পার্টি, তার তিনটি আমি করেছি। অনেক ঝুঁকি নিয়ে, সন্ত্রাসী-বোমাবাজি উপেক্ষা করে জীবন বাজি রেখে কাজ করেছি। তোমরা যদি আমার সাথে থাকো, তাহলে পার্টিকে অনেক দূর নিয়ে যেতে পারব।
জিএম কাদের বলেন, জাতীয় পার্টি সাম্প্রদায়িকও না অসাম্প্রদায়িকও না। আমরা মধ্যপন্থী। আওয়ামী লীগ নিজেকে অসাস্প্রদায়িক দাবি করে। অথচ তারা ক্ষমতাসীন হয়েও রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বাতিল করতে পারেনি।
পার্টির চেযারম্যান এরশাদের মামলা প্রত্যাহার করা না হলে আন্দোলনের মাধ্যমে ঢাকা অচল করে দেওয়ার হুমকি দিয়ে সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা বলেন, খালেদা জিয়ার মামলা প্রত্যাহারের জন্য রাস্তায় ভাংচুর করেছে। দলের সাধারণ নেতাকর্মীদের র্ধৈয্যের বাধ ভেঙ্গে গেলে জাতীয় পার্টির ঢাকাবাসীকে সঙ্গে নিয়ে এরশাদের মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে রাজপথে নামবে। প্রয়োজনে কঠোর কর্মসূচীর মাধ্যমে ঢাকা অচল করে দিয়ে হলেও পল্লীবন্ধু এরশাদের মামলা প্রত্যাহার করতে সরকারকে বাধ্য করা হবে।