মিথিলার সুইসাইড নোটে যা আছে

ক্রাইমবার্তা রিপোট:‘আমার মৃত্যুর জন্য উৎপলের পরিবার দায়ী। স্বামীকে অনেক ভালোবাসি, কিন্তু সাত বছরের সম্পর্কে বিয়ের পর স্বামী বদলে গেছেন’- সুইসাইড নোটে এভাবেই অভিযোগ করেছেন ঢাকাই ছবির আইটেম কন্যা জ্যাকলিন মিথিলা।16

সুইসাইড নোটে মিথিলা লেখেন, রুপা বউদি আমাকে ফোন করে বলেছে যত টাকা লাগে আমাকে দিবে, তার বিনিময়ে তোমাকে ছেড়ে দিতে। উনি আমাকে রাস্তার মেয়ে ভেবেছে। এর চেয়ে বড় অপমান একটা মেয়ের পক্ষে কী হতে পারে? পংকজ নামের লোকটা আমার বাবাকে বলেছে, এ মেয়ে বেঁচে থাকার থেকে মরে যাওয়া ভাল। তোমাকে যখন আমি বলেছি এই সপ্তাহে তুমি যদি দেখা না করো, তাহলে আমি আত্মহত্যা করব। তুমি বলেছো তোমার যা মন চায় করতে। তাই তো আমি তোমাকে মুক্তি দিলাম।

গত ৩ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে ৯টায় চট্টগ্রামের বাড়িতে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেন এই আইটেম কন্যা। তবে আত্মহত্যার আগে গত ২০ জানুয়ারি মিথিলা চট্টগ্রামের বাসায় যান। সেখানে ইস্পাহানি মোড়ের কালী বাড়ি রোডের রঞ্জিত ভবনে মা-বাবাকে ১১ হাজার টাকায় একটি ফ্ল্যাট ভাড়া করে দিয়েছিলেন।

জানা গেছে, রাজধানীর বনশ্রীতে তিন রুমের একটি ফ্ল্যাটের এক রুমে সাবলেট থাকতেন জ্যাকলিন মিথিলা।

মিথিলার মা তাপসী শীল বলেন, উৎপল হচ্ছে আমার খালাতো বোনের দূর সম্পর্কের দেবর। মিথিলা তখন এইট-নাইনে পড়ে। এক আত্মীয়ের বিয়েতে তার সঙ্গে আমার মেয়ের পরিচয় হয়। ওই বিয়ে অনুষ্ঠানের পর থেকে একদিন মেয়ের কাছে শোনেন তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক হয়েছে। একমাত্র সন্তান হওয়ায় তিনি তা মেনেও নেন।

তিনি বলেন, কিছুদিন আগে উৎপলের মায়ের হার্টের অপারেশন হয় ভারতে। এজন্য মিথিলা পাঁচ লাখ টাকা দিয়েছিল তাকে।

মিথিলার বিয়ে নিয়ে তার বাবা স্বপন শীল জানান, গত ৩ নভেম্বর মিথিলা ও উৎপল কোর্ট ম্যারেজ করে। প্রথমে মিথিলার মা তাকে বিষয়টি জানতে দেয়নি। পরে মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে মেনে নেন তারা।

তিনি জানান, বিয়ের পর থেকে মিথিলাকে মেনে নেয়নি উৎপলের পরিবার। তবে তাকে যাতে তার শ্বশুরবাড়ির লোকজন মেনে নেয় সেজন্য ছেলের পরিবারকে দাওয়াত করে খাইয়েছিলেন। তিনি বলছিলেন, আমি গরিব মানুষ। তারপরও প্রায় ১০-১২ হাজার টাকা খরচ করে তাদের পরিবারের মানুষকে দাওয়াত করে খাইয়েছিলাম। তারা সেখানে আমাকে অপমান করে চলে যায়। এটা ২০ নভেম্বর ২০১৬ সালের ঘটনা।

স্বপন শীল জানালেন, বিয়ের কিছুদিন পর তার মেয়ে গর্ভধারণ করেন। কিন্তু ‘গর্ভবতী থাকলে কীভাবে উঠিয়ে নিব? অনুষ্ঠানইবা কীভাবে করব, লোকে কী বলবে।— স্বামীর এমন প্ররোচণায় গর্ভপাত করান মিথিলা।

জ্যাকলিন মিথিলার মিডিয়ায় কাজ করা নিয়ে তার শ্বশুরবাড়ি থেকে সমস্যা করেনি। সমস্যা ছিল পারিবারিক মর্যাদা নিয়ে। তার শাশুড়ি মিনাক্ষী মহাজন একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা। আর মিথিলার বাবা ছিলেন পেশায় একজন নাপিত। এ নিয়ে স্বামীর বাড়ীর লোকজন তাকে কথাও শোনাত।

ছেলের বড় ভাইয়ের বউ রূপা তাকে বলেছিলেন, কত টাকা লাগবে বল, আমার দেবরের জীবন থেকে সরে দাঁড়াও। জবাবে মিথিলা বলেছিল, আমি কি রাস্তার মেয়ে আমাকে টাকা দিয়ে কিনতে চান?— বলছিলেন স্বপন শীল।

মা তাপসী শীল বলছিলেন, যেদিন মারা গিয়েছিল সেদিন ও সকাল সাতটায় ঘুম থেকে উঠে, সাধারণত আরো দেরি করে উঠত। আমাকে দিয়ে চালের রুটি বানায়। সবজি দিয়ে খায়। এমনকি চা-ও খায়, কিন্তু সে কখনো চা খেতো না। এরপর দেখি সে মুখে ক্রীম লাগাচ্ছে। আমি ভেবেছিলাম যেহেতু বৃহস্পতিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) তাহলে হয়ত স্বামীর সঙ্গে দেখা করবে। কারণ বিয়ের পর সাধারণত তারা ওইদিন বেশি দেখা করত। কিন্তু কয়েক ঘন্টা হয়ে যাওয়ার পরও সে দরজা খুলে না দেখে আমি ধাক্কাধাক্কি করি। পরে দরজার ফাঁক দিয়ে দেখি তার পা ঝুলছে। আমি ওর বাবাকে খবর দিই।

তার বাবা জানালেন, তিনি এসে বাড়ির মালিককে খবর দিলে তিনি পুলিশকে খবর দিতে বলেন। পরে বন্দর থানার পুলিশ এসে লাশ নামায়।

মেয়ে মিডিয়াতে কাজ করে এটা তারা প্রথমে জানতেন না। অনেকদিন পরে জেনেছিলেন। একমাত্র মেয়ে দেখে বাধা দিতে পারেননি। উৎপলের কারণে মেয়ে গত আট মাস ধরে মিডিয়াতে কোন কাজ করেনি, জানালেন মিথিলার মা।

এ ঘটনায় মিথিলার বাবা বাদী হয়ে শ্বশুরবাড়ীর আটজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। এরা হলেন— ১। উৎপল রায় (স্বামী) ২। মিনাক্ষী মহাজন (শাশুড়ী) ৩। কাজল ৪। সম্ভু ৫। রূপা ৬। পংকজ ৭। বাদল ও ৮। দিপক।

মিথিলা চট্টগ্রামের শ্যামলী আইডিয়াল থেকে এসএসসিতে ৪.৮৯ পান। রাজধানী খিলগাঁও মডেল কলেজ থেকে এবার এইচএসসি দেওয়ার কথা ছিল। প্রথমে সিদ্ধেশ্বরী গার্লস কলেজে ভর্তি হয়েছিলেন। কিন্তু নিয়মিত ক্লাশ করতে সমস্যা হওয়ায় খিলগাঁও মডেলে চলে যান।

Check Also

সাতক্ষীরা বিনেরপোতা সড়ক দুর্ঘটনায় ১ ভ্যান চালক নিহত

মামুন হোসেন নিজস্ব প্রতিনিধি, সাতক্ষীরা বিনেরপোতা সড়ক দুর্ঘটনায় ১ ভ্যান চালক নিহত হয়েছে। বৃহস্পতিবার ( …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।