ক্রাইমবার্তা রিপোট:সাবেক রাষ্ট্রপতি ও বিকল্পধারা বাংলাদেশের সভাপতি ডা. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী বলেছেন, দল নিরপেক্ষ সরকার না থাকলে নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন দিয়ে কিছুই হবে না। এজন্য তিনি বেগম খালেদা জিয়ার সাথে আবারো আলোচনায় বসার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে উদ্যোগ নেয়ার আহবান জানিয়েছেন।
আজ শুক্রবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে কবি আবদুল হাই শিকদারের রচনা ও সম্পাদনা গ্রন্থ ‘বাংলাদেশের অলি আহাদ’-এর প্রকাশনা উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ড. আনোয়ারুল্লাহ চৌধুরীর সভাপতিত্বে সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, ভাষা সৈনিক অধ্যাপক আবদুল গফুর, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ও কলামিস্ট ড. মাহবুব উল্লাহ, ঢাবির সাবেক প্রো-ভিসি অধ্যাপক ড. আ ফ ম ইউসুফ হায়দার, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম প্রধান, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমদ, ‘বাংলাদেশের অলি আহাদ’ বইয়ের প্রকাশক অ্যাডর্ন পাবলিকেশনের স্বত্ত্বাধিকারী সৈয়দ জাকির হোসাইন প্রমুখ।
স্বাগত বক্তব্য রাখেন, কবি আবদুল হাই শিকদার।
সভা সঞ্চালনা করেন, জাহাঙ্গীর আলম মিন্টু।
বি. চৌধুরী বলেন, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে শেখ হাসিনা আলোচনার প্রস্তাব দিলে খালেদা জিয়া প্রত্যাখান করে ভুল করেছিলেন। হয়তো তিনি কোনো দলের প্রচারণায় এ কাজটি করেছিলেন। যারা তাকে বলেছিলো আমাদের অনেক লোক আছে, আমরা অনেক কিছু করে দেব।
তিনি খালেদা জিয়ার উদ্দেশে বলেন, জনগন এখনো জিয়াউর রহমানের ধানের শীষ মনে রেখেছে এটা একটি বিরাট ব্যাপার। কিন্তু জনগণ আপনাদের পাশে আছে ভেবে বেশি বাড়াবাড়ি করা ভালো না। যেকোনো সময় তারা মুখ ফিরিয়েও নিতে পারে, কারণ দেশের জনগণের স্মৃতিশক্তি অত ভালো নয়।
সাবেক রাষ্ট্রপতি বলেন, প্রধানমন্ত্রী আপনি বঙ্গবন্ধু কন্যা হিসেবে আবারো মহাত্ম্য প্রকাশ করুন। নির্বাচনের জন্য একটি দল নিরপেক্ষ সরকার গঠনের জন্য খালেদা জিয়াকে আবার আলোচনায় বসার আহবান জানান। দল নিরপেক্ষ সরকার হলেই তখন বোঝা যাবে হুদা না অন্য কমিশন। সামনে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচন দিয়ে ইসির অবস্থান বোঝা যাবে বলেও মন্তব্য করেন বিকল্পধারার সভাপতি।
বি. চৌধুরী বলেন, দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি ধীরে ধীরে অনেক নিচে নেমে যাচ্ছে। দেশের মানুষ এখনো নিশ্চিন্তে রাস্তায় নামতে ভয় পায়। কে কোথায় কখন হারিয়ে যায় তার কোনো ঠিক নেই। সন্তানরা বিপদমুক্ত নয়। স্বাধীন দেশে মানুষ স্বাধীনভাবে চলতে পারে না। এজন্য সরকার-বিরোধীদল সবাই দায়ী। তবে এ অবস্থা থেকে উত্তরণে সরকারকেই ভূমিকা রাখতে হবে।
ভাষা সৈনিক অলি আহাদ একজন মহান নেতা ছিলেন মন্তব্য করে তিনি বলেন, আমাদের অলি আহাদের মতো একটি নতুন প্রজন্ম গড়ে তুলতে হবে। দেশের রাজনৈতিক সম্প্রীতির সংস্কৃতিকে আবার ফিরিয়ে আনতে হবে।
আনোয়ারুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘বাংলাদেশের অলি আহাদ’ বইয়ে দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির একটি সুন্দর রূপ ফুটে উঠেছে। যা পড়লে রাজনৈতিক নেতা-কর্মীরা অনেক উপকৃত হবেন।
অলি আহাদ আজীবন মাতৃভূমির জন্য কাজ করেছেন মন্তব্য করে তিনি বলেন, ১৪৪ ধারা ভঙ্গের মাধ্যমে তিনিই প্রথম ভাষা আন্দোলনের সূচনা করেছিলেন। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তিনি এ বিপ্লবী চেতনা ধারণ করেন।
আবদুল গফুর বলেন, জাতির মুক্তির জন্য যখনই আন্দোলন প্রয়োজন হয়েছে তিনি অগ্রণী সেনা ছিলেন। পাকিস্তান আন্দোলন থেকে শুরু করে ভাষা আন্দোলন, স্বাধীনতা আন্দোলনে তিনি ভূমিকা রেখেছেন। স্বাধীনতার পর দেশে যখন আধিপাত্যবাদ মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে তখনও তিনি আজাদ বাংলাদেশ আন্দোলন গড়ে তোলেন।
জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, দেশের বর্তমান যুগ সন্ধিক্ষণে অলি আহাদের মত সাহসী মানুষ দরকার। কেউ যদি মনে করে ঘরে বসে থেকে পরিবর্তন আসবে তা হবে না।
তিনি খালেদা জিয়ার উদ্দেশে বলেন, আপনার সেই সাহস এখন কোথায়? নিজের কারণে না প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক কুটকৌশলের কারণে ক্রমেই সাহস হারিয়ে ফেলছেন? আপনাকে রাস্তায় নামতে হবে। প্রয়োজনে আরো ১০ হাজার লোক জেলে যাবে। তারপরও নামতে হবে। আর কতদিন ঘরে থাকবেন। জনগণ এখনো বিএনপিকে ফেলে দেয়নি। ঘর থেকে বের হন। মাঠে নামার জন্য কেউ সুযোগ করে দেয় না, সুযোগ করে নিতে হয়।
বর্তমান নির্বাচন কমিশনকে মন্দের ভালো মন্তব্য করে তিনি বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন নুরুল হুদার উপর নির্ভর করে না। এজন্য সরকারের স্বদিচ্ছা ও সৎ সাহস প্রয়োজন।
নির্বাচন কমিশনের জন্য যত নাম এসেছিল তা সরকারিভাবে প্রকাশ করা উচিত ছিল মন্তব্য করে তিনি বলেন, তাহলে দেশের বিশিষ্টজনরা তাদের ভালোমন্দ নিয়ে মন্তব্য করতে পারতো।
ডা. জাফরুল্লাহ বিএনপিকে আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে এখন থেকেই জাতির সামনে একটি রূপরেখা তুলে ধরার আহবান জানান।
ড. মাহবুব উল্লাহ বলেন, অলি আহাদ কখনো ক্ষমতার রাজনীতি করেননি। তাকে অনেকে চির বিদ্রোহী রাজনীতিক বলে থাকেন।
বইটির রচয়িতা কবি আবদুল হাই শিকদার বলেন, দেশে বর্তমানে অনেক রাজনৈতিক নেতা আছেন, কিন্তু অলি আহাদের মতো আদর্শিক নেতা নেই। এ বইটি পড়লে বর্তমান প্রজন্ম একটি সঠিক রাজনৈতিক চরিত্র সম্পর্কে ধারণা লাভ করতে পারবেন।