ক্রাইমবার্তা রিপোট:ঘরে-বাইরে সমানতালে নারীকে এখন পথ চলতে হয়। পুুরুষের মতো নারীরা কি পারেন নির্বিঘেœ পথ চলতে? ঘরের বাইরে পা দিলেই নারীদের নানা ধরনের বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়। নিরাপত্তাহীনতায় থাকতে হয় পথজুড়েই। জানাচ্ছেনÑ রওনক বিথী
সামিয়া রহমানকে (ছদ্মনাম) ৯টা-৫টা অফিস করতে হয়। বাসা থেকে বের হয়ে বেশ খানিকটা হেঁটে তাকে প্রতিদিন বাস ধরতে হয়। ধাক্কাধাক্কি করে বাসে উঠতেই যেন তিনি কান্ত হয়ে পড়েন। তার ওপর অধিকাংশ দিনই সিট পাওয়া যায় না। স্বস্তিতে দাঁড়নোও যায় না। পুরুষ যাত্রীদের জায়গা না হওয়ার অজুহাতে গায়ের সঙ্গে ধাক্কা লাগানো, স্পর্শ করা, অশোভন অঙ্গভঙ্গি করা, হেলপারের অহেতুক টেনে তোলা-নামানোর অজুহাতে গায়ে হাত দেওয়া ইত্যাদি সবকিছু হজম করে বাস থেকে নেমেও তিনি নির্বিঘেœ পথ চলতে পারেন না। অফিস পর্যন্ত হেঁটে যাওয়ার রাস্তাটুকুতে প্রতিদিনই তাকে অহেতুক ধাক্কা, ভিড়ের মাঝে গায়ে হাত দেওয়া কিংবা অশালীন মন্তব্য সহ্য করতে হয়।
২০১৬ সালে পপুলেশন সার্ভিস অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টার, অ্যাকশনএইড ও ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্টের সম্মিলিত উদ্যোগে ‘গণপরিবহনে নারীর নিরাপদ ও স্বাচ্ছন্দ্যে যাতায়াত নিশ্চিত করতে করণীয়’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় বক্তাদের তথ্যে উঠে আসে বর্তমানে রাজধানী শহরে বসবাসকারী নারীর মধ্যে ২০ দশমিক ৭ শতাংশ নারী পাবলিক বাসে যাতায়াত করেন। তাদের মধ্যে ৪১ শতাংশই যৌন হয়রানির শিকার হয়ে থাকেন এবং ১৩ শতাংশ নারী যৌন হয়রানির ভয়ে পাবলিক বাস এড়িয়ে চলেন। ২০১৪ সালে অকশনএইডের আরেকটি জরিপে দেখা ৪৭ দশমিক ৫ শতাংশ নারী গণপরিবহন, রাস্তা ও উন্মুক্ত স্থানে চলাফেরা করতে নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন এবং ৬৪ শতাংশ নারী রাতে ঘরের বাইরে যেতে চান না। ২০১৬ সালে ময়মনসিংহের একটি বাসে তরুণী ধর্ষণসহ বাসে নারী ধর্ষণের বেশ কিছু ঘটনা আমরা এরই মধ্যে ঘটতে দেখেছি।
ছাত্রী ও চাকরিজীবী নারীদের কোচিং, টিউশনি, যানজটসহ নানা কারণে বাসায় ফিরতে অনেক সময় রাত হয়ে যায়। আবার অনেক নারীই এখন পড়াশোনার পাশাপাশি বিকাল থেকে পার্টটাইম চাকরি করেন। এ ধরনের পার্টটাইম চাকরির শিফট শেষ হতে হতে রাত ৯-১০টা বেজে যায়। অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানে যাতায়াতের জন্য কোনো গাড়ি থাকে না। ফলে নারীদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পথ চলতে হয়। আর তনুদের মতো অসংখ্যা নারীকে জীবন দিতে হয়। নারীদের প্রায়ই আমরা ফুটওভার ব্রিজ দিয়ে পার না হয়ে রাস্তা পারাপার হতে দেখি। কিন্তু আমাদের ফুটওভার ব্রিজগুলো নারীদের জন্য কতটু নিরাপদ? ছিনতাইকারী, নেশাগ্রস্ত আর উত্ত্যক্তকারীদের দখলে এগুলো। ফলে দিনেই যেখানে ফুটওভার ব্রিজগুলো নিরাপদ নয়, সেখানে রাতে তো তা হয়ে ওঠে অপরাধীদের আশ্রয়কেন্দ্র। আর যাত্রী ছাউনিগুলোয় তো বিড়ম্বনায় পড়তে হয় প্রায় সব বয়সী নারীদেরই।
ছিনতাইয়ের সমস্যাও তো কম নয়। ২০১৫ সালে কক্সবাজার থেকে ফিরে বাস থেকে নেমে রিকশায় যাওয়ার পথে ছিনতাইকারীর কবলে পড়ে প্রাণ দিলেন যে মেয়েটি তার কথা এখনো হয়তো আমাদের অনেকের মনে আছে। এ রকম অসংখ্য ঘটনাই ঘটে নারীদের দৈনন্দিন পথ চলায়।
এতটা অনিরাপদ যদি হয় নারীদের পথচলা, তাহলে আতঙ্কিত না হয়ে কী করবে নারীরা? প্রতিদিনই এ ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হওয়ায় নারীরা মন মানসিক চাপে থাকেন।
‘বিশ্ব যেখানে উন্নয়নের পথে এগোচ্ছে, সেখানে আমাদের দেশের সম্ভাবনাময় নারীরা অনেকটা পিছিয়ে আছেন শুধু যাত্রাপথে নিরাপত্তাহীনতার কারণে। যাতায়াতের দুর্ভোগ কমে এলে কর্মজীবী নারীর সংখ্যা বাড়বে’Ñ এমনটাই মনে করেন নারী প্রগতি সংঘের নির্বাহী পরিচালক রোকেয়া কবির।