ক্রাইমবার্তা রিপোট:পদ্মাসেতু নির্মাণ প্রকল্পে দুর্নীতির মিথ্যা অভিযোগের কারণে যারা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন তাদেরকে বিশ্ব ব্যাংকের বিরুদ্ধে মামলা করার পরামর্শ দিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
তিনি বলেন, কানাডার আদালত পদ্মাসেতু নির্মাণ প্রকল্পে দুর্নীতির মামলায় যে রায় দিয়েছেন তাতে প্রমাণিত হয় এতে কোনো দুর্নীতি হয়নি। কিন্তু দুর্নীতির অভিযোগ তুলে আমাদের মর্যাদা হানি করার যে চেষ্টা হয়েছিল সেই চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে।
আজ রোববার রাজধানীর মিরপুরে মার্কস মেডিক্যাল কলেজের এমবিবিএস ও বিডিএস প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের নবীনবরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
আইনমন্ত্রী বলেন, আমরা মর্যাদার সাথে বেঁচে আছি। ওই মামলা তদন্তের জন্য যে ওকাম্পো সাহেব দায়িত্ব নিতে চেয়েছিলেন তার বিরুদ্ধে ইউরোপীয় আদালতে দুর্নীতির মামলা হয়েছে। দুর্নীতি করেন ওনারা আর তার খেসারত দিতে হয় আমাদের।
বিশ্ব ব্যাংকের দুর্নীতির অভিযোগের কারণে বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে কি-না সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে আনিসুল হক বলেন, ‘প্রথম কথা হচ্ছে বাংলায় একটা কথা আছে সাপে বর হয়। বিশ্ব ব্যাংকের কারণে আমরা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছি কি-না আমি জানি না। আমার মনে হয় আমরা ক্ষতিগ্রস্থ হই নাই। আমরা আজ শেখ হাসিনার দৃঢ়তার কারণে নিজ খরচে পদ্মা সেতু নির্মাণ করতে পারছি। এটা কিন্তু একটি মর্যাদার বিষয়। আর যদি আমাদেরকে সেদিন ঋণটা দিতো আমরা হয়তো চেষ্টা করে এই সেতু করতাম না। সেই কারণে আমি বলবো তারা যে অর্থ দেয় নাই এতে আমাদের দুটি লাভ হয়েছে। আমাদের সুদ গুণতে হবে না, আর আমরা যে নিজেদের অর্থে এতবড় একটা কাজ করতে পারি সেটা আমরা দেখাতে পেরেছি। এটা বিশ্বে আমাদের মর্যাদার বিষয়। আর বিশ্বব্যাংক কাগজপত্রের ভিত্তিতে যে কিছু করে না তা প্রমাণিত হয়েছে। তারা দু-তিনজন ব্যক্তির স্বার্থের কারণে একটা নির্দোষ দেশকে দোষী করার চেষ্টা করেছে। এটা দুঃখজনক।’
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অধঃস্তন আদালতের বিচারকদের শৃঙ্খলা ও আচরণ বিধিমালার খসড়া গেজেটে প্রকাশ করার প্রয়োজন নেই মর্মে রাষ্ট্রপতি ইতোপূর্বে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। খসড়াটির যেখানে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার অসামঞ্জস্যতা দেখা দিয়েছে সেগুলো পরিবর্তন ও পরিবর্ধন করার ব্যাপারে প্রধান বিচারপতির সাথে আলোচনা হয়েছে এবং তা পরিবর্তন ও পরিবর্ধন করা হয়েছে। খসড়াটিতে যেসব পরিবর্তন বা পরিবর্ধন করা হয়েছে সেগুলো পুনর্বিবেচনার জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো হয়েছে। আমার মনে হয় তিনি শিগগিরই গেজেট করার অনুমতি দেবেন।
প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, বিচার বিভাগের সাথে সরকার কখনোই দ্বি-মুখী থাকতে চায় না। মাঝে মাঝে অনেক কিছুর বা অনেক শব্দের ব্যাখ্যার প্রয়োজন হয়ে যায় যাতে কোনো সময়ে ভুল বুঝাবুঝির সৃষ্টি না হয়। বিচার বিভাগের সাথে সরকার বিপরীত পথে হাঁটছে না বলেও জানান তিনি।
সড়ক দুর্ঘটনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধ করা আমাদের সবার দায়িত্ব। এটা যে কেবল সরকারি আইন করে প্রতিরোধ করা যাবে তা ঠিক নয়।
তিনি বলেন, আমি নিজে সড়ক দুর্ঘটনার একজন জীবিত ভিকটিম। আমার স্ত্রী ১৯৯১ সালের ১ জানুয়ারি সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হয়েছিলেন এবং ২ জানুয়ারি ইন্তেকাল করেন। তাই আমি জানি সড়ক দুর্ঘটনা কি জিনিস। তাই আমি মনে করি সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধ করার জন্য সামাজিকভাবে সচেতন হতে হবে। চালকদের অনেক বেশি দায়িত্বশীল হতে হবে এবং সরকারের পক্ষ থেকে চালক-হেলপারদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।
এ প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন, সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে চালক হেলপারদের ন্যূনতম একটা শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকার ব্যবস্থা করতে হবে। আমরা সেই চিন্তা-ভাবনা করছি। সরকারের পক্ষ থেকে সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে যেসব পদক্ষেপ নেয়া দরকার তা নিশ্চয়ই নেয়া হবে।
মার্কস গ্রুপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা তারিক মাসুদ খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে মার্কস গ্রুপের চেয়ারম্যান ফরিদা মাসুদ খান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডা. ইকবাল আর্সনাল, মার্ক মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ মেজর জেনারেল (অব.) অধ্যাপক ডা. মো. নাসির উদ্দিন বক্তব্য দেন।