নওগাঁর অজানা জটিল চর্মরোগে আক্রান্ত মেহেদী হাসান

ক্রাইমবার্তা রিপোট:নওগাঁ প্রতিনিধিঃ নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার ভবানীপুর গ্রামের নয় বছর বয়সের মেহেদী হাসান। জন্মের পর থেকে অজানা জটিল চর্মরোগে রোগে আক্রান্ত। মেহেদীর বাবা গরীব ভ্যান চালক গত এক বছর থেকে চিকিৎসা করতে22 পারেননি। এতে মেহেদীর শারীরিক অবস্থা আরো খারাপ হয়ে যায়। এ নিয়ে গত বছর নভেম্বরের মাঝামাঝি কয়েকটি জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকায় সংবাদ প্রচার হয়। সংবাদ প্রচার হওয়ায় পর তাদের সহযোগিতায় এগিয়ে এসে অনেকেই নাম মাত্র সহযোগিতা করেন। এমতাবস্তায় সরকারী খরচে মেহেদীর চিকিৎসার দায়ভার নেন সমাজসেবা অফিসের ডিজি। সমাজসেবা অফিসের উদ্যেগে গতকাল রবিবার বিকেলে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। মেহেদীর অসহায় বাবা আবুল কালামের বাড়ীর ভিঁটেমাটি আর একটি ভ্যান ছাড়া নেই কোন সম্পত্তি। আবুল কালাম ও তার পরিবারের কেউ পাননা কোন সরকারি সুযোগ সুবিধা।
মেহেদী হাসানের মা জাহানার বেগম জানান, ২০০৭ সালে ২৮ মে মেহেদী হাসান জেলার রাণীনগর উপজেলার ভবানীপুর গ্রামের এক দরিদ্র বাবা ভ্যান চালক আবুল কালাম ও মা জাহানারা বেগমের ঘরে জন্ম নেয়। জন্মের পর থেকেই অজানা চর্ম রোগে মেহেদীর শরীর ধবধবে সাদা। জন্মের ১৫/১৬ দিন পর থেকেই মেহেদীর শরীরে হাত-পায়ে ফাটা ও চর্চারা (এক ধরনের প্রলেপ) দেখা দেয়। দিন যায় আর মেহেদীর অস্থিরতা বাড়তে থাকে। এরপর শরীরের বিভিন্ন স্থানে ফেটে যাওয়া শুরু করে। শুরু হয় প্রচন্ড কান্নাকাটি। বিভিন্ন চিকিৎসক ও কবিরাজের কাছে গিয়েছেন কিন্তু এখন পর্যন্ত কেউ তার রোগে সঠিকভাবে চিহ্নিত করতে পারেননি। শুধুই টাকা খরচ হয়েছে কোন সঠিক চিকিৎসা হয়নি।
মেহেদী হাসানের বাবা আবুল কালাম আজাদ জানান, মেহেদী অজানা রোগে আক্রান্ত হওয়ায় সংবাদ গত বছর নভেম্বরের মাঝামাঝি কয়েকটি জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকায় সংবাদ প্রচার হয়। এরপর জেলা প্রশাসক, স্থানীয় উপজেলা প্রশাসনসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা এগিয়ে আসেন। এ সময় মেহেদীর চিকিৎসার জন্যে প্রায় ২৫ হাজার টাকা সহযোগিতা পাওয়ায় যায়। এছাড়াও প্রশাসনিক ভাবে মেহেদীর চিকিৎসার জন্যে সকল ব্যয় করার প্রতিশ্রুতি দিলেও তা রক্ষা করেননি। বর্তমানে মেহেদীর শারীরিক অবস্থা খারাপ হওয়ায় চলাফেরাও করতে পারে না। শরীরের বিভিন্ন অংশ ফেটে পুঁজ ও রক্ত রেব হয়। সোজা হয়ে চলাফেরা করতে পারে না।
অজ্ঞাত রোগে আক্রান্ত মেহেদী হাসান মেহেদী জানান, শরীরের বিভিন্ন অংশে ফেটে গিয়ে জ্বালা করে রক্ত বের হয়। এতে কষ্ট হয়। নিজে খেতেও পারে না। পড়াশুনার ইচ্ছা থাকলেও পড়তেও পারে না মেহেদী।
স্থানীয় গোনা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল হাসানাত খান হাসান জানান, ওই শিশুটিকে দ্রুত প্রতিবন্ধি ভাতা ও ইউনিয়ন পরিষদ থেকে তাদের পরিবারকে কোন সহযোগিতা দেয়ার সুযোগ থাকলে তা দেয়া হবে। এ ছাড়াও ব্যক্তিগত ভাবে তাদের পরিবারকে সকল সহযোগিতা অব্যাহত রাখা হবে।
জেলার সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক এসএম জুবাইদুল ইসলাম জানান, মেহেদীর অসুখের তথ্য পেয়ে সমাজসেবা কার্যালয়ের অফিসের ডিজি’র নির্দেশে সরকারি ভাবে তার চিকিৎসার ব্যয় বহনের সিদ্ধান্ত নেয়া গতকাল রবিবার বিকেলে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
রাণীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য ও প:প: কর্মকর্তা, ডা: এসএম নজমুল আহসান জানান, মেহেদী জন্মগত ভালে জটিল চর্ম রোগে আক্রান্ত হওয়ায় দেশের বিভিন্ন স্থানে তার বাবা তাকে চিকিৎসা দিয়েছেন। ওষুধ খাওয়ানোর সময় তার এই রোগ নিয়ন্ত্রণে থাকে। কিন্তু মেহেদীর বাবা গরীব হওয়ায় বারো মাস ওষধ খাওয়াতে পারে না। এতে রোগ নিয়ন্ত্রেণের বাহিরে চলে যায়। তবে উন্নত চিকিৎসা সেবা পেলে মেহেদী ভালো হবে এমনটি আশা ব্যক্ত করেন এই চিকিৎসক।

Check Also

কুমিল্লা ও ফরিদপুরকে বিভাগ করার সুপারিশ দেবে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন

কুমিল্লা ও ফরিদপুরকে বিভাগ করার সুপারিশ করতে যাচ্ছে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন। মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) সচিবালয় …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।