বিশ্ব ভালোবাসা দিবস আজ

ক্রাইমবার্তা রিপোট:ভালোবাসি, আমি তোমায় ভালোবাসি’। মধুর এ কথাটি বলতে আজ রবে না মানা। প্রেমিক যুগল তাদের হৃদয় নিংড়ানো আবেগ আর অনুভূতি দিয়ে প্রিয় মানুষটিকে বুঝিয়ে দেবে ভালোবাসার গভীরতা। চোখে চোখ, হাতে হাত রেখে আজ হারিয়ে যাবে বসন্তের উতল হাওয়ায়। আজ ভালোবাসার রঙে রঙিন হয়ে ওঠার দিন।

4
আজ ভালোবাসার দিবস- ‘ভ্যালেন্টাইন’স ডে’।মানব-মানবীর চিরকালের যে প্রেম তার জয়গান হবে আজ। কবি জীবনানন্দ দাশের মতো প্রেমিক হৃদয় বলে উঠবে- ‘হৃদয়, তুমি সেই নারীকে ভালোবাসো, তাই/আকাশের ঐ অগ্নিবলয় ভোরের বেলা এসে/প্রতিশ্রুতি দিয়ে গেছে অমেয় কাল হৃদয় সূর্য হবে/তোমার চেয়েও বেশি সেই নারীকে ভালোবেসে।’

প্রেয়সীর পানে এক গুচ্ছ গোলাপ তুলে দিয়ে শুরু হবে এমন দিন। ফাল্গুনের এই রাঙা সকাল, বিকাল বা সন্ধ্যাটা একসঙ্গে কাটিয়ে প্রেমিক যুগল গাইবে ভালোবাসার গান। অনেকের জন্য হয়তো আজই হবে প্রথম ভালোবাসার প্রথম প্রহর। তেমনি অনেক প্রেমিক যুগল হয়তো উদ্যাপন করবেন তাদের একসঙ্গে পথচলার পাঁচ, সাত বা তারও বেশি বছর।

প্রিয় মানুষটির সামনে ভালোবাসার রংয়ে নিজেকে সাজিয়ে উপস্থিত হবেন আরেকবার। আর ভোলোবাসার রং লাল বলে বেশিরভাগ যুগলই নিজেদের সাজাবেন লালে লালে। আবার তারা হয়তো নুতন করে একে অপরের প্রেমে পড়বেন।

মনে মনে আওড়ে যাবেন সৈয়দ শামসুল হকের কবিতার সেই লাইনগুলো- ‘আমি তো বিস্ময় মানি, এত রূপ হয় কি বুঝি কারো?/ম্লান হয়ে যায় চাঁদ, বাগানের ফুল ঝরে পড়ে,’। এমন দিনে প্রেমিক যুগল হারিয়ে যাবেন বসন্তের উতল হাওয়ার মতোই। নিজেদের মতো করে কাটিয়ে দেবেন ভালোবাসার দিনটি। বাহুডোরের বন্ধনে আবদ্ধ হবেন কোনো নির্জনতায়।

ভ্যালেন্টাইন’স ডে-তে তারুণ্যেরই জয়জয়কার দেখা যায়। আর দিবসটির মূলত প্রেমিক-প্রেমিকা বা মানব-মানবীর চিরায়ত প্রেমকেই বোঝানো হয়ে থাকে। বাঙালির জীবনে এখন চলছে মধুর বসন্ত। ফাল্গুনের পলাশ-শিমুল ফোটার সময় আজ ভালোবাসা দিবসে প্রেমিক যুগলের আনাগোনা থাকবে শহরের পথে প্রান্তরে। দু’জনে দু’জনের হাত ধরে ঘুরবে প্রিয় শহরে। একসঙ্গে তুলবেন সেলফি। অনেকে আবার বিভিন্ন উদ্যান পার্কে গাছের ছায়ায় বসে মন খুলে কথা বলবে। কেউ কেউ একসঙ্গে সেরে নেবে দুপুরের আহার। অনেক যুগল রিকশার ঘুরে বেড়াবে।

রাজধানীতে চলছে অমর একুশে গ্রন্থমেলা। তাই সোহরাওয়ার্দী উদ্যান এবং বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণও হয়ে উঠবে ভালোবাসার মিলনমেলা। টিএসসি, শাহবাগ, চারুকলা, ধানমণ্ডির রবীন্দ্র সরোবরেও থাকবে যুগলদের পদচারণায় মুখর। অনেকে আবার ধানমণ্ডি, বনানী, গুলশান, উত্তরার ফাস্টফুড ও কফি শপগুলোতে মিলিত হবে। রাজধানীর নানা শপিং স্টোরের ফুড কোর্ট যেমন যমুনা ফিউচার পার্ক, বসুন্ধরা সিটির ফুড কোর্টগুলোতে চলবে খাওয়া-দাওয়া। অনেকে আবার একসঙ্গে সিনেমা দেখবে। কেউ কেউ হয়তো প্রেয়সীকে নিয়ে একেবারেই নিজের মতো করে সময় কাটানোর জন্য লং ড্রাইভে চলে যাবে। আবার কেউ হয়তো নির্জন গৃহকোণে মাতবে ভালোবাসার অভিসারে।

অনেক প্রেমিক যুগল বর্তমানে আবার ভালোবাসা দিবসকে বেছে নিয়েছে প্রেমকে চিরস্থায়ী রূপ দিতে অর্থাৎ বিয়ের দিন হিসেবে। তাই এখন ভালোবাসা দিবস বিয়ের দিন হিসেবেও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। ভালোবাসা দিবসে উপহার আদান-প্রদানের প্রচলনও আছে। আজ চকলেট, পারফিউম, বই, প্রিয় পোশাক, আংটি, ঘড়ি, খেলনা উপহার হিসেবে দেয়া-নেয়া চলবে। তবে সবচেয়ে বেশি দেয়া-নেয়া হবে রক্তগোলাপের। পাশাপাশি প্রেমবার্তা, শুভেচ্ছা কার্ড, ই-মেইল, মোবাইলে এসএমএস পাঠানো চলবে সমান তালে।

ভালোবাসা দিবস আমাদের দেশে এখন ঘটা করে পালন করা হলেও এটি এসেছে পশ্চিমা দেশের সংস্কৃতি থেকে। ভালোবাসা দিবস উদ্যাপনের ইতিহাস বেশ পুরনো এবং এ নিয়ে একাধিক কাহিনী প্রচলিত রয়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি প্রচলিত গল্পটি হচ্ছে সেন্ট ভ্যালেন্টাইনকে নিয়ে। সময়টা ২৬৯ খ্র্রিস্টাব্দ। সেন্ট ভ্যালেন্টাইন নামে একজন রোমান ক্যাথলিক ধর্মযাজক যিনি একাধারে একজন চিকিৎসকও ছিলেন। সেই সময় রোমান সম্রাট ছিলেন দ্বিতীয় ক্লডিয়াস। রোমানরা একের পর এক রাষ্ট্র জয় করে চলেছে। যুদ্ধের জন্য রাষ্ট্রের বিশাল সৈন্য বাহিনী গড়ে তোলা দরকার। কিন্তু রাজ্যের লোকজন বিশেষ করে তরুণরা এতে উৎসাহী নয়।

সম্রাট ধারণা করলেন, পুরুষরা বিয়ে করতে না পারলে যুদ্ধে যেতে রাজি হবে। তিনি তরুণদের জন্য বিয়ে নিষিদ্ধ করলেন। কিন্তু তারুণ্যভরা প্রেমিকের মন এমন নিয়ম মানতে চায় না। তাদের পাশে এগিয়ে এলেন সেন্ট ভ্যালেন্টাইন। ভ্যালেন্টাইন প্রেমাসক্ত তরুণ-তরুণীদের বিয়ের ব্যবস্থা করলেন। কিন্তু একসময় ধরা পড়ে গেলেন ভ্যালেন্টাইন। তাকে জেলে নেয়া হল। দেশজুড়ে এ খবর ছড়িয়ে পড়লে তরুণ-তরুণীদের মধ্যে প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। অনেকেই ভ্যালেন্টাইনকে জেলখানায় দেখতে যান। কারাগারের জেলারের একজন অন্ধ মেয়েও ভ্যালেন্টাইনকে দেখতে যেত। চিকিৎসক ভ্যালেন্টাইন মেয়েটির অন্ধত্ব দূর করলেন। একসময় হৃদয়ের বন্ধনে বাঁধা পড়লেন তারা।

ধর্মযাজক হয়েও নিয়ম ভেঙে প্রেম এবং বিয়ে করেন ভ্যালেন্টাইন। খবর যায় সম্রাটের কানে। তিনি ভ্যালেন্টাইনের মৃত্যুদণ্ড দেন। সে তারিখটি ছিল ২৬৯ খ্রিস্টাব্দের আজকের দিন ‘১৪ ফেব্রুয়ারি’। ফাঁসির মঞ্চে যাওয়ার আগে ভ্যালেন্টাইন তার প্রেয়সী এবং বধূকে যে চিঠিটি লেখেন তার শেষটায় লেখা ছিল ‘লাভ ফ্রম ইওর ভ্যালেন্টাইন’। এরপর দুই শতাব্দী নীরবে-নিভৃতে ভালোবাসা দিবস হিসেবে পালিত হয়েছে ১৪ ফেব্রুয়ারি।

৪৯৬ খ্রিস্টাব্দে রোমের রাজা পপ জেলুসিয়াস এ দিনটিকে ভ্যালেন্টাইন দিবস হিসেবে ঘোষণা করেন।

ভালোবাসা দিবসকে ঘিরে নানা রকম আয়োজনও রয়েছে। নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে বিভিন্ন সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান। রয়েছে ভালোবাসার স্মৃতিচারণ, কবিতা আবৃত্তি, গান, ভালোবাসার চিঠিপাঠ এবং ভালোবাসার দাবিনামা উপস্থাপনসহ নানা কর্মসূচি। দিবসটি উপলক্ষে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে কনসার্টেরও আয়োজন করা হয়েছে। টেলিভিশন চ্যানেলগুলো দিনটি উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার করবে।

Check Also

অন্তর্বর্তী সরকারকে ডি-স্ট্যাবিলাইজ করার ষড়যন্ত্র হচ্ছে: ফারুকী

নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী নানান ইস্যুতে প্রতিবাদের সুরে কথা বলেন। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের শুরু থেকেই ছাত্র-জনতাকে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।