ক্রাইমবার্তা রিপোট:শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ঘিরে চারস্তরের নিরাপত্তার ব্যবস্থা থাকবে। দিনটিকে ঘিরে সুনির্দিষ্ট কোনো হুমকি নেই। তবে পুলিশ সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে থাকবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া।
আজ রোববার সকালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার পরিদর্শন শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা বলেন।
তিনি বলেন, দিবসটি উপলক্ষে পোশাকে ও সাদা পোশাকে আট হাজার পুলিশ সদস্য নিরাপত্তা রক্ষায় দায়িত্ব পালন করবেন। অতীতের অভিজ্ঞতা বিবেচনায় নিয়ে নিরাপত্তা পরিকল্পনা করা হয়েছে বলে তিনি জানান।
তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণসহ আশপাশের সব এলাকা জুড়ে পর্যাপ্ত সংখ্যক অফিসার ও ফোর্সের সমন্বয়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। শহীদ মিনার ও এর আশপাশের এলাকার প্রতিটি ইঞ্চি সিসি টিভি ক্যামেরা দ্বারা মনিটরিং করা হবে। পুলিশ কন্ট্রোল রুম থেকে সিসি টিভি ক্যামেরার এ ফুটেজগুলো মনিটরিং করা হবে। ২০ ফেব্রুয়ারি রাত ৮টার পর থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় বহিরাগত কোনো গাড়ি প্রবেশ করতে পারবে না। প্রতিটি প্রবেশ গেটে পর্যাপ্ত সংখ্যক আর্চওয়ে স্থাপন করা হয়েছে এবং আগত দর্শনার্থীদের হ্যান্ড মেটাল ডিটেক্টর দ্বারা দেহ তল্লাশি ও হ্যান্ড ব্যাগ চেকিং এর আওতায় আনা হবে। মহিলাদের দেহ তল্লাশির ক্ষেত্রে প্রতিটি গেটে পর্যাপ্ত সংখ্যক নারী পুলিশ মোতায়েন থাকবে।
আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, গত বছর দোয়েল চত্বরে কোনো একটি দলের কর্মী-সদস্যরা অযাচিতভাবে প্রবেশের চেষ্টা চালায় ও দায়িত্বরত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের লাঞ্ছিত করে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছিল। শুধু তাই নয় কেউ কেউ জুতা পায়ে শহীদ মিনারে মূল বেদীর উপরেও উঠে পড়েছিল। যা নিন্দিত হয়েছিল সর্বমহলে এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও বিস্মিত হয়েছিলাম। তাই যেকোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা রোধে আমরা বদ্ধপরিকর। এ সময় নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলার স্বার্থে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সহযোগিতা করার জন্য সবার প্রতি আহবান জানান কমিশনার।
লেখক অভিজিৎ রায় হত্যাকাণ্ড মামলার সর্বশেষ অগ্রগতি জানতে চাইলে কমিশনার সাংবাদিকদের বলেন, অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত কয়েকজন আমাদের অভিযানে নিহত হয়েছে। দুয়েকজন আটক আাছে। বাকিদের চিহ্নিত করে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
এদিকে শহীদ মিনারের নিরাপত্তা নিশ্চিতে ঢাকা মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ তাদের নির্দেশনা দিয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী পরিষদ সদস্য, স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার, বিরোধী দলীয় নেতা মৎস্য ভবন থেকে দোয়েল চত্বর হয়ে শহীদ মিনারে প্রবেশ করবেন। সাধারণ মানুষ পলাশীর মোড় থেকে প্রবেশ করতে পারবে।
ডিএমপি সূত্র জানায়, শহীদ দিবসে শহীদ মিনারের নিরপত্তা নিশ্চিত করতে প্রবেশ পথে থাকবে ম্যানুয়াল চেকিং এবং মেটাল ডিটেক্টর চেকিং। সর্বশেষ আর্চওয়ে পার হয়ে শহীদ মিনারে সাধারণ মানুষকে প্রবেশ করতে হবে। চারদিকে থাকবে পুলিশের সতর্ক অবস্থান ও পেট্রোল ব্যবস্থা। মৎস্যভবন থেকে নিউমার্কেট এলাকা ও বিশেষ করে দোয়েল চত্বর থেকে পলাশী এলাকার প্রতিটি জায়গা সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় থাকবে, যা কন্ট্রোলরুম থেকে মনিটর করা হবে। আজ ২০ ফেব্রুয়ারি শহীদ মিনার ডগ স্কোয়াড দিয়ে সুইপিং করা হবে। নিরাপত্তায় নজরদারিতে শহীদ মিনারের চারপাশে থাকবে ওয়াচটাওয়ার। পুরো এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আট হাজার সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। ওই সময়ে কোনো ভাসমান দোকান সেখানে থাকবে না।
২১ ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে ট্রাফিক নির্দেশনা
ট্রাফিক নির্দেশনা ২০ ফেব্রুয়ারি রাত ৮টা থেকে ২১ ফেব্রুয়ারি বেলা ২টা পর্যন্ত প্রযোজ্য হবে বলে মহানগর পুলিশের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে। এছাড়া কেন্দ্রীয় মাতৃভাষা দিবস উদযাপন সমন্বয় কমিটির পক্ষ থেকে পথ-নির্দেশিকা পাঠানো হয়। তাতে বলা হয়েছে, গোরস্থান এবং শহীদ মিনারে যারা শ্রদ্ধার্ঘ ও পুষ্পস্তবক অর্পণ করতে যাবেন তাদের রাস্তায় বসতে বা দাঁড়াতে পারবে না। সবার চলাচলের সুবিধার জন্য বর্ণিত রাস্তায় কোনো প্রকার প্যান্ডেল তৈরি করা যাবে না।
আরো জানানো হয়, ২০ ফেব্রুয়ারি রাত ৮টা থেকে টিএসসি মোড় থেকে শহীদ মিনারে যাওয়ার পথ বন্ধ থাকবে। একইভাবে ভিসি ভবন গেট থেকে ফুলার রোড হয়ে ফুলার রোড মোড় পর্যন্ত রাস্তা এবং চাঁনখার পুল থেকে কার্জন হল পর্যন্ত রাস্তা বন্ধ থাকবে। শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানাতে জনসাধারণকে পলাশী মোড় হয়ে সলিমুল্লাহ ও জগন্নাথ হলের সামনের রাস্তা হয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এছাড়া চাঁনখার পুল থেকে বকশি বাজার মোড় হয়ে বুয়েটের সামনে দিয়ে পলাশী মোড় হয়ে সলিমুল্লাহ ও জগন্নাথ হলের সামনের রাস্তা দিয়ে শহীদ মিনারে যাওয়া যাবে।
শ্রদ্ধা জানানোর পর সেখান থেকে বিশ্ববিদ্যালয় খেলার মাঠের সামনের রাস্তা দিয়ে দোয়েল চত্বর হয়ে টিএসসি যাওয়া যাবে ও মেডিক্যালের সামনের রাস্তা দিয়ে চাঁনখার পুল হয়ে শুধু বের হওয়া যাবে, শহীদ মিনারের দিকে আসা যাবে না।