ক্রাইমবার্তা রিপোট:মিয়ানমারের মানবাধিকার বিষয়ক জাতিসঙ্ঘের স্পেশাল রেপোর্টিয়ার ইয়াংঘি লি তিনদিনের সফরে আজ সোমবার বাংলাদেশে আসছেন। তিনি কক্সবাজার সফর করে রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের অবস্থা সরেজমিন পরিদর্শন করবেন এবং মিয়ানমারে তাদের ওপর দমন-পীড়নের তথ্য সংগ্রহ করবেন।
ইয়াংঘি লি পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীসহ সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি ও কূটনৈতিকদের সাথে মতবিনিময় করবেন।
সফরের আগে জেনেভা থেকে দেয়া এক বিবৃতিতে ইয়াংঘি লি বলেন, ‘উত্তর রাখাইনে মিয়ানমার সামরিক বাহিনীর অভিযান বন্ধের ঘোষণাকে আমি স্বাগত জানাই। তবে গত মাসে জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের একটি প্রতিনিধি দল কক্সবাজার ঘুরে এসে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের যে ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরেছে, তা খুবই উদ্বেগজনক। ক্ষতিগ্রস্থ এই সম্প্রদায়ের সাথে কথা বললে মিয়ানমারে মানবাধিকার পরিস্থিতি সম্পর্কে আমি আরো ভালো ধারণা পাব।’
এর আগে জাতিসঙ্ঘের এই স্পেশাল রেপোর্টিয়ার গত ৯ থেকে ২১ জানুয়ারি মিয়ানমার সফর করেন। সফরকালে তিনি রাখাইন ও কোচিন রাজ্য পরিদর্শন এবং মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় পরামর্শক ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী অং সান সুচিসহ ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনা করেন। এরপর জেনেভা থেকে দেয়া এক বিবৃতিতে বলেন, মিয়ানমারে যা হচ্ছে তা এক কথায় প্রতিহিংসামূলক। সেখানে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠি পরিকল্পিত ও প্রাতিষ্ঠানিকভাবে বৈষম্যের শিকার।
লি বলেন, বিগত জাতীয় নির্বাচন মিয়ানমারের মানুষের মধ্যে ব্যাপক আকাঙ্খার জন্ম দিয়েছিল। কিন্তু মাত্র এক বছরের মধ্যে সেই প্রত্যাশা ধীরে ধীরে মিলিয়ে যেতে শুরু করেছে। এটা খুবই দু:খজনক।
রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকা পরিদর্শনের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে তিনি বলেন, ‘পুড়ে যাওয়া বাড়ির কাঠামো আমি নিজ চোখে দেখেছি। সরকারি কর্মকর্তারা বলেছেন, গ্রামবাসীরা নিজেদের বাড়িঘর নিজেরাই পুড়িয়ে দিয়েছে। এই যুক্তি আমার কাছে অবিশ্বাস্য ঠেকেছে।’
নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানকালে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতনের একটি ভিডিও ক্লিপ জাতিসঙ্ঘের এই বিশেষজ্ঞ দেখেছেন। তার মতে, এটা বিচ্ছিন্ন নয়, বরং অহরহ এমন ঘটনা ঘটছে।
লি বলেন, মিয়ানমারে জবাবদিহিতা ও ন্যায় বিচার অবশ্যই থাকতে হবে। কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়- এ বিষয়টি জনগণকে নিশ্চিত করতে হবে।
বাংলাদেশ সফর শেষে ইয়াংঘি লি একটি বিবৃতি দেবেন। এরপর আগামী ১৩ মার্চ জাতিসঙ্ঘ মানবাধিকার কাউন্সিলে মিয়ানমারের ওপর প্রতিবেদন উত্থাপন করবেন। এতে পরিস্থিতির ওপর তার মতামতের পাশাপাশি মিয়ানমার সরকারের প্রতি সুপারিশও অন্তর্ভুক্ত থাকবে।