ক্রাইমবার্তা রিপোট: গাজীপুর সংবাদদাতাঃ গাজীপুরের কাপাসিয়ায় শীতলক্ষ্যা নদী থেকে উদ্ধার করা প্রাডো গাড়ীর মালিকের সন্ধান পাওয়া গেছে। তার নাম খন্দকার হেফজুর রহমান। প্রায় সাড়ে ৫মাস আগে জাপা নেতা হেফজুর রহমানকে ওই গাড়িটিসহ অজ্ঞাতরা অপহরণ করে। নদীর তলদেশ থেকে তার ব্যবহৃত গাড়িটি উদ্ধার হলেও হেফজুরের সন্ধান এখনো মিলেনি বলে পরিবারের সদস্যরা দাবী করেছে। হেফজুরের বাড়ি ব্রাম্মনবাড়ীয়া জেলার কসবা উপজেলার লক্ষীপুর গ্রামে। তিনি জাতীয় পার্টি (আনোয়ার হোসেন মঞ্জু) থেকে ব্রাম্মনবাড়ীয়া-৪ আসনে সংসদ নির্বাচনে বাইসাইকেল প্রতীকে নির্বাচন করেছিলেন।
কাপাসিয়া থানার ওসি আবু বকর সিদ্দিক জানান, কাপাসিয়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের দস্যুনারায়নপুর বাজার সংলগ্ন শীতলক্ষ্যা নদীতে একটি মাছের ঘেরে মাছ ধরার সময় জেলেদের জালে গত ১৯ জানুয়ারী বৃহষ্পতিবার বিকেলে বিলাস বহুল একটি প্রাডো জীপ গাড়ি আটকা পড়ে। পরে পানির নীচ থেকে উদ্ধার করা হয়। গাড়ীটি উদ্ধারের পর কাপাসিয়া থানার এসআই মো. দুলাল মিয়া আদালতের অনুমতি নিয়ে গাড়ির চেসিস ও ইঞ্জিন নাম্বার দিয়ে বিআরটিএতে অনুসন্ধান চালায়। এতে গাড়ীটির প্রকৃত মালিক ও গাড়ির নাম্বার পাওয়া যায়। ওই গাড়ির মালিকের নাম খন্দকার হেফজুর রহমান। মঙ্গলবার রাতে খন্দকার হেফজুর রহমানের স্ত্রী সালেহা বেগম কাপাসিয়া থানায় এসে নদীথেকে উদ্ধারকৃত প্রাডো গাড়িটি সনাক্ত করেন।
খন্দকার হেফজুর রহমানের স্ত্রী সালেহা বেগম জানান, ২০১৫ সালের ৭ সেপ্টেম্বর সকাল ১১ টার দিকে ঢাকার বাড্ডার ৬৭/৩ নম্বর বাড়ি থেকে বের হন তাঁর স্বামী। তার দেহরক্ষী ক্যাপ্টেন (অব:) শওকত, আব্দুল আওয়াল এবং তার ব্যবহৃত প্রাডো গাড়ীর চালক মো: শাহ আলম এসময় তার সাথে ছিলেন। তিনি গুলশানের উদ্দেশে বাসা থেকে ব্যাক্তিগত কাজে বের হয়েছিলেন। ৭ সেপ্টেম্বর হেফজুর রহমান বাসায় ফিরে না আসায় ৮ সেপ্টেম্বর-২০১৫ গুলশান থানায় অজ্ঞাত কারনে পুলিশ মামলা নিতে গড়িমসি করে। পরে আইনগত সহায়তা চেয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বরাবর আবেদন করি।
হেফজুর রহমানের স্ত্রী আরো বলেন, চালক শাহ আলম জানিয়েছে- হেফজুর রহমান গত ৭ সেপ্টেম্বর বাসা থেকে বের হয়ে গুলশান ১ নম্বরের চেক পোষ্টের লিং রোডের মাথায় পৌঁছেন। পরে সাদা পোশাকধারী অপরিচিত কয়েকজন গাড়িটির গতিরোধ করে। তারা অস্ত্রের মুখে গাড়ীতে থাকা চালকসহ সকলের চোখ বেঁধে ফেলে। পরে আনুমাণিক আড়াই থেকে তিন ঘন্টা গাড়ী চালিয়ে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায়। সেখানে কোনো একটি ভবনের দোতলায় নিয়ে খন্দকার হেফজুর রহমানকে আলাদা একটি কক্ষে এবং অন্যদের তার পাশের আরেকটি কক্ষে নিয়ে রাখে। টানা ১৭দিন তারা সেখানে বন্দী অবস্থায় ছিল। ২৩ সেপ্টেম্বর রাত ৯টার দিকে খন্দকার হেফজুর রহমান ছাড়া চালকসহ অন্য তিনজনকে জাতীয় সংসদ ভবন এলাকায় রেখে যায়।
সালেহা বেগম সাংবাদিকদের জানান, ২৫ সেপ্টেম্বর চালক শাহ আলম তাকে ফোন করে এবং ওইসব ঘটনা বর্ণনা করে। প্রয়োজনে যেন তাকে মেরে ফেলি তবে এর চেয়ে বেশি কিছু যেন তার কাছে জানতে না চাই। তাহলে অজ্ঞাত লোকজন চালকের পরিবারের সদস্যদের হত্যা করে ফেলবে। কিন্তু খন্দকার হেফজুর রহমানের দেহরক্ষী ও অপর সঙ্গীর নাম্বারে ফোন দিয়ে তাদের ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। এমনকি চালক একবার ফোন দিয়ে এসব ঘটনা জানানোর পর থেকে চালকের নাম্বারটিও বন্ধ পাওয়া যায়।
পরে ২৫ সেপ্টেম্বর গুলশান থানা পুলিশ এ সংক্রান্ত মামলা ( নং ৬৩) গ্রহণ করে। ওই সময় মামলাটি তদন্ত করেন এসআই মোহাম্মদ আলী হাসান। কিন্তু ওই সময় তিনি এই মামলার কোন অগ্রগতি বা রহস্য উন্মোচন করতে পারেননি।
সালেহা বেগম জানান, মামলা দায়েরের পর তিনি নিজ উদ্যোগে চালক শাহ আলমের সন্ধান করেন। চালক শাহ আলমকে ২০১৬ সনের ৯ জুন কৌশলে গুলশান থানায় নিয়ে যান। সেখানে নিয়ে গেলে থানা পুলিশ চালক শাহ আলমের জবানবন্দী ও মুচলোক নিয়ে তাকে ছেড়ে দেয়।
তিনি জানান, এরপর থেকে এ ঘটনার আর কোনো উন্নতি হয়নি। সালেহা বেগম আশা প্রকাশ করে বলেন, আমি বিশ^াস করি আমার স্বামীকে সাভার, গাজীপুর বা রাজধানীর আশপাশের কোনো এলাকার আটকিয়ে রাখা হয়েছে। তার কোনো শত্রু আছে বলে আমার জানা নেই। আমার স্বামী সাধারণ ও সহজ সরল জীবন যাপন করেছেন। তার নিখোঁজের পেছনে দেহরক্ষী ক্যাপ্টেন (অব: ) শওকত, আব্দুল আউয়াল এবং চালক শাহ আলমের হাত রয়েছে। সত্য কথা বললে তাদেরকে করা হত্যা করবে ? তারাই আমার স্বামী নিখোঁজের সাথে জড়িত। আমাকে সহায়তা করুন। সাংবাদিক, পুলিশ এবং সরকারের কাছে আমার স্বামীকে উদ্ধারের সহযোগিতা চাই।
সালেহা বেগম আরও জানান, তার স্বামী ঢাকার মণিপুর থেকে জনৈক ব্যাক্তির কাছ থেকে সকেন্ড হ্যান্ড প্রাডো গাড়িটি ক্রয় করেন। তার ব্যবহৃত গাড়িটির রেজি: নাম্বার ঢাকা মেট্রো- ঘ- ১১- ৫৭৫৬, তারিখ- ২৭/১১/২০০৪। পরে ওইসব লোকজন গাড়িটির নাম্বারপ্লেট (ঢাকা মেট্রো- ঘ- ১১- ২০২৯)পরিবর্তন করে ফেলে।
নিখোঁজ হেফজুর রহমানের পারিবারিকসুত্রে জানা গেছে, খন্দকার হেফজুর রহমান ব্রাম্মনবাড়ীয়া- ৪ আসন থেকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি (মঞ্জু) থেকে বাই সাইকেল প্রতীকে অংশ নেন। তিনি জমি কেনা বেচার ব্যবসার সাথে জড়িত ছিলেন।