ক্রাইমবার্তা রিপোট:গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি মরার ওপর খাড়ার ঘাঁ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মন্তব্য করেছে বিএনপি। দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী অভিযোগ করেন, গ্যাস কোম্পানীগুলো লাভজনক অবস্থায় থাকলেও কেবল সীমাহীন লুটপাটের জন্যই এই মূল্যবৃদ্ধির ঘোষণা দিয়েছে সরকার। গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির খড়গ পড়বে সাধারণ মানুষের ঘাড়ে। প্রভাব পড়বে সকল সেক্টরে।
তিনি বলেন, এমনিতেই দ্রব্যমূল্যের উর্দ্ধগতিতে সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যও আকাশছোঁয়া। মানুষের বাড়ীভাড়া বেড়েছে। এছাড়া একটি নিরপেক্ষ তদন্ত কমিশনের মাধ্যমে পিলখানায় হত্যার রহস্য উন্মোচনের দাবি জানিয়ে রিজভী বলেন, পিলখানা হত্যাকান্ডের পুরো বিষয়টি এখনো রহস্যের কুয়াশায় ঢাকা। সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের হত্যাকান্ডের দিনটিকে জাতীয় শোক দিবস হিসেবে ঘোষণার জন্য বিএনপির পক্ষ থেকে আহ্বান জানাচ্ছি।
আজ শুক্রবার সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব বলেন। নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলনে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
রিজভী লিখিত বক্তব্যে বলেন, আগামীকাল পিলখানা হত্যা দিবস। ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাকে হত্যার যে নির্মম ও মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে তা জাতির জন্য খুবই বেদনাদায়ক ও শোকাবহ। আমাদের গৌরবোজ্জল সেনাবাহিনী মুক্তিযুদ্ধে দেশ স্বাধীন করার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। কিন্তু ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারিতে হত্যা করা হয়েছে চৌকস ও মেধাবী ৫৭ জন কর্মকর্তাকে। তাদের পরিবার-পরিজনকে নির্যাতন, লাঞ্ছিত ও অপমানিত করা হয়েছে।
পৃথিবীর ইতিহাসে এমনকি অনেক যুদ্ধেও এতো সেনা কর্মকর্তা একসাথে নিহত হয়নি।
তিনি বলেন, পূর্ব পরিকল্পিত পিলখানা হত্যাকান্ডের ঘটনায় অনেকের সাজা হয়েছে, আবার অনেকেই অধরায় থেকে গেছেন। এই মর্মান্তিক ঘটনার সাথে ক্ষমতাসীনদের অনেকের জড়িত থাকার কথা শোনা গেলেও সেগুলোকে ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। পুরো বিষয়টি এখনো রহস্যের কুয়াশায় ঢাকা।
একটি জাতি স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব সুরক্ষার প্রতীক সেনাবাহিনীকে এভাবে দুর্বল করার আন্তর্জাতিক চক্রান্ত থাকতে পারে। পিলখানা ট্র্যাজেডির উচ্চ পর্যায়ের একটি নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করে এর রহস্য উদঘাটন করা উচিৎ। আমি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির পক্ষ থেকে পিলখানায় সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের হত্যাকান্ডের দিনটিকে জাতীয় শোক দিবস হিসেবে ঘোষনার জোর দাবি জানাই।
রিজভী বলেন, গতকাল আবারো বাড়ানো হয়েছে গ্যাসের দাম। শুধু আওয়ামী লীগ সরকার তিনবারে গ্যাসের মুল্য পাঁচগুণ বৃদ্ধি করেছে। বর্তমানে গ্যাস কোম্পানীগুলো লাভজনক অবস্থায় থাকলেও কেবল সীমাহীন লুটপাটের জন্যই এই মূল্যবৃদ্ধির ঘোষণা দিয়েছে সরকার। ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে একদিকে বিরোধী দলের ওপর জেল, জুলুম নির্যাতন চলছে, গুম-খুন ও বিচারবর্হিভূত হত্যাকান্ডের মাধ্যমে সারাদেশ আজ বিভিষিকাময়। সন্ত্রাসী দু:শাসনের ছায়ায় গ্রাস হয়ে আছে বাংলাদেশ। অন্যদিকে দুর্নীতি, দু:শাসন আর লুটপাটে মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠছে। দুর্নীতির বৃদ্ধি-বিকাশের আদর্শস্থল আওয়ামী সরকার। ক্ষমতাসীনদের কাছে অহম ও ক্ষমতালিপ্সা বাংলাদেশের চেয়েও প্রিয়। রাবিশ ও বোগাস শব্দের ব্যবহারে ট্রেডমার্ক অর্থমন্ত্রী বলেন, স্পিড মানি বা ঘুষ দেয়া অবৈধ নয়, সেজন্য দুদক দুর্নীতি দমনের চেয়ে ক্ষমতাসীনদের লুটপাটের দায়মুক্তির সার্টিফিকেটই বেশী বিতরণ করেছে। আর বিএনপি চেয়ারপার্সনসহ বিরোধী দলের নেতাদের মিথ্যা মামলা জিইয়ে রাখা হয়েছে শুধুমাত্র প্রধানমন্ত্রীকে খুশী রাখার জন্য। প্রধানমন্ত্রীসহ বড় বড় মন্ত্রীদের সর্বনাশা আশকারাতেই দুর্নীতি ফুলে-ফলে-পাঁপড়িতে পল্লবিত হয়ে উঠেছে।
বিএনপির সিনিয়র এই নেতা বলেন, গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির খড়গ পড়বে সাধারণ মানুষের ঘাড়ে। গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির ফলে এর প্রভাব পড়বে সকল সেক্টরে। এমনিতেই দ্রব্যমূল্যের উর্দ্ধগতিতে সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। শীতের এই সব্জির সিজনেও এমন কোনো কোনো সব্জি নেই যার দাম ৫০ টাকার নীচে। চালের দাম বেড়েছে কয়েকগুণ। অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যও আকাশছোঁয়া। মানুষের বাড়ীভাড়া বেড়েছে। এর ওপর গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি মরার ওপর খাড়ার ঘাঁ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রিজভী বলেন, যেহেতু বর্তমান সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয় তাই তাদের মানুষের ওপর দরদ নেই। তারা মনে করে-বাংলাদেশের সবকিছুতে রয়েছে আওয়ামী লীগের মালিকানা। সত্যিকার অর্থে গণতন্ত্রহীন দেশে বন্দুকের জোরে যেন জুলুমের শাসন চলছে। এত জুলুম নির্যাতন, গুম খুন নির্যাতনে মানুষ প্রতিবাদের ভাষাও আজ হারিয়ে ফেলেছে। জনগণকে তারা ত্যাজ্য করেছে। আর এজন্যই তারা নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে চায় না, নিজেদের ছাতার নীচে নির্বাচন করতে তারা ক্ষেপে ওঠে।
তিনি জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির পক্ষ থেকে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির গণবিরোধী পদক্ষেপ প্রত্যাহারের দাবি জানান। সেইসাথে সাধারণ জনগণকে সরকারের ভয়াবহ জুলুম নিপীড়নের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার আহবান জানান।