ক্রাইমবার্তা স্পোর্টস ডেস্ক:তার নাম দ্বীন ইসলাম হৃদয়। রোল বল বিশ্বকাপের খোঁজখবর যারা রেখেছেন, নিশ্চয় আলাদাভাবেই জেনেছেন হৃদয়ের কথা। কেননা বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত এই বিশ্বকাপে টানা ম্যাচেই গোল উৎসবে দর্শক-সমর্থকদের মাতিয়েছেন হৃদয়। বিশ্বকাপের নিজেদের প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশের হয়ে একা ৭ গোল করেন এই খেলোয়াড়। একের পর এক ম্যাচে জাদুকরি পারফরম্যান্স উপহার দিয়েছেন হৃদয়। দুরন্ত ছিল বাংলাদেশও। ফাইনালে খেলার স্বপ্ন ভেঙে গেলেও রোল বল বিশ্বকাপে সেরা সাফল্য (চতুর্থ স্থান) দেখিয়েছে বাংলাদেশ। একই সঙ্গে সবাইকে পেছনে ফেলে বিশ্বকাপের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার জিতে নিয়েছেন ‘গোল-মেশিন’খ্যাত হৃদয়। বিশ্বকাপে ৮ ম্যাচে ২৯টি গোল করেছেন এই রোলার স্কেটিং খেলোয়াড়। শুধু তাই নয়, ১৫টি গোল করিয়েছেনও। টুর্নামেন্টের সমাপনীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে এক লাখ টাকার চেক নেওয়ার সময় হৃদয়ের চোখে-মুখে আলাদা রোমাঞ্চই খেলা করেছে। বাংলাদেশের রোল বলের এই নতুন তারকা আগে কি জানতেন, বাদাম বিক্রেতা থেকে বনে যাবেন বিশ্বকাপের সেরা খেলোয়াড়! স্বপ্নের সীমানাকেও ছাড়িয়ে গেছেন বরিশালের এই কিশোর। কীভাবে বাদাম বিক্রেতা থেকে বিশ্বকাপের সেরা খেলোয়াড় হলেন হৃদয়? গল্পটা জানুন বাংলাদেশ রোলার স্কেটিং দলের প্রধান প্রশিক্ষক আশরাফুল আলম মাসুমের কাছ থেকেইÑ ‘১৪ তে পা দিয়েছে হৃদয়। কোনো মোবাইল ফোন ব্যবহার করে না সে। আমিই তাকে তুলে এনেছি। ৪ বছর হলো সে আমাদের সঙ্গে আছে। একসময় আবাহনী মাঠেই আমাদের খেলোয়াড়রা প্র্যাকটিস করত। সে সময় বাদাম বিক্রি করত হৃদয়। মাঠের পাশে দাঁড়িয়ে থাকত। পরে মাঠ ঝাড়– দেওয়ার কাজটাও সে করত। রোল বলের প্রতি তার প্রচ- আগ্রহ ছিল। আমি তাকে প্রথমে এক জোড়া জুতো দিই। দেখি ভালোই করছে সে। পরে আমাদের ফেডারেশনের সেক্রেটারি তাকে দামি এক জোড়া জুতো দেন। দামি জুতো পেয়ে তার আগ্রহ আরও বেড়ে যায়। পরে আমরা তাকে ন্যাশনাল কম্পিটিশনে নিয়ে আসি। যতবারই সে কম্পিটিশনে অংশ নিয়েছে, ততবারই চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। এবারের বিশ্বকাপ দলে সবচেয়ে ছোট খেলোয়াড় হৃদয়। আমরা তাকে স্ট্যান্ড বাই খেলোয়াড় হিসেবে রেখেছিলাম। পরে মাঠে নামিয়েছি। এর পর তো আপনাররা জানেনই।’
এর পর কথা হয় বাংলাদেশ রোলার স্কেটিং দলের অধিনায়ক আসিফ ইকবালের সঙ্গে। হৃদয়ের ফোননম্বর চাইতেই আসিফ বলেন, ও তো ফোন ব্যবহার করে না। হৃদয় সম্পর্কে আসিফ বলেন, ‘স্কেটিং ফেডারেশনের অধীনে আমরা আবাহনীর মাঠেই বাস্কেবল বলের আউট-ডোরে খালি জায়গায় প্র্যাকটিস করতাম। হৃদয় আমাদের পাশে এসে দাঁড়িয়ে থাকত। সে বাদাম বিক্রি করত। কিন্তু এ খেলার প্রতি প্রচ- আগ্রহ জন্মায় তার। আমাদের মাঠও ঝাড়– দেওয়ার কাজ করত সে। এখানে সময় দেওয়ার কারণে তার বাদাম বিক্রি কম হতো। এ রকম দেখে একদিন আমাদের কোচ তাকে এক জোড়া পুরনো জুতো দেয়। সেটা নিয়েই সে প্র্যাকটিস করে। সে ভালো করতে থাকে। পরে ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আহমেদ আসিফুল হাসান তাকে ৪০ হাজার টাকা দিয়ে এক জোড়া নতুন জুতো কিনে দেন। এর পর সে বেশ কটি আন্তঃপ্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। আস্তে আস্তে আরও ভালো করতে থাকে। পরে জাতীয় পর্যায়ে প্রত্যেকবারই অংশ নিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে সে। বিশ্বকাপ সামনে থাকায় দলে তাকে নেওয়া হয়েছে। ৪০টি দেশের প্রায় ৭০০ খেলোয়াড় রোল বল বিশ্বকাপে অংশ নিয়েছিল। এর মধ্যে হৃদয়ের আলোর নিচে ঢাকা পড়েছে অন্য সব তারকা খেলোয়াড়রা। রোল বলের মাধ্যমে দেশকে গর্ব করার মতো ফল এনে দিয়েছে হৃদয়। রোল বলই বদলে দিল হৃদয়ের জীবন!