ক্রাইমবার্তা রিপোট:জি,এ, গফুর, পাইকগাছা ॥ পাইকগাছায় দফায় দফায় সরকার দলীয় এমপি এ্যাডঃ শেখ মোঃ নুরুল হকের দখল করা জমিতে উচ্চ প্রাচীর বুলড্রেজার দিয়ে গুড়িয়ে অবরুদ্ধ আ’লীগনেতা আজিজ গোলদারের পরিবারকে উন্মুক্ত করে দিলেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফকরুল হাসান। তিনি রবিবার দুপুর সাড়ে ১২টায় প্রথম দফায় ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে প্রাচীর ভেঙ্গে দিয়ে যাতায়াতের পথ উন্মুক্ত হলে বন্দিদশা থেকে মুক্ত হয়ে আজিজ গোলদারের পরিবার সংশ্লিষ্ট প্রশাসন ও গণমাধ্যম কর্মীদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন। এরপর বিকাল সাড়ে ৪টায় ব্যাপক পুলিশী প্রহরায় দ্বিতীয় দফায় বুলড্রেজার দিয়ে দখলীয় প্রাচীর গুড়িয়ে দেন একই আদালত। গত ক’দিন ধরে গণমাধ্যমে ব্যাপক প্রচারের ফলে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে পৌছালে খোদ আ’লীগ ও প্রশাসন বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে। সর্বশেষ শীর্ষ পর্যায়ের নির্দেশনা পেয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার এ পদক্ষেপ নেন। জানা যায় পাওয়ার অব এ্যাটর্ণী নিয়ে, ২০১৬ সালের ৩ জানুয়ারি সংসদ সদস্য এ্যাডঃ শেখ মোঃ নুরুল হকের পুত্র শেখ মনিরুল ইসলামের নেতৃত্বে পৌর আ’লীগের ৪নং ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আজিজ গোলদারের ৫০ বছরের দখলীয় ২০ শতক বসত ভিটাসহ সরকারী ভিপি সম্পত্তি জবর-দখল করে নেয়। যার চারিপাশ দিয়ে নির্মাণ করে ১০ ফুট উচ্চ পাকা প্রাচীর। চারিদিক প্রাচীর দেওয়ায় আজিজ পরিবারটি অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। এ ঘটনায় পাল্টাপাল্টি মামলা ও সংবাদ সম্মেলন হলেও কোন প্রতিকার মেলেনি। এ পরিবারটি যাতায়াতের জন্য বিকল্প পথ হিসেবে বেছে নেয় মই ও প্রাচীরের নিচে গর্ত করে তৈরী করে সুড়ঙ্গ পথ। জবর দখলের কারণে আজিজের পুত্র সাইফুল ইসলাম ৪ জানুয়ারি’১৬ পাইকগাছা থানায় এমপিপুত্র সহ ১৬ জনের নামে একটি মামলা করে। এর পূর্বে ৩ জানুয়ারি এমপির ভাতিজা শেখ আলাউদ্দীন বাদী হয়ে আব্দুল আজিজ সহ ১৬ জনের নামে থানায় চাঁদাবাজী মামলা করে। যে মামলায় বৃদ্ধ আব্দুল আজিজ প্রায় ১ মাস জেলহাজতে ছিল। এ মামলায় পুলিশ আদালতে ফাইনাল রিপোর্ট দিয়েছে। এ ব্যাপারে আব্দুল আজিজ গোলদার জানান, তার দাদী স্থানীয় অজিত হালদার ও ঠাকুরদাসের কাছ থেকে উক্ত সম্পত্তি ক্রয় পূর্বক প্রায় ৫০ বছর ভোগ-দখল করে আসছে। যার যাবতীয় খাজনা দাখিলাসহ রেকর্ড রয়েছে। তবে সংসদ সদস্য এ্যাডঃ শেখ মোঃ নুরুল হক জানান, উক্ত সম্পত্তি দীর্ঘদিন ধরে আজিজ গোলদার জবর-দখল করায় জমির প্রকৃত মালিক অজিত হালদার ও ঠাকুরদাসের কাছ থেকে তার পুত্র মনিরুল ইসলামের নামে ৯ ডিসেম্বর’২০১৫ তারিখের ৩৪৬৬ নং দলিল মূলে পাওয়ার অব এ্যাটর্ণী করে দেয়। আজিজ পরিবারের কোন সম্পত্তি নেয়া হয়নি। এদিকে পাইকগাছা থানা সূত্রে জানা যায়, ১৭ মে’২০১২ তারিখের গেজেটে ২৩০১ নং খতিয়ানে সরল মৌজায় ২৩, ১৯ ও ২২ দাগে অমূল্য সরকারের ৫০ শতক সম্পত্তি ১/১ খতিয়ানে সরকারের অনুকূলে রেকর্ডভূক্ত হয়। এ সম্পত্তি কিভাবে পাওয়ার অব এ্যাটর্ণী হলো তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। সম্প্রতি এ বিষয়টি বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচার ও প্রকাশ পাওয়ায় ঘটনাটি চাঙ্গা হয়ে উঠেছে। সর্বশেষ রবিবার সরকারের উচ্চ মহলের নির্দেশে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে এমপিপুত্রের প্রাচীর বুলড্রেজার দিয়ে গুড়িয়ে আজিজ পরিবারকে এক বছরের অধিককাল পর মুক্ত করে দিয়েছে। বর্তমানে আজিজ পরিবারের লোকজন মামলা আতংকে রয়েছেন বলে তারা জানিয়েছেন। সরেজমিনে দেখা যায়, হাজার হাজার মানুষ প্রাচীর ভাঙ্গার দৃশ্য উপলব্ধি করছে এবং তাদের মধ্যে আনন্দ, উৎফুল্ল লক্ষ্য করা গেছে। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছে আজিজ পরিবারসহ পার্শ্ববর্তী লোকজন।
