ক্রাইমবার্তা রিপোট:বিয়ের বয়স নির্ধারণে পুরুষদেরও বিশেষ প্রেক্ষাপটে ছাড়ের বিধান রেখে ‘বাল্য বিবাহ নিরোধ বিল-২০১৭’ পাস হয়েছে। এই বিল পাসের ফলে নারীদের মতো পুরুষরাও বিশেষ প্রেক্ষাপটে ১৮ বছরের আগেই বিয়ে করার সুযোগ পাবেন।
সোমবার বিকালে জাতীয় সংসদের চতুর্দশ অধিবেশনে বিলটি পাসের প্রস্তাব উত্থাপন করেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ (চুমকী)। বিল পাসের পূর্বে জনমত যাচাই ও বাছাই কমিটিতে প্রেরণের প্রস্তাব দেয় সংসদ সদস্য ফখরুল ইমাম, সেলিম উদ্দিন, রওশন আরা মান্নান। তবে তাদের প্রস্তাব গ্রহণযোগ্য নয় বলে জানান প্রতিমন্ত্রী। এরপর স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বিলটি পাসের প্রস্তাব কণ্ঠভোটে দিলে তা সর্বাধিক ভোটে পাস হয়।
বিভিন্ন মহলের আপত্তির মধ্যেই গত ৮ ডিসেম্বর ‘বিশেষ প্রেক্ষাপটে’ মেয়েদের বিয়ের বয়সে ছাড়ের বিধান রেখে আলোচিত ‘বাল্য বিবাহ নিরোধ বিল-২০১৬’ সংসদে ওঠে। ব্রিটিশ আমলে প্রণীত ‘চাইল্ড ম্যারেজ রেসট্রেইন্ট অ্যাক্ট-১৯২৯’ বাতিল করে নতুন আইন করতে বিলটি সংসদে তোলা হয়।
পাস হওয়া বিলে বলা হয়েছে, এই আইনের অন্যান্য বিধানে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, কোনো বিশেষ প্রেক্ষাপটে অপ্রাপ্ত বয়স্ক সর্বোত্তম স্বার্থে আদালতের নির্দেশনাক্রমে এবং মাতা-পিতার সম্মতিক্রমে বিধি দ্বারা নির্ধারিত প্রক্রিয়া অনুসরণক্রমে বিবাহ সম্পাদিত হইলে উহা এই আইনের অধীন অপরাধ বলিয়া গণ্য হইবে না। যা আগে অপ্রাপ্ত বয়স্কের ক্ষেত্রে শুধু নারীদের কথা উল্লেখ ছিল। এছাড়া ‘বিশেষ প্রেক্ষাপট’ বিধি দ্বারা নির্ধারিত রাখা হয়েছে।
প্রস্তাবিত আইনে মেয়েদের বিয়ের নূনতম বয়স আগের মতো ১৮ বছর রাখা হলেও ‘বিশেষ প্রেক্ষাপটে’ অপ্রাপ্ত বয়স্কদের বিয়ের সুযোগ রাখা হয়। এতে ক্ষেত্র বিশেষে ১৮ বছরের আগেও বিয়ে দেওয়া যেতে পারবে।
পাস হওয়া বিলে বলা হয়েছে, কোনো প্রাপ্তবয়স্ক নারী বা পুরুষ বাল্য বিয়ে করলে তাকে অনধিক দুই বছর কারাদণ্ড বা অনধিক এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। অনাদায়ে আরও তিন মাস কারাদণ্ড হবে। আর অপ্রাপ্ত বয়স্ক নারী বা পুরুষ বাল্যবিবাহ করলে তারা এক মাসের কারাদণ্ড এবং ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন। সংসদে উত্থাপিত বিলে বাল্য বিয়ে পরিচালনা বা সম্পাদনের ক্ষেত্রে আগের চেয়ে শাস্তির মাত্রা বাড়ানো হয়। বাল্য বিয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বাবা-মাসহ অন্যদের সর্বোচ্চ দুই বছর থেকে সর্বনিম্ন ছয় মাসের কারাদণ্ড বা ৫০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। আগের আইনে একমাসের কারাদণ্ড এবং এক হাজার টাকা জরিমানার বিধান ছিল।
বিলে বলা হয়েছে, বাল্য বিয়ের জন্য উদ্যোগী অভিযুক্ত কোনো ব্যক্তি আদালতের নির্ধারিত ফরমে যদি মুচলেকা দেয় যে, সে তার এলাকায় বাল্য বিয়ে বন্ধে উদ্যোগী হবেন এবং নিজে ভবিষ্যতে এ কাজে সম্পৃক্ত হবেন না তবে তাকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়া যাবে। এই আইনের অধীন আরোপিত জরিমানা থেকে ক্ষতিগ্রস্থ পক্ষকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।
বিলে আরো বলা হয়েছে, এই আইনের অধীন সংঘটিত অপরাধ আমলযোগ্য, জামিনযোগ্য এবং আপসযোগ্য হবে। এ আইনের অধীনে বিচার হবে সংক্ষিপ্ত পদ্ধতিতে।