যৌতুকের নির্যাতনের শিকার নওগাঁর হাবিবা ৩ মাস হাসপাতালের শয্যায় মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে

ক্রাইমবার্তা রিপোট:নওগাঁ প্রতিনিধিঃ যৌতুকের নির্যাতনের শিকার নওগাঁর মোছাঃ হাবিবা খাতুন হানি (১৫) বর্তমানে নওগাঁ সদর আধুনিক হাসপাতালের শয্যায় (৫নং কেবিন) মৃত্যুর প্রহর গুনছে। দীর্ঘ প্রায় ৩ মাস সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছে। 23এমতাবস্থায় হানিবার বাবা বাদী হয়ে থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা করলে পুলিশ হানির স্বামী অভি ও ছেলের বাবা সামছুজোহা বিদ্যুৎকে  গ্রেফতার করে জেলা হাজতে পাঠালেও মুল আসামী ছেলের মা বেবীকে এখনো ফ্রেফতার করতে পারেনি।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, নওগাঁ সদরের হাট-নওগাঁর বাসিন্দা হাফিজুর রহমানের ২য় মেধাবী ও সুন্দরী মেয়ে এসএসসি পরীক্ষার্থী মোছাঃ হাবিবা খাতুন হানি একই মহল্লার সামছুজোহা বিদ্যুতের ছেলে এইচএসসি পড়–য়া অভির সঙ্গে গোপনে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। প্রায় ৬মাস পূর্বে সম্পর্কের এক পর্যায়ে অভি হানিকে বিদ্যালয় থেকে ফেরার পথে গোপনে তুলে নিয়ে গিয়ে মায়ের সহযোগিতায় বিয়ে করে। বিয়ের ৩মাস পর থেকে ছেলে ও ছেলের পরিবার হানির উপড় যৌতুকের দাবী করে বিভিন্ন রকমের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন শুরু করে। নির্যাতনের এক পর্যায়ে হানি গুরুতর অসুস্থ্য হয়ে পড়লে অভির পরিবার তাকে প্রথমে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গোপনে ভর্তি করে। হানির শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের ফলে ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে।  হানির এমন অবস্থার কথা তার পরিবার জানতে পারলে তাকে সেখান থেকে উদ্ধার করে নওগাঁ সদর হাসপাতালে  গত ৩০ নভেম্বর মাসে ভর্তি করে চিকিৎসা শুরু করেন। কিন্তু ৩মাসেও হানির তেমন কোন উন্নতি হয়নি। হানির নাকের ভিতর দেওয়া প্লাষ্টিকের পাইপের মাধ্যমে শুধু তরল জাতীয় খাবার সামান্য পরিমাণ গ্রহণ করতে পারছে। অবিরত হানির মুখ দিয়ে ফেনা উঠছে। হানির পরিবার সাধ্য মতো চেষ্টা কওে যাচ্ছে মেয়েকে সুস্থ্য কওে তোলার জন্য। হানিকে রাতদিন তার পরিবার ছাঁয়ার মতো ঘিওে রেখেছে। অভির পরিবারের উদাসীনতার কারণে হানির আজ এই অবস্থা বলে হানির পরিবারের অভিযোগ। তার এখন উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন বলে চিকিৎসকরা জানান। হানি মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে। তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ হানির পরিবার কোথায় পাবে?
হানির বড় ভাই সামিউর রহমান জানান, হানির অবস্থা এখন খুবই খারাপ। তার বুকের মাঝে হরহর শব্দ হচ্ছে। হানি এবং অভির বিয়ের ঘটনাকে আমরা অনেক বার বসে সমাধান করতে চাইলেও অভির পরিবার তা বার বার ফিরিয়ে দিয়েছে। আজ তারা ইচ্ছে করেই আমার বোনকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছে। হানির এমন অবস্থা যারা করেছে তাদের কঠোর শাস্তি হওয়া প্রয়োজন। অভির পরিবার প্রভাবশালী বলে আমরা তেমন কোন কিছু করতে পারছি না। আজ পর্যন্ত তারা হানির চিকিৎসার জন্য কোন প্রকার সহযোগিতাও করছে না। যৌতুক লোভী এই পরিবারের দৃষ্টারমূলক শাস্তি চাই।
হানির মা সফুরা আক্তার জানান, তারা মেয়েকে শূন্য হাতে নিয়ে গিয়ে ছেলের সঙ্গে বিয়ে দিয়েছে। তখন কিছু না পাওয়ায় যৌতুকের কারণে আমার মেয়ের উপড় নির্যাতন করে আসছে দীর্ঘদিন যাবত। আজ আমার মেয়ে মৃত্যুর প্রহর গুনছে। আমরা মধ্যবিত্ত পরিবারের মানুষ। এখন আমার মেয়ের উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন। উন্নত চিকিৎসার জন্য অনেক অর্থের প্রয়োজন। এই অর্থ আমরা কোথায় থেকে সংগ্রহ করবো। আমি এই পরিবারের দৃষ্টান্তর মূলক শাস্তি চাই।
নওগাঁ সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডাঃ মুনির আলী আকন্দ জানান, হানির অবস্থা যে কোন সময় খারাপ হতে পারে। তাকে অতি দ্রুত একজন নিউরোলিষ্টকে দেখাতে হবে। তাই তার এখন উন্নত মানের চিকিৎসার প্রয়োজন।
নওগাঁ সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ তোরিকুল ইসলাম জানান, আমরা মামলার প্রেক্ষিতে ছেলে ও ছেলের বাবাকে গ্রেফতার করে আদালতে সোর্পদ করেছি। ছেলের মাকে গ্রেফতার করার জোর চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

Check Also

কুমিল্লা ও ফরিদপুরকে বিভাগ করার সুপারিশ দেবে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন

কুমিল্লা ও ফরিদপুরকে বিভাগ করার সুপারিশ করতে যাচ্ছে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন। মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) সচিবালয় …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।