ক্রাইমবার্তা রিপোট:সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ টি এম শামসুল হুদা বলেছেন, গত নির্বাচন কমিশনের কার্যক্রমে জনমনে কমিশনের প্রতি আস্থা কমে গেছে। তাই বর্তমান কমিশনের কর্মকর্তাদের আচার, আচরণ ও কথাবার্তা এমন হতে হবে, যেন সবাই মনে করে তারা কোনো নির্দিষ্ট দলের হয়ে কাজ করবেন না।
আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) আয়োজিত ‘নতুন নির্বাচন কমিশনের সামনে চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক এক গোলটেবিল আলোচনায় তিনি একথা বলেন।
শামসুল হুদা বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনা করতে হবে, যে তারা নির্বাচনের সময় কেমন পরিবেশ চান। এছাড়া ইভিএম তৈরি করতে এমন লোকদের দায়িত্ব দিতে হবে, যেন তাদের ওপর সবার আস্থা থাকে। যাকে তাকে দিয়ে এটা করা ঠিক হবে না। নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করতে হলে কমিশনে বিসিএস ক্যাডারের মাধ্যমে অফিসার নিয়োগ ব্যবস্থা চালু করতে হবে। কারণ নির্বাচনের সময়ে অন্য কোনো মন্ত্রণালয় থেকে নিয়োগ দেয়া অফিসারদের ওপর কমিশনের তেমন নিয়ন্ত্রণ থাকে না। ফলে সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাবে।
সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব) সাখাওয়াত হোসেন বলেন, জনগণের বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জনই নতুন কমিশনের বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ মনুষের মনে আশঙ্কা আমার ভোট আমি দিতে পারবো কি-না। এছাড়া আগামী সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু করাও বড় চ্যালেঞ্জ। সংবিধানের পরিবর্তন আসবে বলে মনে হয় না। তাই এমন ক্ষেত্রে বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন, রাজনৈতিক দলের সাথে আলোচনা করে ‘কোড অব কন্ডাক্ট’ সংশোধন করা যায় কিনা এটাও কমিশনকে ভাবতে হবে।
সুজনের নির্বাহী সদস্য আলী ইমাম মজুমদার বলেন, স্টেক হোল্ডারদের মতামত নিয়ে ই-ভোটিংয়ের ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে বর্তমান কমিশনকে। ছোট-ছোট নির্বাচন করে তারা প্রমাণ করবে, যে তারা সৎ, দক্ষ, যোগ্য এবং দেশপ্রেমিক। যাতে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তাদের প্রতি মানুষের আস্থা থাকে।
বিশিষ্ট কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, নতুন নির্বাচন কমিশনের সামনে বিরাট চ্যালেঞ্জ। নির্বাচনে সব দলের জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করা কমিশনের দায়িত্ব। নৈতিক বলপ্রয়োগ ছাড়া শুধু প্রশাসনিক দক্ষতা দিয়ে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করা সম্ভব নয়।
তিনি বলেন, এই নির্বাচন কমিশনের সামনে দু’টি বিকল্প আছে। একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন দিয়ে প্রশংসিত হওয়া। দ্বিতীয়টি হলো- অগ্রহণযোগ্য নির্বাচন দিয়ে ইতিহাসে নিন্দনীয় হওয়া। একুশ শতকে বাঙালি জাতি নিন্দনীয় হওয়াও অপছন্দ করে না। নতুন কমিশন কেবল দায়িত্ব নিলো, কাজেই এখনই তাদের নিয়ে কিছু বলা ঠিক হবে না।
সাবেক বিচারপতি আব্দুল মতিন বলেন, নির্বাচনে জনগণের অভিমতের প্রতিফলন যেন ঘটে, কমিশনকে সেই ব্যবস্থা করতে হবে। নির্বাচনকে সুষ্ঠু করার জন্য সব ধরনের ক্ষমতা কমিশনকে দেয়া আছে। এখন কমিশন সেগুলো তারা ব্যবহার করবেন কিনা, সেটা তাদের বিষয়।
মূল প্রবন্ধে সুজনের সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার নতুন কমিশনের সামনে ১৯টি চ্যালেঞ্জ তুলে ধরেন। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- কমিশনারের সংখ্যা, কমিশনের স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতা অক্ষুণ্ন রাখা, প্রেষণে কর্মকর্তা নিয়োগ, সংস্কার কার্যক্রম অব্যাহত রাখা, আইনি কাঠামোতে পরিবর্তন আনা, আইনের প্রয়োগ, ভোটার তালিকা তৈরি, সীমানা পুননির্ধারণ করা, মনোনয়নের ক্ষেত্রে ‘উড়ে এসে জুড়ে বসার’ সমস্যা দূর করা, সহিংসতা রোধ, আচরণবিধি মেনে চলা নিশ্চিত করা ইত্যাদি।
বদিউল আলম মজুমদার বলেন, গত কমিশনের ব্যর্থতা নির্বাচনী ব্যবস্থাকে খাদে ফেলে দিয়েছে এবং নির্বাচনী ব্যবস্থার ওপর জন-অনাস্থা তৈরি হয়েছে। নতুন কমিশন বিতর্কমুক্ত গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে সক্ষম হবে বলে তিনি আশা করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আসিফ নজরুল বলেন, কমিশনের যোগ্যতা ও সদিচ্ছা থাকলেও তা প্রয়োগের পরিবেশ আছে কি না, সেটি দেখতে হবে। নির্বাচনকালীন একটি সহায়ক সরকারব্যবস্থা না থাকলে নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়।
সুজনের সভাপতি এম হাফিজ উদ্দিন খানের সভাপতিত্বে গোলটেবিলে আরও বক্তব্যে রাখেন- সুজনের সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার, নির্বাহী সদস্য বিচারপতি আব্দুল মতিন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর প্রমুখ।