ক্রাইমবার্তা রিপোট:রাণীশংকৈল (ঠাকুরগাও) প্রতিনিধি ঃ ঠাকুরগাওয়েররাণীশংকৈল’র বদ্ধভূমি খুনিয়াদিঘির পবিত্রতা দুস্কৃতিদের হাতে নষ্ট হচ্ছে। মনের খোরাক মিটাতে গিয়ে ১৯৭১ সালে পাক হানাদার বাহিনীর মির্মতায় প্রাণ হরানো হাজারো বাঙালীর কথা।
এই বদ্ধভূমির পবিত্রতা রক্ষা করার জন্য স্মৃতিসৌধ নির্মান করা হয়েছে। সীমানা প্রাচীর করা হয়েছে স্মৃতিসৌধের চতুর্দিকে। প্রাচীরের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে লোহার পাতি বসানো হয়েছে। কিন্তু বিপথগামীরা কি কখনো ধর্মের কাহিনী শোনে। স্মৃতিসৌধের পাদদেশে মার্বেল পাথর দিয়ে কারুকার্য করা হয়েছে। সীমানা প্রাচীরের লোহার পাত আর পাদদেশের মার্বেল পাথরগুলো নিয়ে পালাচ্ছে। এসব মূল্যবান সম্পদ চুরি করে বিক্রীর টাকা দিয়ে বদ্ধভূমির উপর বসে মাদক সেবন করে। বদ্ধভূমির উপর পায়খানা প্রসাব করে। সুবিধাবাদিরা গরু জবাই করে রক্ত ময়লা আবর্জনা ফেলে খুনিয়াদিঘির পরিবেশ বিষন্ন করে তুলেছে।
খুনিয়াদিঘি ১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীকার আন্দোলনের সময় পাক শাসক গোষ্ঠি এলাকার হাজার হাজার নিরীহ নিঅপরাধ মানুষকে ধরে এনে নির্মমভাবে হত্যাযজ্ঞ চালাতো। বাঙ্গালীদের ধরে এনে তিন চারদিন ধরে থানায় অনাহারে রাখতো। তাদের উপর চালানো হত বর্বরতা। তিন চারদিন পর সন্ধ্যার সময় চোখ বেঁধে তাদের খুনিয়াদিঘির পাড়ে এনে নির্যাতন করার পর লাইন করে দাঁড় করিয়ে গুলি করে মেরে ফেলা হতো। এতে কেউ সাথে সাথে প্রাণ হারাতেন, আবার কেউ যন্ত্রণায় ছটপট করতেন। মৃত-জীবিত সবাইকে ব্যালট দিয়ে খুচিয়ে খুচিয়ে পুকুরের পানিতে ফেলে দিত। কোন কোন সময় এক সাথে তিন চারজনকে গর্তে ফেলে মাটি চাপা দিত। পাক বাহিনীর বর্বরতায় আকাশ বাতাস প্রকম্পিত হয়ে যেত। চারিদিকে হৃদয় বিদারক করুণ সুর ভেসে উঠতো। শকুন আর শিয়াল কুকুরের লাশ খাওয়ার ধুম পড়ে যেত। কয়েক বছর ধরে বাঙালীর রক্তে পুকুরের পানি লাল হয়ে ছিল। মেশিনের সাহায্যে লাল পানি অন্যত্র করে স্বাভাবিক পানি ভর্তি করা হলে পানির রঙ স্বাভাবিক হয়।
বাঙালী জাতির জন্য যারা অকাতরে বিলিয়ে গেল প্রাণ। ছেলে মেয়ে মা বাবা ভাই বোনের মায়া মমতা ভুলে গিয়ে জীবন বিষর্জন করে গেছেন। বিশ্বের দরবারে জাতিকে উচ্চ শিখরে পৌঁছার গৌরব অর্জন করিয়েছেন। জাতির কাছে তাদের কি পাওনা এতটুকু। তাদের লাশের উপর বিপথগামীরা নেশার আসর বসাবে। স্মৃতিসৌধের আসবাব চুরি করে বিক্রীর টাকায় মাদক সেবন করবে। যারা চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন তাদের কবরের উপর পায়খানা প্রসাব করবে ! যোদ্ধা শহীদেরা কি এমনটি পাওয়ার আশায় জীবন দিয়েছেন। নিজ স্বার্থ বিলিয়ে যারা জাতির জন্য প্রাণ দিয়েছেন তাদের আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা জানায়। পবিত্র বদ্ধভূমির মর্যাদা অক্ষুন্ন রাখি।
কথা হয় এলাকার আইয়ুব আলীর সাথে তিনি বলেন, বদ্ধভূমির পবিত্রতা রক্ষা করার জন্য সরকারিভাবে যদি পদক্ষেপ নেওয়া হত তাহলে মাদক সেবীরা এখানে নোংরামি করতে পারতো না। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছি যত দ্রুত সম্ভব পবিত্রতা রক্ষার ব্যাপারে ব্যবস্থা নিবেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খন্দকার মোঃ নাহিদ হাসান বলেন, রাণীশংকৈলে বদ্ধভূমি খুনিয়দিঘিতে হাজারো বাঙালীর লাশ শুয়ে আছে। এখানকার পবিত্রতা রক্ষার বিষয়ে আমরা সজাগ আছি এব্যাপারে আরো প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা দ্রুত নেওয়া হচ্ছে।