ক্রাইমবার্তা স্পোর্টস ডেস্ক:অলৌকিক কিছুর অপেক্ষায় ছিল বার্সেলোনা–সমর্থকেরা। কিন্তু ফুটবলের সঙ্গে অলৌকিক যোগ কতটুকু! প্যারিসে ৪-০ গোলে হেরে যাওয়ার পর চ্যাম্পিয়নস লিগ থেকে বিদায় নেওয়ার মানসিক প্রস্তুতিটুকু সেরেই রেখেছিলেন তারা। কিন্তু কাল রাতে ন্যু ক্যাম্পে যা ঘটল, তার সঙ্গে কেবল তুলনা চলে রূপকথার গল্পেরই। অলৌকিক ঘটনাই ঘটিয়ে দিলেন বার্সা খেলোয়াড়েরা। ইউরোপ-সেরার এই লড়াইয়ের ইতিহাসের ঘুরে দাঁড়ানোর ‘শ্রেষ্ঠতম’ গল্পগাথা রচনা করে পিএসজিকে ৬-১ গোলে হারিয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগের শেষ আটে পৌঁছে গেছে তারা।
নেইমার বলছেন, এটি তাঁর জীবনের সেরা ম্যাচ। সেটা তিনি বলতেই পারেন। ম্যাচে বার্সেলানার দুটি গোল যে তাঁরই। বার্সেলোনার অলৌকিক প্রত্যাবর্তনের আসল কারিগরও। ৮৭ মিনিট পর্যন্ত বার্সা তিন গোলের শূন্যতায় ভুগছে। এই অবস্থায় ম্যাচ বদলে দিয়েছেন নেইমার। একা নেইমার!
৮৮ মিনিটে ফ্রি কিক থেকে গোল করলেন। গোল চাই আরও দুটি। যোগ করা সময়ের শুরুতে পেনাল্টি আবার গোল করলেন। আরও একটা গোল চাই? ৯৫ মিনিটে নেইমারের দুর্দান্ত ফ্রি কিকে নিখুঁত ফ্লিক করলেন সার্জি রবার্তো! মিলে গেল সমীকরণ!
সমীকরণ মেলানোর শুরুটা বার্সা অবশ্য শুরু থেকেই করেছিল। ৩ মিনিটের মাথায় লুইস সুয়ারেজের গোলে এগিয়ে যাওয়া। ইনিয়েস্তার ব্যাক হিল থেকে কুরজাওয়ার আত্মঘাতী গোল। ৪ গোলের অগ্রগামিতার অর্ধেকই পিএসজি হারিয়ে ফেলল প্রথমার্ধে। ৫০ মিনিটে লিওনেল মেসি স্কোরলাইন ৩-০ করলেন নেইমারের আদায় করা পেনাল্টি থেকে।
সমীকরণ তখন মাত্র একটা গোল হলেই বার্সায় সমতায় ফেরা। একটা মাত্র গোল! মুহূর্তে সব হিসাব বদলে গেল। ৬২ মিনিটে পিএসজি খেলায় ফেরে এডিসন কাভানির গোলে। হিরের মতো দামি অ্যাওয়ে গোল! সমীকরণটা বদলে গেল মুহূর্তেই! বার্সার তখন করতে হবে কমপক্ষে আরও তিন গোল! ৫-৫ গোল গড়ে খেলা শেষ হলেও যে প্রতিপক্ষের মাঠে গোলের সুবাদে জিতে যেত পিএসজিই। কোথায় ছিল এক গোলের চাহিদা, কোথায় তি-ন গোল! লড়াই করার শক্তিই–বা বার্সা কোথায় পাবে! মুহূর্তেই সব উৎসাহ যে দপ করে নিভে গেছে!
একজন, একজন তখনো হাল ছাড়েননি। প্রথম লেগের মতো ফিরতি লেগেও যিনি পুরো মাঠ চষে বেড়ালেন হরিণের চঞ্চলতা নিয়ে। নেইমার! ৮৮ মিনিট থেকে শুরু হলো নেইমার–কাব্য। সেটাই ৯৫ মিনিটে রূপ নিল বার্সার মহাকাব্যিক রূপকথায়!
নেইমার ম্যাচ শেষে কেঁদেই দিলেন। বললেন, ‘জানি আজ আমরা ইতিহাস গড়লাম। বার্সেলোনার মতো দল যেকোনো কিছুই করতে পারে। এটা আমার জীবনের সেরা ম্যাচ। সবদিক দিয়েই। এই ম্যাচটা আমাদের কাছে যা ছিল, এই ম্যাচে আমাদের অভিজ্ঞতা হলো—সবদিক দিয়েই এটি সেরা।’