ক্রাইমবার্তা রিপোট:বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ভারতের সাথে রাষ্ট্রবিরোধী প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষরিত হলে জনগণ তা সকল শক্তি দিয়ে প্রতিহত করবে। সেইসাথে বর্তমান সিইসি নির্বাচনের পরিবেশ তৈরিতে ব্যর্থ মন্তব্য করে তিনি বলেন, সামান্য কয়টা উপজেলা ও পৌর নির্বাচনে যেভাবে কেন্দ্র দখল করে ভোট ডাকাতি হয়েছে, যেভাবে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ভোট কেন্দ্রে যেতে বাধা ও মারধর করে বিএনপির এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়া হয়েছে তার উত্তর তিনি কি দেবেন? তিনি নির্বাচনের পরিবেশ তৈরিতে ব্যর্থ হওয়ায় মাত্র কয়েকটি স্থানীয় সরকার নির্বাচনের মতো নির্বাচনেও সর্বনিম্ন ভোটারদের উপস্থিতি ছিল। সুতরাং তিনি ব্যর্থতা দিয়েই যাত্রা শুরু করলেন। আসলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ হয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর আস্থা অর্জনের জন্য, জনগণের আস্থা অর্জনের জন্য নয়।
এছাড়া সাউথ চায়না মর্নিং পোষ্টের উদ্ধৃতি দিয়ে ভারতের বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত ভারতের সাথে প্রতিরক্ষার চুক্তির বিষয়ে যে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে তার প্রতি দেশবাসী উদ্বেগের সাথে দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়েছে বলে রিজভী মন্তব্য করেন।
আজ শুক্রবার সকালে নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে রিজভী এসব বলেন। এসময় বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা খায়রুল কবির খোকন, মাসুদ আহমেদ তালুকদার, সানাউল্লাহ মিয়া, তাইফুল ইসলাম টিপু, আমিনুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
লিখিত বক্তব্যে রুহুল কবির রিজভী বলেন, ভারত বাংলাদেশ সরকারকে প্রতিরক্ষা চুক্তির জন্য যে চাপ দিচ্ছে, তা বাংলাদেশের জন্য মোটেও সুসংবাদ নয়। এতে বাংলাদেশ সরকার কী ভূমিকা রাখবে এটিও খুব স্পষ্ট নয়। ভারত যেভাবে চাপ সৃষ্টি করতে চায় তা আমাদের জাতীয় নিরাপত্তার পরিপন্থি ও নিয়ম বহির্ভূত। বাংলাদেশের নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় ‘মেড ইন ইন্ডিয়া’ ছাপ মারতেই এই চুক্তির জন্য ভারত চাপ প্রয়োগ করছে বলে জনমনে ব্যাপক সন্দেহ দানা বেঁধেছে। সংবাদপত্রে এমন খবর প্রকাশিত হয়েছে যে, তিস্তা চুক্তির টোপ দিয়ে বাংলাদেশ-ভারত প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষর করে নেয়ার চেষ্টা চলছে। এধরনের চুক্তি হলে দেশের সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে পড়বে। শ্রীলঙ্কাও এধরণের চুক্তি করেছিল, যার পরিণতি হয়েছে ভয়ানক।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের সাথে ভারত যে প্রতিরক্ষা চুক্তির কথা বলছে তাতে বাংলাদেশের নাগরিকদের এখন খুবই উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। এটি বাংলাদেশের নাগরিকদের আশা-আকাঙ্খার প্রতিফফন তো নয়ই বরং গোটা জাতিকে গভীর হতাশা ও দুশ্চিন্তার মধ্যে ফেলেছে। যেখানে বাংলাদেশের সীমান্ত এখন সমাধানহীন সহিংসতার ছোবলে রক্তাক্ত, বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত পৃথিবীর সবচেয়ে রক্তরঞ্জিত সীমান্ত, যেখানে প্রতিদিন প্রতিনিয়ত বাংলাদেশী নাগরিকদের পাখির মতো গুলি করে হত্যা করা হয়, চলছে অবিরাম নরমেধ যজ্ঞ, ভারতের সাথে আমাদের অভিন্ন নদীর পানির আধা লিটারও ন্যায্য হিস্যা আমরা পায়নি, ভারতের পানি আগ্রাসনে বাংলাদেশের ১২ শ’ নদী এখন বিলিন হয়ে ধু ধু প্রান্তরে পরিণত হয়েছে, সেখানে ভারত বাংলাদেশের স্বার্থে প্রতিরক্ষা চুক্তি সম্পাদন করবে এটা মোটেও বিশ্বাসযোগ্য নয়।
রিজভী বলেন, আমাদের রাষ্ট্রব্যবস্থা যার ওপর দেশ ও জনগণের নিরাপত্তা ন্যস্ত তারাই যদি চুক্তির দিকে ধাবিত হয়, তাহলে তা হবে স্বাধীন দেশের জনগণের সাথে ভয়াবহ বিশ্বাসঘাতকতা। এধরনের রাষ্ট্রবিরোধী প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষরিত হলে জনগণ তা দেশের স্বার্থে সকল শক্তি দিয়ে প্রতিহত করবে। এদেশের জনগণ বাংলাদেশকে সিকিম বা করদমিত্র রাজ্যের স্ট্যাটাসে অবনমিত করতে দিবেনা।
বাংলাদেশে বিচারবর্হিভূত হত্যাকা- মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা প্রসঙ্গে বিএনপির এই নেতা বলেন, বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির কড়া সমালোচনা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বাংলাদেশে ২০১৬ সালে ঘটে যাওয়া ঘটনার ওপর ভিত্তি করে বার্ষিক মানবাধিকার প্রতিবেদনে বলেছে, বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড, খেয়ালখুশি মতো ও বেআইনী গ্রেপ্তার, গুম ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় নির্মমভাবে হস্তক্ষেপ, বাংলাদেশে মানবাধিকারের প্রধান অন্তরায়। তবে মানবাধিকারবিষয়ক গ্রুপগুলো বলছে, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, ঘুষ আদায়ের জন্য খেয়ালখুশি মতো গ্রেপ্তার, গুম, নির্যাতন ও মানবাধিকারের আরো লঙ্ঘন হচ্ছে। সুশীল সমাজের অধিকার ও রাজনৈতিক অধিকারকে সীমিত করছে সরকার।
কিন্তু হুমকিবাজ আওয়ামী নেতারা আলাদীনের প্রদীপের ম্যাজিকের মতো সবকিছু উড়িয়ে দিতে চায়, সবকিছু অস্বীকার করে। কারণ নিজেদের অনাচারকে ঢাকতে ওদের হুমকি ছাড়া বলার আর কিছুই নেই। মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের রিপোর্টে বাংলাদেশের মানবাধিকার বিষয় নিয়ে যে চিত্রটি ফুটে উঠেছে এটিই দেশের স্বাভাবিক চিত্র। গণতন্ত্র নেই বলেই সরকারের স্বেচ্ছাচারিতা এবং যখন যা খুশি করার নীতির ওপর তারা দেশ চালাচ্ছে। টার্গেট একটাই, যেনতেন প্রকারে ক্ষমতাকে আঁকড়ে রাখা, এটাই তাদের কমপালসারি সাবজেক্ট।
রিজভী বলেন, পুলিশ ভুয়া ওয়ারেন্ট নিয়ে নিরীহ লোককে আসামি বানিয়ে ধরতে যায়। পুলিশ মামলার সত্যাসত্য যাচাইয়ের চেয়ে আসামি গ্রেফতার করতেই এখন বেশি উৎসাহী। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে এতো বেশি আশকারা দেয়া হয়েছে যে, তারা এখন মানুষের পল্লীতেও আগুন লাগায়। আওয়ামী লীগের এই শাসনামলে নারকীয় হত্যাকান্ড, রক্তস্রোতে দেশের এখন ছিন্নভিন্ন অবস্থা। উল্লিখিত মানবাধিকার বিষয়ক স্টেটমেন্টটি বিএনপির স্টেটমেন্ট নয়, এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের স্টেটমেন্ট। হুমকি দিয়ে এই বাস্তবতাকে এড়িয়ে যাওয়া যাবেনা। আমি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি’র পক্ষ থেকে বিপন্ন মানবাধিকার পুণরুজ্জীবনের জন্য, হত্যা, রক্তপাত বন্ধ করতে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার জন্য দলমত নির্বিশেষে সকলকে দৃঢ়পদে এগিয়ে আাসার আহবান জানাচ্ছি।
তিনি বলেন, গতকাল যুবদলের কেন্দ্রীয় কর্মসূচী পালনকালে পিরোজপুর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলমগীর হোসেনকে পুলিশ হামলা চালিয়ে আহত করেছে। আমি পুলিশের এই ন্যাক্কারজনক হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আহত আলমগীর হোসেনের আশু সুস্থতা কামনা করছি।
Check Also
ভোমরা বন্দরে চার মাসে ৪০০ কোটি টাকা আয়
দক্ষিণবঙ্গ সাতক্ষীরার আধুনিক নিরাপদ ও পরিবেশ বান্ধব বাণিজ্যিককেন্দ্র ভোমরা স্থল বন্দর। আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও দারিদ্র্য …