বিএনপির মুখে ভারত বিরোধিতার কথা মানায় না : প্রধানমন্ত্রী

ক্রাইমবার্তা রিপোট:ভারত ইস্যুতে বিএনপি’র দ্বৈত-নীতির সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ২০০১ সালে পার্শ্ববর্তী দেশের কাছে দেশের সম্পদ বিক্রির মুচলেখা দিয়ে ক্ষমতায় এলেও তারা আজ ভারত বিরোধিতার কথা বলছেন। ভারত বিরোধীতার কথা বিএনপির মুখে মানায় না।
তিনি বলেন, ‘বিএনপি নেত্রী খালদা জিয়া’ই ভারতের কাছে গ্যাস বিক্রির মুচলেকা দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিল। তাদের মুখে ভারত বিরোধিতার কথা মানায় না।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে যুব মহিলা লীগের জাতীয় সম্মেলনে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের অনুষ্ঠানে কিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
আমি তো দেইনি বরং চেয়েছিলাম আমার দেশের সম্পদ আগে দেশের মানুষের কাজে লাগবে, ৫০ বছরের রিজার্ভ থাকবে। তারপর আমরা ভেবে দেখবো বিক্রি করবো কি করবো না।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এখন শুনি খুব ভারতবিরোধী কথা। আমার প্রশ্ন, ২০০১ সালের নির্বাচনে যখন আমেরিকান কোম্পানী আমাদের গ্যাস বিক্রি করতে চাইলো ভারতের কাছে, তখন এই গ্যাস বিক্রির মুচলেখা দিয়েছিল কে?’
শেখ হাসিনা বলেন, এখন ভারত বিরোধী কথা বললেও আমেরিকান অ্যাম্বেসির লোক, ‘র’-এর লোকেরা তো হাওয়া ভবনে বসেই থাকতো এবং সেই নির্বাচনটায় সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগকে হারাবে আর এখান থেকে গ্যাস নেবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তখন তিনি বলেছিলেন যে, তারা গ্যাস পাবে না, আল্লাহতায়ালাই গ্যাস দেবে না। বিক্রি তো দূরের কথা এবং তাই হয়েছে- গ্যাস পায়নি, দিতেও পারেনি।
‘কিন্তু মুচলেখা তো দিয়েছিল, আজকে তাদের মুখে এতো ভারত বিরোধী কথা!’ উল্লেখ করেন তিনি।
যুব মহিলা লীগের সভাপতি নাজমা আক্তারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সম্মেলনের উদ্বোধনী পর্বে বক্তৃতা করেন আওয়ামী লীগের নারী ও শিশু বিষয়ক সম্পাদক বেগম ফজিলাতুন নেছা ইন্দিরা, সাধারণ সম্পাদকের রিপোর্ট পেশ করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক অপু উকিল।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ’৯১ সালে বিএনপি যখন ক্ষমতায় আসে, ভারতে গিয়ে উনি (খালেদা জিয়া) বেশ ঘুরে টুরে আসলেন। যখনই এখানে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলো গঙ্গার পানির কি হলো ? উনি বললেন, গঙ্গার পানির কথা, ওহো ওটা বলতে তো তিনি ভুলেই গিয়েছিলেন।’
তিনি বলেন, ভারত বিরোধী কথা বললেন, এর আগে তিনি গঙ্গার পানি আদায়ের জন্য ফারাক্কা পর্যন্ত লং মার্চ, আন্দোলনও করেছিলেন, কিন্তু ভারতে গিয়ে তিনি গঙ্গার পানির কথা ভুলেই গেলেন!
আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রশ্ন তোলেন, ‘তাহলে দালালিটা করে কে?
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পরে আমরা কিন্তু গঙ্গার পানির ন্যায্য হিস্যা আদায় করেছি।
তিনি আরো বলেন, বঙ্গবন্ধু সীমানা চুক্তি এবং সমুদ্র চুক্তি করে যান, কিন্তু জিয়াউর রহমান, এরশাদ, খালেদা জিয়া- যারাই ওই সময় ক্ষমতায় ছিল তারা কখনও এসব চুক্তির কথা একবারের জন্য বলেনি, সাহসও পায়নি। দালালি এমনভাবে ছিল যে, এটা করবার জন্য সে কথা তারা উচ্চারণও করেনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৬৪ হাজার শরণার্থী আমাদের ভারতে ছিল পার্বত্য চট্টগ্রামের। আমি সরকারে এসে পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি করে সেসব শরণার্থীদের ফিরিয়ে এনেছি। বলা হয়েছিল, পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি হলে ফেনী থেকে পার্বত্য চট্টগ্রাম পর্যন্ত সব নাকি ভারত হয়ে যাবে। পার্বত্য শান্তি চুক্তিতেও তারা বাধা দিয়েছে ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা ভারতের কাছ থেকে কিছুই আদায় করতে পারেনি তারাই আবার ভারত বিরোধী কথা বলছে। আমি একটা কথাই বলব, এ সমস্ত খেলা তারা অনেক খেলেছে। তাদের কোন দেশপ্রেম নেই। ক্ষমতাটা তাদের কাছে ভোগের বস্তু। কারণ তারা যে যখনই ক্ষমতায় এসেছে, অর্থ সম্পদের মালিক হয়েছে। কিছু মুষ্টিমেয় লোককেও অর্থ সম্পদের মালিক করেছে এবং তাদের জোরে ক্ষমতায় থাকার চেষ্টা করেছে।
জিয়া থেকে শুরু করে সবাই এটাই করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী জিয়ার সম্পদ সম্পর্কে মিডিয়ায় অপপ্রচার প্রসঙ্গে বলেন,‘প্যারিস থেকে স্যুট আসতো (জিয়ার), জুতা আসতো। আর কোথা থেকে কোথা থেকে নানাকিছু আসতো। আর মরে যাবার পর প্রচার হলো কি জিয়া কিছুই রেখে যায়নি। কেবল ভাঙ্গা স্যুটকেস আর ছেঁড়াগেঞ্জি ছাড়া।
তিনি বলেন, জিয়া মারা যাবার পর ৪০ দিন দিনরাত বিটিভিতে এগুলো প্রচার করা হলো। দামী বেড কাভারেরও ওপরে ভাঙ্গা স্যুটকেস ও ছেঁড়া গেঞ্জি। বাকী আর বলতে চাইনা, যা যা ছিল। হাওয়া ভাবন, গাজীপুরের খোয়াব ভবন। মায়ের ভাগ ফালুর কাছে পুত্রের ভাগ মামুনের কাছে। এভাবে শুধু দুর্নীতিই করে গেছে দেশের কোন উন্নয়ন করেনি।
এর আগে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক উদ্বাধন করেন।
তিনি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এবং যুব মহিলা লীগ নেতৃবৃন্দকে সাথে নিয়ে জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করেন। এ সময় সমবেত কন্ঠে জাতীয় সংগীত পরিবেশিত হয়।
জাতীর পিতা বঙ্গবন্ধু, জাতীয় চারনেতা, মুক্তিযুদ্ধের শহীদ এবং গণআন্দোলনে আত্মহুতিদানকারী যুব মহিলা লীগ নেতা-কর্মীদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

Check Also

ক্ষমতায় গেলে নারীদের সম্মান ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে জামায়াত : ডা. শফিকুর রহমান

ক্ষমতায় গেলে নারীদের সম্মান ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে জামায়াত মন্তব্য করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।