ক্রাইমবার্তা রিপোট:চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) মেডিকেল সেন্টারে চিকিৎসা নিতে গিয়ে যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন এক ছাত্রী।
গণিত বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ওই ছাত্রীর যৌন হয়রানির প্রতিবাদে রোববার ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেছে শিক্ষার্থীরা।
সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে রোববার বেলা ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল থেকে ছাত্রীরা জড়ো হয়ে বিক্ষোভ মিছিল করে। এসময় তারা বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারের চিকিৎসক ডা. মোস্তফা কামালের অপসারনের দাবিতে স্লোগান দেয়।
পরে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় শহীদ মিনারে তারা মানববন্ধন করে। মানববন্ধনে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ ছাত্রীদের সঙ্গে একাত্মতা জানিয়ে ছাত্ররাও অংশগ্রহণ করে।
এ সময় ‘যৌন নিপীড়কের ঠাঁই নাই’, ‘নিপীড়কের আস্তানা, জ্বালিয়ে দাও, পুড়িয়ে দাও’ এ ধরনের প্ল্যাকার্ড হাতে বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নেয় ছাত্রীরা। তারা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে চার দফা দাবি জানান।
মানববন্ধনে ছাত্রীরা বলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নিপীড়কদের ঠাই হবে না। নিপীড়নকারী যত শক্তিশালীই হোক না কেন।
তারা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারে চিকিৎসকের পরিচয়ে থাকা ওই ডাক্তারকে কেন এখনো অপসারন করা হয়নি,এটা বোধগম্য হচ্ছে না।
ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী জাকারিয়া খন্দকার বাধনের সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী রাশেদ, সীমা, সজল, তাপস, সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী শাহাদাত, ইসলামিক ইতিহাস বিভাগের সালমা, প্রাণিবিদ্যা বিভাগের জান্নাতুল মাওয়া, রসায়ন বিভাগের ফজলে রাব্বি, নাট্যকলা বিভাগের আরাফাত তারা, ফলিত পদার্থের অমি, হিসাববিজ্ঞান বিভাগের সোহরাব হোসেন, লোকপ্রশাসন বিভাগের কামরুল হাসান। বক্তারা এই ডাক্তারের অপসারণ এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানের দাবি জানান।
তারা বলেন, যদি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দ্রুত মোস্তফা কামালের অপসারণ ও শাস্তির ব্যবস্থা না করেন, তাহলে বিশ্বিবিদ্যালয়ের সব শিক্ষার্থীদের নিয়ে প্রয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয় অচল করার কর্মসূচি দেয়া হবে।
সমাবেশে সমাপনী বক্তব্য রাখেন হিসাববিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান নোবেল। এ সময় শিক্ষার্থীরা চার দফা দাবি পেশ করেন। দাবিগুলো হল নিপীড়ক চিকিতসক মোস্তফা কামাল হোসেনের অপসারণ ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান, বিশ্ববিদ্যালয়কে যৌন নিপীড়নমুক্ত করে নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরনে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ, বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেলে সার্বক্ষণিক নারী চিকিৎসক নিয়োগ প্রদান এবং বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেলের আধুনিকায়ন।
প্রসঙ্গত, শুক্রবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রীতিলতা হলের এক ছাত্রী শারীরিকভাবে অসুস্থতা বোধ করায় বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারে যান। এসময় সেখানে দায়িত্বরত চিকিৎসক ডা. মোস্তফা কামালের শরণাপন্ন হলে তিনি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে ছাত্রীর ওপর যৌন নিপীড়ন চালান বলে অভিযোগ করেন ওই ছাত্রী।
তদন্ত কমিটি গঠন: এদিকে অভিযোগ পাওয়ার পর তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন প্রণীত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন নীতিমালা অনুসারে ‘যৌন হয়রানি’ ও নিপীড়ন নিরোধ কেন্দ্র পরিচালনা নামক এই কমিটি গঠন করে দেন ভিসি ড.ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী।
সাত সদস্যের ওই কমিটিতে প্রধান করা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোভিসি অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতারকে। এছাড়া ইউজিসির দুইজনসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের আরও চারজন নিয়ে এ কমিটি গঠন করা হয়।