ক্রাইমবার্তা রিপোট:ঢাকার সোনারগাঁও হোটেলে আয়োজিত পুলিশপ্রধানদের সম্মেলনে উপস্থিত অতিথিরা। ছবি : ফোকাস বাংলা
বর্তমানে বিশ্ব তিন ধরনের হুমকির সম্মুখীন। প্রথমত, বিদ্রোহী গোষ্ঠীর হুমকি, দ্বিতীয়ত সন্ত্রাসবাদীদের হুমকি, তৃতীয়ত ভাবাদার্শগত উগ্রপন্থীদের হুমকি।
আজ রোববার সকালে ঢাকার সোনারগাঁও হোটেলে আয়োজিত পুলিশপ্রধানদের সম্মেলনে এক প্রবন্ধ উপস্থাপনের সময় সিঙ্গাপুরের নানইয়াং টেকনোলজিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. রোহান গুনারত্নে এসব কথা বলেন।
১৪টি সেশনে অন্যান্য দেশের প্রতিনিধিরা জঙ্গিবাদ দমন, মানবপাচার, অর্থনৈতিক অপরাধ ও সন্ত্রাসী অর্থায়ন, মাদকদ্রব্য পাচার রোধ ও অবৈধ অস্ত্র চোরাচালানসহ বিভিন্ন বিষয়ের ওপর প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন।
সম্মেলনের আজ দুটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হয়। একটি প্রবন্ধে অধ্যাপক ড. রোহান গুনারত্নে জানান, বর্তমানে সন্ত্রাসবাদীদের হুমকি বহুজাতিকভাবে দেখা যাচ্ছে। জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস) ও তার সহযোগী দলগুলো ইসলামী উগ্রপন্থী সন্ত্রাসবাদী গ্রুপের আদলে কাজ করছে। এর ফলে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগর এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম অপর একটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
প্রবন্ধে তিনি বাংলাদেশের জঙ্গিবাদ উত্থানের বিভিন্ন দিক ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সরকার তথা পুলিশ বাহিনীর অবস্থানের কথা তুলে ধরেন।
প্রবন্ধে মনিরুল জানান, বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের উত্থানকে দুটি ভাগে ভাগ করা যায়। প্রথমত, বাংলাদেশের স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে উগ্রপন্থী অর্থাৎ বামপন্থীদের উত্থান এবং দ্বিতীয়ত, সমসাময়িক বিপথগামী ধর্মীয় উগ্রপন্থীদের সৃষ্ট জঙ্গিবাদ।
২০১৩ সালে ব্লগার হত্যা থেকে ২০১৬ সালে রাজধানীর গুলশানে অবস্থিত স্প্যানিশ রেস্তোরাঁ হলি আর্টিজানে হামলাকে ধর্মীয় উগ্রপন্থীদের দ্বারা সৃষ্ট জঙ্গিবাদের উত্থান বলে উল্লেখ করেন মনিরুল। এই জঙ্গিবাদ দমনে বাংলাদেশ পুলিশ ও নবগঠিত সিটিটিসি ইউনিট কার্যকর ভূমিকা পালন করছে বলে জানান তিনি।
অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের সঙ্গে এক ব্রিফিংয়ে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক জানান, বিশ্বের ১৪টি দেশের পুলিশপ্রধানরা উপস্থিত হয়েছেন। এই অনুষ্ঠানের মূল উদ্দেশ্য জঙ্গি ও সন্ত্রাস দমনে আঞ্চলিক সহযোগিতা বাড়ানো। জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস এবং আন্তদেশীয় অপরাধ দমনের বিভিন্ন অভিজ্ঞতা এই সম্মেলনে আদান-প্রদান করা হবে। এ ছাড়া বিভিন্ন দেশের মধ্যকার অপরাধের ধরনগুলো এবং তার প্রতিকার সম্পর্কে তথ্য আদান-প্রদান করা হবে। এই সম্মেলন শেষে ১৪ মার্চ জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস দমনসহ আন্তদেশীয় অপরাধ দমনে ‘যৌথ ঘোষণা’ স্বাক্ষর করা হবে।
বাংলাদেশ ছাড়া আফগানিস্তান, অস্ট্রেলিয়া, ভুটান, ব্রুনাই, চীন, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, মালদ্বীপ, মিয়ানমার, নেপাল, দক্ষিণ কোরিয়া, শ্রীলঙ্কা, ভিয়েতনামের পুলিশপ্রধান এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা এই সম্মেলনে অংশ নিয়েছেন।
এ ছাড়া ইন্টারপোল, যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরো (এফবিআই), সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের পুলিশপ্রধান ছাড়াও আফগানিস্তানের সিনিয়র ডেপুটি মিনিস্টার ফর সিকিউরিটি আবদুর রহমান, মালয়েশিয়ার ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ খালিদ আবু বকর, মিয়ানমার পুলিশের ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাইও সি উইন এবং শ্রীলঙ্কার ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ পুজিৎ সেনাদি জয়াসুন্দারাসহ মোট ৫৮ জন বিদেশি অতিথি সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন।
আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোল ও বাংলাদেশ পুলিশের যৌথ উদ্যোগে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে এ সম্মেলন আয়োজন করা হয়েছে। সম্মেলন চলবে ১৪ মার্চ পর্যন্ত।