আশরাফুলের রেকর্ডগড়া শতক
২০০১ সালে টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার এক বছর পুরতে না পুরতেই বাংলাদেশের নাম উঠেছিল রেকর্ডবুকে। শ্রীলঙ্কা সফরে গিয়ে অসাধারণ এক শতক করে ক্রিকেটবিশ্বে আলোড়ন তুলেছিলেন ১৭ বছর বয়সী এক কিশোর। মোহাম্মদ আশরাফুল। সে সময় তিনি ভেঙে দিয়েছিলেন দীর্ঘদিন ধরে টিকে থাকা এক রেকর্ড। সবচেয়ে কম বয়সে টেস্ট শতকের কীর্তিতে আশরাফুল পেছনে ফেলেছিলেন পাকিস্তানের কিংবদন্তি মুশতাক মোহাম্মদকে।
১৯৬১ সালে ভারতের বিপক্ষে মুশতাক শতক করেছিলেন ১৭ বছর ৭৮ দিন বয়সে। আর ২০০১ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে শতক করার সময় আশরাফুলের বয়স ছিল ১৭ বছর ৬৮ দিন। আধুনিক ক্রিকেটে এত কম বয়সে অভিষেকের ঘটনা খুব কমই দেখা যায়। তাই আশরাফুলের এই রেকর্ড আদৌ ভাঙবে কি না, সেই প্রশ্ন তোলাই যায়।
সোহাগ গাজীর অলরাউন্ড নৈপুণ্য
২০১৩ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ক্রিকেটবিশ্বকে নতুন এক রেকর্ডের সঙ্গেই পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন সোহাগ গাজী। একই ম্যাচে করেছিলেন হ্যাটট্রিক ও শতক। এমন ঘটনা আগে কখনোই দেখেননি ক্রিকেটপ্রেমীরা।
মূলত ডানহাতি অফস্পিনার হিসেবেই দলে জায়গা করে নিয়েছিলেন সোহাগ গাজী। কিন্তু ব্যাটিংটাও যে ভালোই পারেন, সেটাও দারুণভাবে প্রমাণ করেছিলেন নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজের প্রথম ম্যাচে। আট নম্বরে ব্যাট করতে নেমে খেলেছিলেন ১০১ রানের অপরাজিত ইনিংস। এরপর জাদু দেখিয়েছিলেন বল হাতে। টানা তিন বলে ফিরিয়েছিলেন কোরি অ্যান্ডারসন, বিজে ওয়াটলিং ও ডোগ ব্রেসওয়েলকে।
টানা তিন বলে তিন উইকেট নিয়ে হ্যাটট্রিক করাটা এমনিতেই খুব দুরূহ কাজ। খুব কমই দেখা যায় এমন কীর্তি। সেটার পর আবার শতক! সত্যিই ভবিষ্যতে কেউ সোহাগ গাজীর পাশে নাম লেখাতে পারবেন কি না, তা নিয়ে তাই সংশয় থেকেই যায়।
আবুল হাসানের ব্যাটিং চমক
বোলার হিসেবে দলে ঢুকেছেন, অথচ সাড়া জাগিয়েছেন ব্যাট হাতে—এমন কীর্তিতে সোহাগ গাজী একা নন। ২০১২ সালে ডানহাতি পেসার আবুল হাসানের টেস্ট অভিষেকটা হয়েছিল স্বপ্নের মতো। খুলনায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ১০ নম্বরে ব্যাট করতে নেমে তিনি খেলেছিলেন ১১৩ রানের দুর্দান্ত ইনিংস।
অভিষেক টেস্টে ১০ নম্বরে ব্যাট করতে নেমে শতক করার ঘটনা ক্রিকেটবিশ্ব দেখেছিল মাত্র একবার। ১৯০২ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১০২ রান করেছিলেন অস্ট্রেলিয়ার রেজি ডাফ। তবে অভিষেকে ১০ নম্বর ব্যাটসম্যান হিসেবে সবচেয়ে বেশি রানের ইনিংস খেলার রেকর্ডটি এখনো আছে আবুল হাসানের দখলে।
ইলিয়াস সানি-মুস্তাফিজের অভিষেক চমক
অভিষেকে চমক দেখানোটা খুবই পছন্দ বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের। আবুল হাসানের মতো সাড়াজাগানো অভিষেক হয়েছিল বাংলাদেশের আরো দুই ক্রিকেটারের। ইলিয়াস সানি ও মুস্তাফিজুর রহমান। ক্রিকেটবিশ্বের প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে অভিষেকে দুই ফরম্যাটে ম্যাচসেরার পুরস্কার জিতেছিলেন ইলিয়াস সানি। ২০১১ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টেস্ট অভিষেকে ম্যাচসেরা নির্বাচিত হয়েছিলেন এই বাঁহাতি স্পিনার। এক বছর পর আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি অভিষেকেও হয়েছিলেন ম্যান অব দ্য ম্যাচ।
এই কীর্তিতে ইলিয়াস সানিকে একা থাকতে দেননি মুস্তাফিজুর রহমান। বাঁহাতি এই পেসারও দুই ফরম্যাটের অভিষেকে জিতেছেন ম্যাচসেরার পুরস্কার। ২০১৫ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টেস্টে ও ভারতের বিপক্ষে ওয়ানডেতে।
মিরাজের অবিস্মরণীয় অভিষেক
অভিষেকে চমক দেখানোর তালিকাটা আরো দীর্ঘ করেছেন মেহেদী হাসান মিরাজ। ২০১৬ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দুর্দান্ত বোলিং করে নজর কেড়েছিলেন এই ডানহাতি অলরাউন্ডার। দুই ম্যাচের অভিষেক টেস্ট সিরিজে নিয়েছিলেন ১৯টি উইকেট। ভেঙে দিয়েছিলেন ১২৯ বছরের পুরোনো রেকর্ড।
মিরাজের আগে দুই ম্যাচের অভিষেক টেস্ট সিরিজে সবচেয়ে বেশি, ১৮টি উইকেট নেওয়ার কীর্তিটা দীর্ঘদিন ধরে ছিল অস্ট্রেলিয়ার জেমস ফেরিসের দখলে। ১৮৮৭ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দুই ম্যাচে নয়টি করে উইকেট নিয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়ার এই বাঁহাতি বোলার।