ক্রাইমবার্তা ডেস্ক রিপোট: রাখাইন রাজ্যে নির্যাতনের শিকার হয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে যাওয়া রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার জন্য মিয়ানমার সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে কফি আনান কমিশন। কমিশন রোহিঙ্গাদের জন্য রাখাইনে নিরাপদ পরিবেশ সৃষ্টির ওপর গুরুত্ব দিয়েছে। এছাড়া রাখাইন রাজ্যের সংকট দূর করতে মিয়ানমার ও বাংলাদেশের মধ্যে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
জাতিসঙ্ঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনানের নেতৃত্বে গঠিত কমিশন আন্তবর্তী প্রতিবেদনে এ সব কথা বলেছে। রাখাইন সংকট নিরসনে প্রয়োজনীয় সুপারিশ প্রণয়নে মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় কাউন্সিলর অং সান সু চির উদ্যোগে এ কমিশন গঠন করা হয়। মাঠ পর্যায়ে সমস্যা দেখতে কমিশন গত অক্টোবর থেকে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে পরিচালিত নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানের আগে ও পরে দুই দফায় রাখাইন রাজ্য পরিদর্শন করেছে।
বৃহস্পতিবার প্রকাশিত অন্তবর্তী প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব, অবাধ চলাচল এবং মিয়ানমারের রাজনৈতিক অঙ্গনে মুসলিমদের প্রতিনিধিত্ব থাকা দরকার। এছাড়া আন্তঃদেশীয় সন্ত্রাস প্রতিরোধে মিয়ানমার ও বাংলাদেশের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা থাকা প্রয়োজন। দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক বৃদ্ধির জন্য দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে উচ্চ পর্যায়ের রাজনৈতিক নেতা ও নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে একটি যৌথ কমিশন গঠন করা উচিত। তাদের কাজ হবে সুষ্ঠু পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর বাংলাদেশে অবস্থিত রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছায় মিয়ানমারে ফিরে যেতে সহায়তা করা।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, রোহিঙ্গারা বাংলাদেশ থেকে ফিরে যাওয়ার পর তাদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করা এবং প্রয়োজন অনুযায়ী তাদের ধ্বংস হয়ে যাওয়া ঘরবাড়ি তৈরি করে দিতে হবে মিয়ানমার সরকারকে। মিয়ানমারের রাজনৈতিক অঙ্গনে মুসলিমদের প্রতিনিধিত্বের চরম ঘাটতি আছে। এ কারণে অনতিবিলম্বে মিয়ানমার সরকারের উচিত সবার সাথে আলোচনা করে এমন একটি ব্যবস্থা গড়ে তোলা যার মাধ্যমে দেশটির মুসলিমরা নিজেদের কথা বলতে পারে।
রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্বের বিষয়ে কফি আনান কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নাগরিকত্ব না থাকার কারণে তারা বৈষম্য ও অবিচারের শিকার হচ্চে। এছাড়া তাদের সুষ্ঠুভাবে জীবনযাপন বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। মিয়ানমার সরকারের উচিত সময়সীমা বেঁধে দিয়ে অনতিবিলম্বে নাগরিকত্ব সত্যায়ন প্রক্রিয়ার একটি কৌশল প্রণয়ন করা। তবে এ প্রক্রিয়া হতে হবে স্বচ্ছ ও দক্ষ। কৌশলটি বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারি রাখাইন ও মুসলিম রোহিঙ্গাদের সাথে আলোচনার মাধ্যমে সবার মাঝে প্রচার করতে হবে।
গত বছর সেপ্টেম্বরে গঠিত আনান কমিশন আগামী আগস্টে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দেবে।
গত বছরের ৯ অক্টোবর মিয়ানমারের দুটি সীমান্ত চৌকির ওপর দুর্বৃত্তদের হামলার পর রাখাইন রাজ্যে নিরাপত্তা বাহিনীর হামলায় শতাধিক রোহিঙ্গা নিহত হয়েছে। এছাড়া হাজার হাজার রোহিঙ্গা গৃহহারা ও ধর্ষনের শিকার হয়েছে। অমানবিক নির্যাতনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রায় ৭০ হাজার রোহিঙ্গা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে চলে এসেছে। এর আগে থেকেই ৩৩ হাজার নিবন্ধিত ও তিন লাখের বেশি অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অবস্থান করছিল।