জেসমিন বলেন, ‘সে (জনি) হারিয়ে যাওয়ার পর একটি কন্যা সন্তানের জন্ম হয়েছে। আমার সন্তানের বয়স মাত্র ৩৭ দিন। আমার স্বামী সন্তানের মুখ দেখতে পারেননি। এই বাচ্চার ভবিষ্যত কী হবে? তাকে নিয়ে আমি কোথায় দাঁড়াবো, সেটি ভাবতে কষ্ট হয়।’
তিনি আরও বলেন, গত বছরের ৪ আগস্ট রাত সাড়ে ৯টার দিকে সাতক্ষীরা শহরের নিউ মার্কেট এলাকা থেকে তার স্বামী জনিকে আটক করে এসআই হিমেল। ওই রাতে তাদের বাড়িতে তল্লাশি করে সদর থানা পুলিশ। এসময় পুলিশ তার স্বামীর ডাক্তারির কিছু কাগজপত্র নিয়ে যায়। এরপর ৫-৭ আগস্ট থানায় গিয়ে স্বামীর সঙ্গে দেখা করে এবং খাবার দিয়ে আসেন। ৮ আগস্ট থানায় গেলে আর স্বামীর দেখা পায়নি। তখন থানা থেকে জানানো হয়, জনি নামে থানায় কেউ নেই। বিষয়টি ২৪ আগস্ট পুলিশ সুপারকে জানানো হলেও এ বিষয়ে কোনও উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
জেসমিন বলেন, ‘পুলিশ সুপার কোনও খোঁজ না দেওয়ায় ২৬ ডিসেম্বর থানায় সাধারণ ডায়েরি করতে যাই। তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এমদাদ শেখ (বর্তমানে সাতক্ষীরা কলারোয়া থানায় কর্মরত) জিডি নিতে অস্বীকৃতি জানায়। এ সময় ওসি আমাকে ডেকে মোটা অংকের টাকা দাবি করে বলেন, টাকা দিলে স্বামীকে পাবে না হলে আর কোনোদিন তাকে খুঁজে পাবে না।’চলতি বছর ৩ জানুয়ারি তিনি সংবাদ সম্মেলনও করেছিলেন।
জনির মা আনোয়ারা খাতুন বলেন, ‘আমার ছেলে কোনও রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত না। কলারোয়ার লাঙ্গলঝাড়া বাজারে প্রগতি হেলথ কেয়ার নামে হোমিওপ্যাথির চেম্বার ছিল তার। বিনা দোষে আমার ছেলেকে থানায় আটক রাখা হয়েছে। এখন সে কোথায় আছে তা আমরা জানি না। পুলিশ তাকে লুকিয়ে রাখবে কেন? সে যদি দোষী তাহলে তাকে আদালতে সোপর্দ করা হচ্ছে না কেন?’
এ বিষয়ে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফিরোজ হোসেন মোল্ল্যা বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই।’
সাতক্ষীরার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আরিফুল হক বলেন, ‘এ সম্পর্কে কোনও তথ্য আমার জানা নেই। তবে থানা মানুষের জন্য নিরাপদ স্থান। এখানে কোনও মানুষের হারিয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই।’
এদিকে রবিবার আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে নিখোঁজ জনিকে খুঁজে বের করার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। জেসমিন জাহানের রিট পিটিশনের পরিপ্রেক্ষিতে রবিবার এ আদেশ দেন আদালত। বিচারপতি রেজা-উল হক ও বিচারপতি মাহমুদ উল্লাহর বেঞ্চ এ নির্দেশ দেন।