ক্রাইমবার্তা আন্তর্জাতিক ডেস্ক :বিশ্বের সবচেয়ে সুখী দেশের তালিকায় এবার স্থান পেয়েছে শান্তির দেশ নরওয়ে। আর সবচেয়ে কম সুখী দেশ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র। আর দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে সুখী দেশে হিসেবে তালিকায় স্থান পেয়েছে পাকিস্তান। আজ ২০ মার্চ আন্তর্জাতিক সুখ দিবস উপলক্ষ্যে জাতিসংঘের সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট সলিউশনস নেটওয়ার্ক (এসডিএসএন) ওয়ার্ল্ড হ্যাপিনেস রিপোর্ট ২০১৭ প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনে ১৫৫টি সুখী দেশের ওই তালিকা প্রকাশ করা হয়। বিবিসি অনলাইন এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
সুখী দেশের তালিকার উপরের দিকে জায়গা করে নিয়েছে ইউরোপের শীত প্রধান দেশগুলো। আর নিচের দিকে স্থান পেয়েছে আফ্রিকা আর মধ্যপ্রচ্যের বিশৃঙ্খল দেশগুলো। এর মধ্যে অন্যতম সিরিয়া, ইয়েমেন, দক্ষিণ সুদান রয়েছে। সুখী দেশের তালিকায় দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর অবস্থান কোথায়? তা জানার কৌতুহল এ অঞ্চলের মানুষের বরাবরই থাকে। তালিকায় দেখা যায়, তুলনামূলকভাবে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সুখী দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে টপকে গেছে অস্থির রাজনীতির দেশ পাকিস্তান।
দক্ষিণ এশিয়ার আটটি দেশের মধ্যে পাকিস্তান ৮০তম স্থানে থেকে সবচেয়ে বেশি সুখী। এরপরেই ১১০তম স্থান নিয়ে দ্বিতীয় সুখী দেশ বাংলাদেশ। ১২২তম স্থান নিয়ে তৃতীয় ভারত। এছাড়া তালিকায় নেপালের অবস্থান ৯৯তম, মিয়ানমার ১১৪তম, শ্রীলঙ্কার অবস্থান ১২০তম। তবে, সবচেয়ে অসুখী হিসেবে চিহ্নত হয়েছে ১৪১তম স্থানে থাকা আফগানিস্তান। এই রিপোর্টের জন্য প্রতি বছর ১৫০টি দেশের প্রত্যেকটিতে ১ হাজারেরও বেশি মানুষকে একটি সোজা, আপেক্ষিক প্রশ্ন করা হয়। এবার ১৫৫টি দেশকে নিয়ে করা হয়েছে রিপোর্টটি।
প্রশ্নটি করা হয় এভাবে-‘একটি মই কল্পনা করুন, যার সিঁড়িগুলো শূন্য থেকে ১০ পর্যন্ত নম্বর দেয়া আছে,’ প্রশ্নটি জিজ্ঞেস করে। ‘মই-এর সব চেয়ে উঁচু সিঁড়িটা আপনার জন্য সব সম্ভাব্য সব চেয়ে সুখকর জীবন, আর মই-এর সব চেয়ে নিচের সিঁড়িটি আপনার জন্য সব চেয়ে খারাপ জীবন। আপনার মতে আপনি এই মুহূর্তে মই-এর কোন সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে আছেন?’
গড় ফলাফল হচ্ছে দেশটির স্কোর। এতে নরওয়ের জনগণ সবচেয়ে বেশি সুখে আছে বলে জরিপ পরিচালনাকারীদের জানায়। জাতিসংঘ দেখতে পায় নরওয়ে ৭.৪ থেকে সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকের স্কোর হচ্ছে ২.৬৯। রিপোর্টটি আর্থ-সামাজিক পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করেও দেখেছে একটি দেশ অন্য দেশের চেয়ে কেন বেশি সুখী। এই বিশ্লেষণে দেশের অর্থনৈতিক শক্তি (দেশজ সম্পদ) , সামাজিক নিরাপত্তা, গড় আয়ু, ব্যক্তি স্বাধীনতা, দুর্নীতি নিয়ে ধারনা বিষয়ে যাচাই করে তৈরি করা হয়েছে প্রতিবেদন।
জরিপকারী এসডিএসএনের পরিচালক ও জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ উপদেষ্টা জেফ্রে স্যাকস এক সাক্ষাৎকারে বলেন, যেসব দেশে সমৃদ্ধির মধ্যে ভারসাম্য আছে, অর্থাৎ যেসব দেশে সমাজের চূড়ান্ত পর্যায়ের আস্থা আছে, অসমতা কম ও সরকারের প্রতি জনগণের পূর্ণ আস্থা আছে—সেসব দেশ সাধারণ মাপকাঠিতে সুখী দেশ।
দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে পাকিস্তানকে সবচেয়ে গোলোযোগ পূর্ণ দেশ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এখানে চরম ও উগ্রপন্থীদের তৎপরতা সবচেয়ে বেশি। প্রায় প্রতিদিনই গণমাধ্যমে খবর পাওয়া যায়, যত্রতত্র আত্মঘাতী বোমা হামলার। এছাড়া রক্ষণশীল দেশ হিসেবেও রয়েছে নানা তর্কবিতর্ক। এরপরেও দক্ষিণ এশিয়ার সুখী দেশের তালিকায় পাকিস্তানের উঠে আসার ঘটনা কৌতুহল উদ্দীপক। জাতিসংঘ এই রিপোর্ট পাঁচ বছর ধরে প্রকাশ করে আসছে, এবং প্রতি বছরই উত্তর ইউরোপের নরডিক দেশগুলো শীর্ষ অবস্থানগুলো দখল করেছে।