SAMSUNG CAMERA PICTURES

গৌরীপুরে ইট দিয়ে থেঁতলে এইচএসসি পরীক্ষার্থীকে হত্যা# বান্ধবীর সঙ্গে কথোপকথনের জেরে খুন: প্রত্যক্ষদর্শী

ক্রাইমবার্তা রিপোট:  ২৪ মার্চ ২০১৭,শুক্রবার: কয়েক দিন পরই এইচএসসি পরীক্ষা। তা নিয়ে দিনরাত ব্যস্ত ছিল গৌরীপুর সরকারি কলেজের বাণিজ্য বিভাগের ছাত্র শাকিল আহমেদ (১৮)। এরই মধ্যে সেনাবাহিনীতে সৈনিক পদে চাকরি পাওয়ার খবরে পুরো পরিবারে বইছিল আনন্দের বন্যা। প্রতিবেশী আর স্বজনের বাড়িতে এ খুশির সংবাদের সঙ্গে মিষ্টিও পাঠায় শাকিলের পরিবার। আগামী বছরের ১ জানুয়ারি চাকরিতে যোগ দেয়ার কথা ছিল তার। কিন্তু সবকিছুই শেষ। বুধবার দুপুরে কলেজে যাওয়ার পথে শাকিলের মাথা, মুখ ও বুক ইট দিয়ে থেঁতলে দেয় পৌর শহরের কলাবাগানের আজহারুল ইসলামের ছেলে হিমেল (২০)। রাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় শাকিল। এ ঘটনার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার বিক্ষোভ, ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগে উত্তাল হয়ে ওঠে গৌরীপুর। নাম প্রকাশ না করা শর্তে এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, বুধবার দেড়টার দিকে কলেজে যাওয়ার পথে শহরের কলাবাগানে এক বান্ধবীর সঙ্গে সামান্য কথা হয়। এটা দেখে ক্ষিপ্ত হয়ে যায় হিমেল (২০)। হিমেল ও তার সঙ্গীরা শাকিলকে ধরে নিয়ে ইট দিয়ে আঘাত করে মাথা, মুখ ও বুক থেঁতলে দেয়। রক্তাক্ত শাকিল ওই অবস্থাতেই ফোনে বন্ধু ও স্বজনদের ঘটনাটি জানায়। আর পথচারীরা রিকশা করে তাকে গৌরীপুর হাসপাতালে পৌঁছে দেয়। এরপর ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। অবস্থার অবনতি হলে দ্রুত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয় এবং সেখানেই বুধবার রাতে শাকিল মারা যায়। এ খবর পেয়েই হিমেল ও তার স্বজনরা বৃহস্পতিবার ভোরেই বাসায় তালা মেরে পালিয়ে যায়। ওই প্রত্যক্ষদর্শী আরও জানান, প্রেমে সাড়া না দেয়ায় ওই ছাত্রীকে প্রতিদিন উত্ত্যক্ত করত হিমেল। এ বিষয়ে মুঠোফোনে যোগাযোগ করে হিমেলের ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। বৃহস্পতিবার রাতে শাকিলের লাশ এলাকায় পৌঁছে। আজ জুমার নামাজের পর জানাজা শেষে পারিবারিক গোরস্থানে তাকে দাফন করা হবে বলে জানা গেছে। এর আগে সকালে শাকিলের মৃত্যুর খবর পেয়ে বন্ধু-বান্ধবসহ ছাত্র সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরা কলেজ ক্যাম্পাসে জড়ো হতে থাকে। প্রিয় ছাত্রকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন শিক্ষকরাও। কান্নায় ভেঙে পড়েন সহপাঠীরা। উত্তপ্ত হয়ে ওঠে ক্যাম্পাস। এ সময় হিমেলের সঙ্গী কলাবাগানের জুয়েল মিয়ার ছেলে ইমন মিয়া (২০) বাধা দেয়ার চেষ্টা করলে ছাত্রছাত্রীরা তাকে ধাওয়া দেয়। পরে ইমন কলেজের অধ্যক্ষের কক্ষে আশ্রয় নেয়। শিক্ষার্থীরা জানায়, ঘাতক হিমেলের সহযোগী এই ইমন মিয়া। পরে কলেজ কর্তৃপক্ষ ইমনকে গৌরীপুর থানার ওসির কাছে সোপর্দ করে। হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবিতে ছাত্রছাত্রীদের বিক্ষোভ মিছিল বৃহস্পতিবার সাড়ে ১০টার দিকে শহর প্রদক্ষিণ করে। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে স্মারকলিপি দেয়া হয়। অন্যদিকে বিক্ষুব্ধ জনতা ও সহপাঠীদের একটি অংশ অভিযুক্ত হিমেলের বাসার আসবাবপত্র ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। হিমেলের বন্ধু যুবলীগ কর্মী তমাল খানের বাড়িতেও ভাংচুর, লুটপাট করা হয়। তমালের বাবা নওয়াব উদ্দিন খান পাঠান দাবি করেন, প্রায় পাঁচ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। এক লাখ টাকা ও পাঁচ ভরি ওজনের স্বর্ণালংকার লুট করা হয়। বিক্ষোভকারীরা পৌর যুবলীগ নেতা মেহেদী হাসান মিথুনের স্টেডিয়ামসংলগ্ন বাসায়ও ভাংচুর চালায়। তার স্ত্রী সামিয়া নাসরিন রুবি দাবি করেন, প্রায় ১০ লাখ টাকার জিনিসপত্র ভাংচুর করেছে। লুট করা হয়েছে এক লাখ টাকা ও ১০ লাখ টাকার স্বর্ণালংকার। এ সময় শহরের কালিপুরে দুটি অটোরিকশা, একটি রিকশা, একটি মাইক্রোবাস, গৌরীপুর টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে একটি পিআপ, পূর্ব দাপুনিয়ায় দুটি সিএনজি ভাংচুর করা হয়। পুরো শহরে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে দুপুরে দোকানপাট প্রায় ১ ঘণ্টা বন্ধ থাকে।
এদিকে, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হত্যাকারীদের গ্রেফতারের আলটিমেটাম দিয়েছে সর্বদলীয় ছাত্র পরিষদ। আজ শুক্রবারের মধ্যে গ্রেফতারে ব্যর্থ হলে শনিবার থেকে গৌরীপুরে অনির্দিষ্টকালের জন্য অবরোধ কর্মসূচির ডাক দেন সর্বদলীয় ছাত্র পরিষদের পক্ষে উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি মিজানুর রহমান। আজ বিকাল সাড়ে ৩টায় মানববন্ধন কর্মসূচি ঘোষণা করেেেছ ছাত্র ইউনিয়ন। এ ছাড়া গৌরীপুর সরকারি কলেজ শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা জামান জানান, এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। দুপুরে শাকিলের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় স্বজনদের মাতম। বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন শাকিলের বড়বোন তাহমিনা আক্তার মণি। তিনি জানান, তার ভাই প্রাইভেট স্যারের কাছ থেকে সাজেশন আনতে গিয়েছিল। এদিকে কলেজছাত্র শাকিল হত্যার প্রতিবাদে গৌরীপুর উত্তাল হয়ে ওঠায় ছুটে আসেন ময়মনসিংহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (উত্তর) এসএ নেওয়াজী, গৌরীপুর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সীমা রানী সরকার ও ময়মনসিংহ ডিবি পুলিশের সদস্যরা। গৌরীপুর থানার ওসি দেলোয়ার আহম্মদ জানান, একটি মেয়ের সঙ্গে কথা বলাকে কেন্দ্র করে শাকিলকে মারধর করে হিমেল। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শাকিলের মৃত্যু হয়। ওই ঘটনায় কলেজ কর্তৃপক্ষ এক যুবককে তাদের কাছে সোপর্দ করেছে। কয়েকটি বাড়িতে ভাংচুর চালানো হলেও যানবাহন ভাংচুরের খবর পাওয়া যায়নি। হিমেলকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে বলে তিনি জানান।

Check Also

আশাশুনির খাজরা ইউনিয়নের খালিয়া রাস্তার বেহাল দশা।। বিপত্তিতে শতাধিক পরিবার।।দ্রুত সংস্কার দাবি 

এস,এম মোস্তাফিজুর রহমান,আশাশুনি।।আশাশুনি উপজেলার খাজরা ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড খালিয়া গ্রামের সানাপাড়ার প্রায় শতাধিক পরিবার একটি …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।