বিমানবন্দরে চেকপোস্টে আত্মঘাতী যুবক নিহত

ক্রাইমবার্তা রিপোট:বিমানবন্দর এলাকায় গত রাতে সতর্ক অবস্থানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা : আবদুল্লাহ আল বাপ্পী

রাজধানীর হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সামনে গোল চত্বর পুলিশ বক্সে আত্মঘাতী বোমা বিস্ফোরণে এক যুবক নিহত হয়েছে। তবে এতে পুলিশ বক্সের কোনো সদস্য আক্রান্ত হননি। গতকাল সন্ধ্যা সোয়া ৭টায় এ আত্মঘাতী বিস্ফোরণ ঘটে

 
বিমানবন্দর এলাকায় গত রাতে সতর্ক অবস্থানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা : আবদুল্লাহ আল বাপ্পী। ঘটনার পরপরই পুরো এলাকা ঘিরে ফেলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। নিহত যুবক উগ্রবাদী নাকি কোনো সন্ত্রাসী দলের সদস্য, তা নিশ্চিত করে জানাতে পারেনি পুলিশ। তবে এটা কোনো হামলার ঘটনা নয়, নিহত যুবক বোমা বহনকারী বলে দাবি করেছেন ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া। ঘটনার পরপর বিমানবন্দরের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। গত ১৭ মার্চ আশকোনায় র‌্যাবের ব্যারাকে আত্মঘাতী বিস্ফোরণে একজন নিহত হওয়ার পর দেশের সব বিমানবন্দর ও কারাগারে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। কিন্তু এক সপ্তাহের মাথায় সেই ঘটনার মাত্র কয়েক শ’ মিটার দূরে বিমানবন্দর এলাকায় আবারো একই ঘটনা ঘটল। র‌্যাবের চেকপোস্টে হামলা চেষ্টার ওই ঘটনায় গুলিতে নিহত হয় এক আত্মঘাতী। অবশ্য এক সপ্তাহ আগের ওই হামলার সাথে এ ঘটনার কোনো মিল নেই বলে দাবি করেছেন ডিএমপি কমিশনার। তিনি বলেন, পুলিশের তৎপরতার কারণে বোমা বহনকারী অতিরিক্ত সতর্ক হতে গিয়ে এ বোমা ফেটেছে। তদন্ত শেষে সব কিছু পরিষ্কার হয়ে যাবে বলে জানান তিনি।

এ দিকে আত্মঘাতী বোমা বিস্ফোরণে যুবক নিহত হওয়ার ঘটনার দায় স্বীকার করেছে উগ্রবাদী সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস) ইনটেলিজেন্স গ্রুপ এ কথা জানায়।
পুলিশ জানায়, এক যুবক পুলিশ বক্সের তল্লাশি চৌকির চেকপোস্ট সামনে দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিল। ধারণা করা হচ্ছে ওই ব্যক্তি হামলার উদ্দেশ্যে সেখানে গিয়েছিল। কাউকে আক্রান্ত করার আগেই বোমাটি তার শরীরে বিস্ফোরিত হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানায়, শুক্রবার সন্ধ্যা সোয়া ৭টায় বিমানবন্দর গোল চত্বরের এয়ারপোর্ট পুলিশ বক্সের মুখে হঠাৎ করে বিকট শব্দে বোমা বিস্ফোরণে আশপাশ কেঁপে ওঠে। এরপরই দেখা যায় এক ব্যক্তি পড়ে আছে। তার পেট ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে। তার পরনে জিন্স প্যান্ট এবং ছাই ও নীল রঙের স্টাইপ গেঞ্জি এবং পায়ে কেডস পরা ছিল। ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনার পর সেখানে বিপুল র‌্যাব ও পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
এ দিকে ঘটনাস্থলে উপস্থিত পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, পুলিশ বক্সে ঢোকার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে ওই যুবক শরীরে বাঁধা বোমার বিস্ফোরণ ঘটায়। এতে ঘটনাস্থলেই সে নিহত হয়। তার বয়স আনুমানিক ৩০-৩২ বছর। তার লাশের পাশে একটি ট্রাভেল ব্যাগ পাওয়া যায়। বিস্ফোরণে আত্মঘাতী যুবকের শরীর দ্বিখণ্ডিত হয়ে যায়। লাশের অদূরে পাওয়া ট্রাভেল ব্যাগ থেকেও বোমা উদ্ধার করে নিষ্ক্রিয় করেন কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের বোম্ব ডিসপোজাল টিমের সদস্যরা। পুলিশের সিআইডির ক্রাইম সিন ঘটনাস্থল থেকে বিভিন্ন আলামত উদ্ধার করে। পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের বোম ডিসপোজাল টিম ছাড়াও র‌্যাবসহ পুলিশের অন্যান্য টিমের সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। ঘটনার পরপরই মহানগর পুলিশ ও র‌্যাবের শীর্ষ কর্মকর্তারা সেখানে ছুটে যান। পুলিশ কর্মকর্তাদের দাবি, বিস্ফোরক বহন করে ওই যুবক কোথাও যাচ্ছিল। যেখানে বিস্ফোরণ ঘটেছে সেখানে হামলা কিংবা নাশকতার কোনো কারণ নেই। বহনকারীর অসতর্কতার কারণেই বোমাটির বিস্ফোরণ ঘটেছে।
রাত ৮টা ৫৭ মিনিটে ঘটনাস্থলে পৌঁছান র‌্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ ও ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া। ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে রাত ৯টা ৫ মিনিটে চলে যান বেনজীর আহমেদ। তিনি সাংবাদিকদের সাথে কোনো কথা বলেননি। গতকাল সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, বিমানবন্দরের ঠিক পূর্ব পাশে উত্তরা ট্রাফিক বিভাগের সহকারী পুলিশ কমিশনারের কার্যালয়। এর দক্ষিণ পাশে এয়ারপোর্ট ট্রাফিক পুলিশ বক্স এবং উত্তর পাশে ট্রাফিক পুলিশের এয়ারপোর্ট জোনের পেট্রোল ইন্সপেক্টর (পিআই) কার্যালয়। সহকারী পুলিশ কমিশনার কার্যালয়ের সামনের ফুটপাথে এ বিস্ফোরণ ঘটে। ওই ফুটপাথের পশ্চিম পাশে বিমানবন্দর ঢাকা-গাজীপুর মহাসড়ক এবং পেছন থেকেও একটি রাস্তা রয়েছে। পুলিশ ঘটনাস্থল কাপড় দিয়ে ঘেরাও করে রাখে। পুলিশ সেখানে সাংবাদিকসহ কাউকে যেতে দেয়নি। আলামত সংগ্রহ, সুরতহাল রিপোর্ট এবং বেশ কয়েটি বোমা নিষ্ক্রিয় করার পরে নিহতের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য গভীর রাতে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠায় পুলিশ।
ঢাকা মহানগর পুলিশ উত্তরা ট্রাফিক বিভাগের সহকারী পুলিশ কমিশনার (পেট্রোল) আতিকুল ইসলাম বলেন, বিমানবন্দর গোল চত্বরে এয়ারপোর্ট পুলিশ বক্সের মুখে এ বিস্ফোরণ ঘটে। ধারণা করা হচ্ছে ওই ব্যক্তি হামলার উদ্দেশ্যে সেখানে গিয়েছিল। কাউকে আক্রান্ত করার আগেই বোমাটি তার শরীরে বিস্ফোরিত হয়। এ কারণে পুলিশের কোনো সদস্য বা অন্য কেউ হতাহত হননি। তবে বিস্ফোরণে পুলিশ বক্সের দরজা-জানালার কাচ ভেঙে গেছে। হামলাকারী ঘটনাস্থলেই নিহত হয়।
এপিবিএনের এএসপি তানজিনা আক্তার জানান, হামলার পরপর বিমানবন্দরের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। বিমানবন্দর এলাকায় এপিবিএনের অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। শাহজালাল বিমানবন্দরের পরিচালক ইকবাল করিম বলেন, গত সপ্তাহে রথ্যাব সদর দফতরে হামলার পর বিমানবন্দরের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। সেটা আরো বাড়ানো হয়েছে।
বিমানবন্দরের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রাশেদা সুলতানা বলেন, বিমানবন্দরের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। নিরাপত্তার স্বার্থে প্রতিটি পয়েন্টে সতর্ক নজরদারি ও তল্লাশি বাড়ানো হয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি বিমানবন্দরের ভেতরে যাত্রী ছাড়া দশনার্থীরা যাতে কম প্রবেশ করে।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে যা বললেন ডিএমপি কমিশনার : ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে ডিএমপি কমিশনার সাংবাদিকদের বলেন, বোমা বিস্ফোরণে নিহত যুবকের বয়স আনুমানিক ৩০ থেকে ৩২ বছর। এটি কোনো হামলার ঘটনা নয়। বোমা বহনকারী ব্যক্তি পুলিশের চেকপোস্ট দেখে অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করতে গেলে বোমাটির বিস্ফোরণ ঘটে, এতে তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় বোমা বহনকারী ব্যক্তি ছাড়া কেউ হতাহত হননি।
তিনি বলেন, পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রয়েছেন; যে কারণে বিগত সাত-আট মাস আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো সদস্য এবং জনগণ হতাহত হয়নি।
এক প্রশ্নের জবাবে ডিএমপি কমিশনার বলেন, বিমানবন্দরে হামলার পরিকল্পনা ছিল না ওই ব্যক্তির। কারণ সে পূর্ব দিক থেকে এসে হেঁটে উত্তর থেকে দণি দিকে যাচ্ছিল। বিমানবন্দরে হামলার পরিকল্পনা থাকলে হামলাকারী ওই পথে যেত না। আরেক প্রশ্নের জবাবে ডিএমপি কমিশনার বলেন, আত্মঘাতী হামলার পরিকল্পনা থাকলে হামলাকারী দ্রুত পুলিশ বক্সে থাকা পুলিশ সদস্যদের কাছে চলে যেত; কিন্তু হামলাকারী তা করেনি।
নিষ্ক্রিয় করা হয় তিনটি বোমা, আহত দুই পথচারী : বিমানবন্দরের সামনে পুলিশের চেকপোস্টে আত্মঘাতী বিস্ফোরণে নিহত যুবকের ট্রাভেল ব্যাগ থেকে বেশ কয়েকটি বোমা উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে তিনটি নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে। প্রথমটি রাত সাড়ে ১০টার দিকে দ্বিতীয়টি রাত ১১টা ৪০ মিনিটে এবং তৃতীয়টি রাত ১২টা ২০ মিনিটে নিষ্ক্রিয় করা হয়। বোমা নিষ্ক্রিয় করার সময় দুই পথচারী আহত হন। আহতদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাৎণিকভাবে তাদের নাম-পরিচয় জানা যায়নি। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটের প্রধান সানোয়ার হোসেন বোমা নিষ্ক্রিয় করার কথা সাংবাদিকদের জানান। উদ্ধারকৃত বোমার মধ্যে একটি নিষ্ক্রিয় করার আগে সড়ক বন্ধ করে দেয়া হয়। তারপর রাস্তা ফাঁকা করে প্রচণ্ড শব্দে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে দু’টি বোমা নিষ্ক্রিয় করে বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট। তবে দ্বিতীয়টির শব্দ ছিল বিকট। আর এটি বিস্ফোরণের পর বিষাক্ত গ্যাস ছড়ায়।
আইএসের দায় স্বীকার : বিমানবন্দরের সামনে পুলিশ চেকপোস্টে বোমা বিস্ফোরণে একজন নিহত হওয়ার ঘটনার দায় স্বীকার করেছে জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস)। ‘বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় আত্মঘাতী হামলা চালানো হয়েছে। আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাছে পুলিশের একটি তল্লাশি চৌকি ল্য করে এই হামলা চালানো হয়েছে।

 

Check Also

ঘোনা ইউনিয়নে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কর্মী সম্মেলন

আবুল হোসেন সদর প্রতিনিধি : ঘোনা ইউনিয়নে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কর্মী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।