‘আতিয়া মহল’ সেনা নিয়ন্ত্রণে, ৪ জঙ্গি নিহত

ক্রাইমবার্তা রিপোট:সিলেটের শিববাড়িতে জঙ্গি আস্তানা ‘আতিয়া মহলে’ সেনাবাহিনীর কমান্ডো অভিযান ‘অপারেশন টোয়াইলাইটে’ চার জঙ্গি নিহত হয়েছে। পুরো ভবনের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে সেনাবাহিনী।

নিহত জঙ্গিদের মধ্যে তিনজন পুরুষ এবং একজন নারী। তাদের দুজনের লাশ পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় আনুষ্ঠানিক ব্রিফিংয়ে সেনা সদর দফতরের প্রতিনিধি গোয়েন্দা পরিদফতরের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ফখরুল আহসান এসব তথ্য জানান।

তিনি বলেন, ‘গত তিন দিন ধরে ১৭ পদাতিক ডিভিশন আতিয়া মহলে অভিযান পরিচালনা করছে। কমান্ডোরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যে দুঃসাহসিক অভিযান পরিচালনা করছে তাতে আমরা গর্বিত।’

ফখরুল আহসান বলেন, সোমবারও বিভিন্ন পদ্ধতির মাধ্যমে দিনব্যাপী কমান্ডোরা অভিযান পরিচালনা করেছে। দিনের শেষ দিকে আতিয়া মহলের নিচতলায় চারটি লাশ পাওয়া গেছে।

তিনি বলেন, ‘যে গোয়েন্দা তথ্য আমাদের কাছে ছিল, তাতে সেখানে চার জঙ্গি থাকার কথা। আমরা চারটি লাশই পেয়েছি। এর মধ্যে দুটি লাশ বের করে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।’

বাকী দুটি লাশ বের না করার কারণ হিসেবে এই সেনা কর্মকর্তা বলেন, ‘প্রতিটি লাশে সুইসাইড ভেস্ট লাগানো ছিল। তারা যে অবস্থায় আছে, তাদের বের করা খুব ঝুকিপূর্ণ। কীভাবে বের করতে হবে, আমরা সে পরিকল্পনা করছি। সার্বিক অবস্থা আমরা দেখেছি।’

ভবনে বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘একটা কক্ষের মধ্যে একটা লাশ পড়ে আছে। তার পাশে ছড়ানো ছিটানো আইইডি ডিভাইস।’

ফখরুল আহসান বলেন, ‘ভবনে যে পরিমাণ বিস্ফোরক আছে তা বিস্ফোরিত হলে ভবনের অংশ বিশেষ ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। পুরো ভবন যে অবস্থায় তা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। এ কারণে সতর্কতার সঙ্গে এগোতে হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘যে চার জঙ্গি নিহত হয়েছে, তারা খুবই প্রশিক্ষিত। তাদের খুঁজে বের করে যেভাবে নিউট্রালাইজ (হত্যা অথবা আটক) করা হয়েছে তা সেনাবাহিনীর জন্য বিরাট সফলতা।’

অপারেশন চলমান আছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘অপারেশন এখনও চলমান আছে। আরও হয়তো কিছু সময় লাগবে। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশনা অনুযায়ী তা চলবে। অভিযান শেষ হলে পুলিশের কাছে পুরো ভবন হস্তান্তর করব। তারা তাদের নিয়ম অনুযায়ী কাজ চালিয়ে যাবে।’

নিহত চারজনের পরিচয় সম্পর্কে এই সেনা মুখপাত্র বলেন, ‘আমরা পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত নই। পুলিশ ও র‌্যাব নমুনা সংগ্রহ করে নিয়ম অনুযায়ী কাজ করবে।’

ওই ভবনে আর কেউ জীবিত নেই জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ধারণা করছি- জীবিত আর কেউ নেই। তবে হঠাৎ করে থেকে যাওয়া কেউ বের হতে পারে।’

কমান্ডো অভিযানেই চারজন নিহত হয়েছে দাবি করে ফখরুল আহসান বলেন, রোববার দুজনকে হত্যার বিষয়টি জানিয়েছিলাম। আজ আরও দুটি লাশ পাওয়া গেছে।

জঙ্গিদের হামলা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘তারা বোমা ফুটিয়েছে, গ্রেনেড চার্জ করেছে, ছোট অস্ত্র দিয়ে ফায়ার করেছে। তবে আমাদের কোনো ক্ষতি হয়নি।’

মূলত এর মধ্য দিয়ে সিলেটে টানা চার দিনের জঙ্গিবিরোধী অভিযান ‘অপারেশন টোয়াইলাইট’ সমাপ্তির পথে চলল। অভিযান শুরুর ৮৭ ঘণ্টা পর সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জঙ্গি আস্তানায় মোট চার জঙ্গি নিহত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করা হলো।

প্রসঙ্গত, জঙ্গি আস্তানার সন্ধান পেয়ে শুক্রবার ভোর থেকে ‘আতিয়া মহল’ নামের পাঁচতলা ভবনটি ঘিরে রাখে আইনশৃংখলা বাহিনী। বাড়িটির প্রধান ফটকে তালা লাগিয়ে দেয়া হয়।

আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর ধারণা, ওই বাড়ির নিচতলায় অবস্থান করছিল নব্য জেএমবির শীর্ষ নেতা মুসাসহ চার জঙ্গি।

পরে শনিবার সকাল থেকে অভিযান শুরু করে সেনাবাহিনীর প্যারা কমান্ডো দল। ‘অপারেশন টোয়াইলাইট’ নামের এ অভিযান তত্ত্বাবধান করছেন সেনাবাহিনীর ১৭ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল আনোয়ারুল মোমেন।

প্যারা কমান্ডো দলের সঙ্গে অভিযানে সহযোগিতা করছে সোয়াট ও কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের সদস্যরা। অভিযানে ভবনের অবরুদ্ধ সবাইকে উদ্ধার করা হয়।

ওইদিন সন্ধ্যায় অভিযানের বিষয়ে সেনাবাহিনীর ব্রিফিংয়ের পরে জঙ্গি আস্তানার অদূরে দুদফা বিস্ফোরণে দুই পুলিশ কর্মকর্তাসহ ছয়জন নিহত এবং পুলিশ ও সাংবাদিকসহ অন্তত ৫০ জন আহত হন।

রোববার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে কমান্ডোরা ভবনটির সামনে অবস্থান নেন। এদিন দুই জঙ্গিকে হত্যা করা হয় বলে বিকালে ব্রিফিংয়ে জানায় সেনাবাহিনী।

 

Check Also

ভোমরা বন্দরে চার মাসে ৪০০ কোটি টাকা আয়

দক্ষিণবঙ্গ সাতক্ষীরার আধুনিক নিরাপদ ও পরিবেশ বান্ধব বাণিজ্যিককেন্দ্র ভোমরা স্থল বন্দর। আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও দারিদ্র্য …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।