ক্রাইমবার্তা রিপোট:দামুড়হুদায় মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ১৩ জনের লাশ দাফন সম্পন্ন করা হয়েছে। স্হানীয় স্কুল এ্যান্ড কলেজ মাঠে হাজার হাজার মানুষের উপস্হিতিতে জানাজা শেষে সারি সারি কবরে যখন লাশগুলো শোয়ানো হয় ঠিক তখনিই যেন চাপা আর গোংড়ানো কান্নার আওয়াজে আকাশ বাতাশ ভারী হয়ে উঠে। একসাথে এত লাশ তো কেউ দেখেনি কোনোকালে। একসাথে এত কবরও কেউ দেখেনি।
৭৬ বছর বয়সী গ্রামের বৃদ্ধ মানুষ নুরুল ইসলাম কাপা কাপা কন্ঠে বলেন, ‘আমাকে এতগুলো লাশ নিজ চোখে দেখে কবর দিতে হলো, এর চাইতে বড় কষ্ট আর কী হতে পারে- যেন লাশের মিছিল, লাশ শুধু লাশ, সন্ধ্যার পরপরই দাফন কাজ শেষ হয়।’
এ দিকে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক বেগম সায়মা ইউনুছ প্রতি পরিবারকে ১০ হাজার টাকা অনুদানের ঘোষণা দিয়েছেন। স্হানীয় ইউ পি চেয়ারম্যান এ এস এম জাকারিয়া আলম আর্থিক সহায়তার ঘোষণা দিয়েছেন।
উল্লেখ্য ২৬ মার্চ সকাল সাড়ে ৬টার দিকে দামুড়হুদার বড় বলদিয়া গ্রামের কাজের সন্ধানে বের হওয়া ২৩ দিনমজুর একটি আলম সাধু যোগে চুয়াডাঙ্গার মুন্সিগন্জে যাওয়ার পথে জয়রামপুর নামক স্হানে বালি ভর্তি ট্রাকের সাথে সামনাসামনি ধাক্কা লেগে ১৩ জন মারা যায়। বাকি ১০ জন মরার মতো করে বেঁচে আছেন।
এদিকে একমাত্র উপার্জনক্ষম মানুষগুলো দুর্ঘটনায় মারা যাওয়ায় এখন হতদরিদ্র পরিবারগুলোতে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছে পরিবারের স্বজনেরা। একে অপরের স্বান্তনা দেওয়ার ভাষা হারিয়ে ফেলেছে। আগামী দিনে কিভাবে সংসার চলবে তা দিয়ে দিশেহারা। নিহতদের রুহের মাগফিরাত কামনায় গ্রামের বিদ্যালয়ে চলছে স্মরণসভা ও দোয়া মাহফিল।
সোমবার দুপুরে বড়বলদিয়া গ্রামে নিহত শাহিন আলমের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় অন্য রকম দূশ্য। ছেলে হারানোর শোকে পাথর হয়ে বসে আছে পিতা লিয়াকত ও মা তহমনিা। আমাদের দেখে পিতা লিয়াকত জড়িয়ে ধরে হাওমাও করে কান্না করলেন।
নিহত রফিকুলের বাড়িতে গেলে দেখা যায় তার তিন মেয়ে ও স্ত্রীকে গ্রামবাসী স্বান্তনা দিচ্ছেন। কিন্তু কোনো সান্তনাই তাদেরকে আশ্বস্ত করতে পারছে না। কলেজে পড়ুয়া মেঝো মেয়ে রোকেয়া ও ছোট মেয়ে চাদনী বলেন আমাদের লেখা পড়ার খরচ কে জুগাবে ?। আমার আব্বার আয়ে আমাদের সংসার চলত।
একই ভাবে নিহত শান্ত ও গুরুতর আহত পিতা গাজীর বাড়িতে গেলে দেখা যায় পরিবারের সবাই শোকে কাতর। কান্না করতে করতে নিহত শান্তর মা বললেন, শান্ত রোববার কাজে যেতে চাচ্ছিল না। আমি জোর করে পাঠালাম। কাজে না গেলি কি খাবি বলেছিলাম, বলে আবার কান্না করতে লাগলেন।
এদিকে একাধিক প্রতিষ্ঠান আসহায়দের পাশে এসে দাড়িয়েছেন। এদের মধ্যে রাইজিং গ্রুপের কর্ণধার মাহামুদ হাসান খান বাবু প্রতিটি পরিবারকে ১০ হাজার টাকা করে দেওয়ার ঘোষনা দিয়েছেন।
স্থানীয় মদনা-পারকেষ্টপুর ইউপি চেয়ারম্যান জাকারিয়া আলম বলেন, স্মরণকালের ভয়াবহ এ সড়ক দূঘটনায় জেলাবাসীর মতো গ্রামের প্রতিটি মানুষ শোকে মুহ্যমান হয়ে পড়েছে। গ্রামে চলছে শুনশান নীরবতা।