ক্রাইমবার্তা রিপোট:সিলেটের দক্ষিণ সুরমার শিববাড়িতে জঙ্গি আস্তানা ‘আতিয়া মহলে’ প্যারা কমান্ডোদের অভিযান ‘অপারেশন টোয়াইলাইট’ সমাপ্ত ঘোষণা করেছে সেনাবাহিনী।মঙ্গলবার রাতে সিলেটের জালালাবাদ সেনানিবাসে এক সংবাদ সম্মেলনে সেনা গোয়েন্দা পরিদফতরের বিগ্রেডিয়ার জেনারেল ফখরুল আহসান এ ঘোষণা দেন।
তিনি বলেন, গত ১৫ মার্চ চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে পুলিশ একটি জঙ্গি আস্তনায় অভিযান চালায়। এরপর ২৪ মার্চ রাত সাড়ে ৪টায় সিলেটের শিববাড়িতে ‘আতিয়া মহলে’ জঙ্গি আস্তানার সন্ধান মিলে। পরে সেটি পুলিশ সদস্যরা ঘিরে ফেলে। নিচতলার দুটি ফ্ল্যাটে জঙ্গি অবস্থান করছে নিশ্চিত হওয়ার পর পুরো এলাকা ঘিরে ফেলে পুলিশ।
ফখরুল আহসান জানান, পাঁচতলা বাড়িটির প্রতিটি তলায় ছয়টি করে মোট ৩০টি ফ্ল্যাট আছে। ঘটনার সময় ২৮টি ফ্ল্যাটের বাসিন্দারা তাদের পরিবার নিয়ে বসবাস করছিল।
তিনি বলেন, জঙ্গিরা পুলিশের উপস্থিতি বুঝতে পেরে তাদের লক্ষ্য করে গ্রেনেড ছুঁড়ে মারে। সিলেট পুলিশ জঙ্গিদের সক্ষমতা ও ২৮টি পরিবারের নিরাপত্তা ঝুঁকি বিবেচনা করে সোয়াটের সহায়তা কামনা করে। পরে ২৪ মার্চ বিকাল ৪টায় ঘটনাস্থলে সোয়াট আসে।
এই সেনা কর্মকর্তা বলেন, অবস্থা দেখার পর বাসিন্দাদের নিরাপত্তা ঝুঁকি বিবেচনা করে সেনাবাহিনীর সহায়তা কামনা করা হয়। পরে শনিবার সকাল থেকে ১৭ পদাতিক ডিভিশনের নেতৃত্বে সেনাবাহিনীর প্যারা কমান্ডোরা অভিযান শুরু করে। পরে ৭৮ জনকে নিরাপদে উদ্ধার করা হয়।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জঙ্গিরা যে পরিমাণ বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে তাতে ‘আতিয়া মহল’ ভবনটি পুরো নড়বড়ে হয়ে পড়েছে। বিস্ফোরকের বিষয়ে তাদের যথেষ্ট জ্ঞান রয়েছে।
অভিযানটি দুর্যোগপূর্ণ ছিল জানিয়ে ফখরুল আহসান বলেন, জঙ্গিরা ছিল বেশ ভালো প্রশিক্ষিত। বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক তারা ঘরে রেখেছিল। ওই ভবনে প্রায় ১৫০টি কক্ষ রয়েছে। পুরো ভবনে বাসিন্দারা আটকে পড়েছিল। তাদের নিরাপদে উদ্ধার করার বিষয়টি সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হয়েছে।
তিনি বলেন, বাসিন্দাদের নিরাপদে উদ্ধারের পর জঙ্গি নির্মূলে কাজ শুরু করে সেনাবাহিনী। সোমবার বিকালের মধ্যেই চার জঙ্গিকে নির্মূল করা সম্ভব হয়। তবে আরও নিশ্চিত হতে এবং তল্লাশির জন্য আরও একদিন সময় লেগেছে।
মঙ্গলবার বিকালে ‘অপারেশন টোয়াইলাইটের’ সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়। বিকাল সাড়ে ৫টায় সেনাবাহিনীর ১৭ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি আনোয়ারুল মোমেন শিববাড়ির ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। তার নেতৃত্বেই এই অভিযান পরিচালিত হয়।
এছাড়া সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ভবনটি এখনও নিরাপদ নয়। সেখানে বিস্ফোরক থাকতে পারে। সেখানে আরও তল্লাশি চালানো হবে। অভিযানের শেষ দিন মঙ্গলবার সেনা সদস্যরা ১০টি আইইডি নিস্ক্রিয় করে।
এসময় ‘অপারেশন টোয়াইলাইট’ যেকোনো ক্রাইসিস মোকাবেলায় সামরিক ও বেসামরিক প্রশাসনের সমন্বিত প্রচেষ্টার একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে বলে উল্লেখ করেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ফখরুল আহসান।
উল্লেখ্য, জঙ্গি আস্তানায় প্যারা কমান্ডো দলের অভিযানের মধ্যেই শনিবার রাতে ভবনের অদূরে দুটি বোমা বিস্ফোরণে দুজন পুলিশ কর্মকর্তাসহ ছয়জন নিহত হন। আহত হন আইনশৃংলা বাহিনীর সদস্য ও সাংবাদিকসহ অর্ধশত।
বিস্ফোরণে র্যাবের গোয়েন্দা শাখার পরিচালক লে. কর্নেল আবুল কালাম আজাদ গুরুতর আহত হন। চিকিৎসার জন্য তাকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে সিঙ্গাপুর মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। তার অবস্থা সংকটাপন্ন বলে জানা গেছে।