গাজীপুরে ছাত্রলীগের দু’পক্ষের সংঘর্ষ ॥ অতিরিক্ত পুলিশ সুপারসহ আহত ১০. আটক ১২

ক্রাইমবার্তা রিপোট:গাজীপুর সংবাদদাতাঃ গাজীপুরের ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজের ছাত্রসংসদের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে শনিবার ছাত্রলীগের দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ ও ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। বিক্ষুব্ধ ছাত্ররা কলেজ অধ্যক্ষের কক্ষসহ ও কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করেছে। এসময় গাজীপুর সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকসহ অন্ততঃ ১০ জন আহত হয়েছে। এঘটনায় জড়িত সন্দেহে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতাসহ ১২জনকে আটক করেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে ক্যাম্পাসে অতিরিক্ত পুলিশ ও র‌্যাব মোতায়েন রয়েছে।21

গাজীপুর সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাখাওয়াত হোসেন ও শিক্ষার্থীরা জানায়, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের চান্দনা চৌরাস্তা এলাকার ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজে ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ও শেখ ফজিলাতুন্নেছা ছাত্রী নিবাস শনিবার উদ্বোধন করেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। অনুষ্ঠানে ছাত্রলীগের কলেজ শাখার সভাপতি সজীব হোসেন সবুজ ও তার সমর্থিত ছাত্রলীগের একাংশের নেতা কর্মীরা কলেজ ছাত্র সংসদের নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি করে। মন্ত্রী মহোদয় অনুষ্ঠানে তাদেরকে শীঘ্রই ছাত্র সংসদ নির্বাচন দেয়ার আশ্বাসও দেন। দুপুরে তিনি অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করার প্রাক্কালে ছাত্রলীগের কলেজ শাখার সভাপতির সমর্থকরা মন্ত্রীর গাড়ি অবরোধ করে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার দাবি করে শ্লোগান দিতে থাকে। এসময় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মোশারফ হোসেন সৌরভের নেতেৃত্বে অপর অংশের নেতাকর্মীরা তাদের বাঁধা দিলে দু’পক্ষের মাঝে বাকবিতন্ডা ও হাতাহাতি শুরু হয়। এতে দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বেঁধে যায় এবং ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। পরে পুলিশ প্রহরায় মন্ত্রীর গাড়ি এলাকা ত্যাগ করে। পুলিশ সংঘর্ষকারীদের বাধা দিলে বিক্ষুব্ধরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে। এসময় উত্তেজিত ছাত্ররা কলেজ অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষের কার্যালয় ও শিক্ষক মিলনায়তনসহ ক্যাম্পাসে থাকা কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করে। এতে সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীরা আতংকিত হয়ে দিকবিদিক ছোটাছুটি শুরু করে। একপর্যায়ে কলেজ সংলগ্ন ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সংঘর্ষে গাজীপুর সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাখাওয়াত হোসেন, পুলিশ পরিদর্শক শাখাওয়াত হোসেন, কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মোশারফ হোসেন সৌরভসহ অন্ততঃ ১০ জন আহত হন। একপর্যায়ে ছাত্রলীগ এক অংশের নেতা-কর্মীরা চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় মিছিলের চেষ্টা করলে পুলিশ সেখান থেকে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতা অনিক সরকারসহ ১২জনকে আটক করে। পরে অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে দু’পক্ষের কর্মীদের ছত্রভঙ্গ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।22

এ বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাসেল শেখ জানান, সরকারি কাজে বাধা ও মন্ত্রীর গাড়ি অবরোধের অভিযোগে ঘটনাস্থল আশেপাশের এলাকা থেকে ছাত্রলীগ কর্মী আনিসুজ্জামান অনিক সরকার, শেখ আশরাফুল, ইলিয়াস রুমন, লিয়াকত হোসেন, হাসান শাহরিয়ার সুমন, আব্দুল আলী, মো. ইয়াসিন হোসেন, আল ফাহাদ, রাফিজুল ইসলাম আবির, সোহেল রানা, মামুনকে আটক করেছে পুলিশ। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে ক্যাম্পাসে অতিরিক্ত পুলিশ ও র‌্যাব মোতায়েন রয়েছে।

মারামারির বিষয়ে কলেজ অধ্যক্ষ প্রফেসর জেরিনা সুলতানা জানান, পুলিশের উপস্থিতিতে ছাত্ররা কলেজ ক্যাম্পাসে ভাঙচুর করেছে।

ছাত্রলীগের কালেজ শাখার সাধারণ সম্পাদক মোশারফ হোসেন সৌরভ জানান, মন্ত্রী চলে যাওয়ার সময় ছাত্রসংসদ নির্বাচনের দাবি জানিয়ে বহিরাগতরা মন্ত্রীর গাড়ি আটকে রাখে। পরে পুলিশের সহযোগিতায় তার গাড়ি ছাড়িয়ে নিতে গেলে তারা লাঠি-সোটা নিয়ে আমাদের উপর চড়াও হন। এসময় তাদের হামলায় সৌরভসহ ১০-১২জন নেতা-কর্মী আহত হন। আহতরা শহীদ তাজউদ্দিন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও স্থানীয় বিভিন্ন ক্লিনিকে প্রাথমিক চিকিসা নিয়েছেন।

ছাত্রলীগের কলেজ শাখার সভাপতি সজীব হোসেন সবুজ জানান, সাধারণ শিক্ষার্থীরা সংসদ নির্বাচন চেয়ে মন্ত্রীর গাড়ির সামনে অবস্থান নিলে কলেজের সাবেক ভিপি আফজাল হোসেন সরকার রিপনের সমর্থিত কর্মীরা সেখানে গিয়ে তাদের সঙ্গে বাক-বিতন্ডা ও হাতাহাতি শুরু করে। এতে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ  হয়।

 

Check Also

ঢাকা প্রসঙ্গে বদলাতে পারে ভারতের পররাষ্ট্রনীতি

পাঁচ দশকের বিরতির পর গত মাসে বাংলাদেশের বন্দর নগরী চট্টগ্রামে একটি পাকিস্তানি পণ্যবাহী জাহাজ ডক …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।