ক্রাইমবার্তা রিপোট: মামলা থাকায় বিএনপি সমর্থিত তিন মেয়রকে বরখাস্ত করেছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। রোববার দুপুরে কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে ওই তিনজনকে বরখাস্ত করা হয়। বরখাস্তরা হলেন রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল, সিলেটের মেয়র আরিফুল হক ও হবিগঞ্জের মেয়র জি কে গউছ। মন্ত্রণালয় থেকে বরখাস্তের আদেশ সংশ্লিষ্ট মেয়রদের কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে।
রোববার স্থানীয় সরকার বিভাগ রাজশাহীর মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল ও সিলেটের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীকে বরখাস্ত করে।
এর আগে উচ্চ আদালতের রায় নিয়ে রোববার সকালে মেয়রের দায়িত্ব বুঝে নিতে নগর ভবনে যান এই দুই মেয়র। সকাল ১০টার দিকে রাজশাহীর মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল তাঁর দায়িত্ব নিতে নগর ভবনে আসেন। কিন্তু তালা ঝোলানো থাকায় মেয়র তাঁর কক্ষে প্রবেশ করতে ব্যর্থ হন। এ নিয়ে সকাল থেকেই বেশ গোলযোগ সৃষ্টি হয় রাজশাহী নগরভবনে।
এদিকে রোববার বেলা সাড়ে ১১টায় তিনি নগরের কুমারপাড়ার বাসা থেকে প্রায় এক কিলোমিটার পথ হেঁটে নগর ভবনে পৌঁছান। সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ড কাউন্সিলর, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাঁকে ফুল দিয়ে স্বাগত জানান। বাসা থেকে হেঁটে নগর ভবনে যাওয়ার সময় মেয়রকে রাস্তার দুই পাশ থেকে সাধারণ মানুষ হাত নেড়ে অভ্যর্থনা জানান। এ সময় তাঁকে ফুলের মালা দিয়েও শুভেচ্ছা জানানো হয়।
এর কয়েক ঘণ্টার পরেই তাদের বরখাস্তের খবর আসে।
২০১৩ সালের ১৫ জানুয়ারি রাজশাহী মহানগর যুবদলের আহ্বায়ক মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হন। এরপর নভেম্বর মাসেই সরকারবিরোধী আন্দোলন শুরু হলে একজন পুলিশ সদস্য নিহত হন। বিএনপিসহ বিরোধী জোটের টানা অবরোধের মধ্যে গত ২৩ জানুয়ারি মতিহার থানার কাপাশিয়া এলাকায় ঢাকাগামী গাড়িবহরে পেট্রলবোমা হামলা হয়। এর আগে ২২ জানুয়ারি দুপুরে নগরের কাদিরগঞ্জ ট্রাকের বহরে হামলা এবং ১৯ জানুয়ারি নগরের ভদ্রা এলাকায় যাত্রীবাহী একটি বাসে পেট্রলবোমা হামলার অভিযোগের দায়ের করা মামলায় মেয়রকে আসামি করা করা হয়। এর পর থেকে মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন আত্মগোপনে চলে যান। সিটি করপোরেশনে নিজ কার্যালয়েও আসেননি। তবে তিনি আত্মগোপনে থেকে কিছু কিছু নথিতে সই করেছেন।
এর মধ্যে গত বছর ২৯ সেপ্টেম্বর পুলিশ কনস্টেবল সিদ্ধার্থ হত্যা মামলা ও গত ৪ ফেব্র“য়ারি বোয়ালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) ওপর হামলার ঘটনায় পুলিশ তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয়। পরে আরও তিনটি মামলায় তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। আদালতে মামলার অভিযোগপত্র গৃহীত হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে মেয়রকে বরখাস্ত করার জন্য সুপারিশ করা হয়।
২০১৫ সালের ৭ জানুয়ারি সাময়িক বরখাস্ত হওয়ার দুই বছর তিন মাস পর উচ্চ আদালতের নির্দেশে সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়রের চেয়ারে বসেন আরিফুল। রোববার সকালে দায়িত্ব গ্রহণের পর এক প্রতিক্রিয়ায় আরিফুল হক চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমার মেয়াদের মধ্যবর্তী সময়টা কেটে গেল। এখন শেষ দিকে এসে দায়িত্ব ফিরে পেয়েছি। নতুন করে দায়িত্ব পালনে আমি সকলের সহযোগিতা চাই।’
জনগণের ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিকে মন্ত্রণালয় থেকে এভাবে বরখাস্ত করাটাও যে জনরায় বিরোধী। এ বিষয়টি উচ্চ আদালতের আদেশের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হলো জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘আমি জনগণকে যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে নির্বাচিত হয়েছিলাম, তা পূরণে কাজ করতে চাই। বিনা দোষে আমাকে ২৭ মাস জনগণের কাছ থেকে দূরে রাখা হয়েছিল।’
২০১৩ সালে ১৫ জুন সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র নির্বাচিত হন বিএনপি নেতা আরিফুল হক চৌধুরী। সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া হত্যা মামলায় ২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর হবিগঞ্জের একটি আদালত তাকে কারাগারে পাঠায়। ২০১৫ সালের ৭ জানুয়ারি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় তাকে সিলেটের মেয়র পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত করে।
চলতি বছরের চার জানুযারি কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে সাময়িক বরখাস্ত আদেশ চ্যালেঞ্জ করে হাই কোর্টে রিট আবেদন করেন আরিফুল। রিট আবেদনের শুনানি শেষে সাময়িক বরখাস্তের আদেশ গত ১২ মার্চ ছয় মাসের জন্য স্থগিত করে হাইকোর্ট।
পরে এই আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন সুপ্রিম কোর্টের তিন সদস্যের বেঞ্চ রাষ্ট্রপক্ষের আবেদন খারিজ করে দিয়ে হাইকোর্টের আদেশ বহাল রাখে। ২০০৫ সালের ২৭ জানুয়ারি হবিগঞ্জের বৈদ্যের বাজারে স্থানীয় আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় দুর্বৃত্তদের গ্রেনেড হামলায় নিহত হন সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়া।
ওই হত্যাকান্ডের প্রায় ১০ বছর পর তৃতীয় সম্পূরক চার্জশিটে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সিসিক মেয়র আরিফুর হক চৌধুরীকে আসামি করা হয়। ২০১৪ সালের ২১ ডিসেম্বর কিবরিয়া হত্যা মামলার অভিযোগপত্র আদালতে গৃহীত হলে ২৮ ডিসেম্বর আদালতে আত্মসমর্পণ করেন তিনি।
আদালত আরিফুলের জামিন আবেদন নাকচ করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেয়। কারাগারে থাকা অবস্থায় ২০০৪ সালের ২১ জুন সুনামগঞ্জে সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের জনসভায় বোমা হামলার ঘটনার দীর্ঘ প্রায় ১২ বছর পর ২০১৬ সালের শেষ দিকে মেয়র আরিফকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
এদিকে সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের জনসভায় গ্রেনেড হামলা মামলার আসামি হবিগঞ্জের পৌর মেয়র জি কে গউছকে একই কারণ দেখিয়ে বরখাস্ত করেছে মন্ত্রণালয়। হাইকোর্টের আদেশ পেয়ে তিনি গত ১০ দিন আগে মেয়রের দায়িত্ব বুঝে পেয়েছিলেন।
Check Also
আশাশুনিতে টঙ্গী ইজতেমায় হত্যার বিচারের দাবিতে মানববন্ধন
এস,এম মোস্তাফিজুর রহমান,আশাশুনি।।ঢাকার টঙ্গীত ইজতেমা-মাঠে নিরীহ মুসল্লিদের উপর উগ্রবাদী সন্ত্রাসী সাদ পন্থীদের বর্বরোচিত হামলা ও পরিকল্পিত …