আবু সাইদ বিশ্বাসঃ ক্রাইমবার্তা রিপোট: সাতক্ষীরাঃ শেষ হলো সাতক্ষীরা রেঞ্জে বাঘ গণনার কাজ। অর্থের অভাবে পুরো সুন্দরবনের বাঘ গণনা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। এতে সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশে বাঘের সঠিক সংখ্যা পেতে আবারও সংশয় সৃষ্টি হয়েছে। তবে বনবিভাগ বলছে, ইতোমধ্যে তারা সরকারকে বিষয়টি জানিয়েছে। অর্থ সমস্যা সমাধান হলে আগামী বছর আবারও সুন্দরবনের অন্যান্য অংশে বাঘ গণনা শুরু হবে। এর পরও শুধু সাতক্ষীরা রেঞ্জে বাঘ গণনা শেষ করে আগষ্টে ফল ঘোষণা করতে চাওয়াতে সমালোচনার মুখে পড়েছে সংস্থাটি ।
সাতক্ষীরা, খুলনা-চাঁদপাইও শরণখোলা, এ চার রেঞ্জে বিভক্ত বাংলাদেশের সুন্দরবন। এর মধ্যে শুধু সাতক্ষীরা রেঞ্জে বাঘ পর্যবেক্ষণ পর্ব শেষ হয়েছে গত ১৫ মার্চ। আর এতে বনবিভাগের ব্যয় হয়েছে ২ কোটি ৮০ লাখ টাকা।
বন বিভাগ বাঘের সঠিক সংখ্যা পেতে এবার দেশি-বিদেশি গবেষকদের পাশাপাশি সর্বোচ্চ প্রযুক্তি ব্যবহার করেছে। নিরলস খেটেছেন ৪৫ জন কর্মী। সাতক্ষীরা রেঞ্জে বাঘ গণনা শেষ করার পরপরই সুন্দরবনের অন্যান্য অংশে বাঘ গণনা শুরু করার ইচ্ছা ছিল বন বিভাগের। কিন্তু টাকার অভাবে এ বছর বাঘ গণনা আর সম্ভব হচ্ছে না। এতে সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশে বাঘের সঠিক সংখ্যা পেতে আবারও সংশয় সৃষ্টি হয়েছে। তবে বনবিভাগ বলছে, ইতোমধ্যে তারা সরকারকে বিষয়টি জানিয়েছে। অর্থ সমস্যা সমাধান হলে আগামী বছর আবারও সুন্দরবনের অন্যান্য অংশে বাঘ গণনা শুরু হবে।
সুন্দরবনের পশ্চিম বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মুহাম্মদ সাঈদ আলী বলেন ‘২০১৬ সালের ১ ডিসেম্বর থেকে সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জে বাঘ গণনা শুরু হয়েছিল। এ পর্যায়ে সুন্দরবনের দুটি অভয়ারণ্য অঞ্চলসহ প্রায় দুই হাজার বর্গফুট এলাকার ৩৪০টি পয়েন্টে গাছের সাথে স্থাপন করা হয় ৪৫০টি ক্যামেরা। আর টোপ হিসেবে ব্যবহার করা হয় পাহাড়ি শুঁকির গুঁড়া। নয়টি দল এসব পয়েন্ট থেকে ১০৩ দিনের তথ্য সংগ্রহ করেছে। তাদের তদারকি ও পরিচালনা করেছে বাঘ ওয়াইল্ড টিম ও বনবিভাগের বিশেষ দল।’
শেষ হওয়া বাঘ গণনাকে সুন্দরবনের সবচেয়ে বড় গবেষণা প্রকল্প আখ্যা দিয়ে এই বন কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘এ থেকে প্রাপ্ত তথ্য আগামীতে বাঘ রক্ষা গবেষণা প্রকল্প বাস্তবায়নে সহায়ক হবে। এ কাজে ব্যয় হয়েছে ইউএসএআইডি’র দেওয়া প্রায় ২ কোটি ৮০ লাখ টাকা।’
মুহাম্মদ সাঈদ আলী দাবী করেন, এ গণনার মাধ্যমে সুন্দরবনের সঠিক বাঘের সংখ্যা পাওয়া যাবে। এরপর বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধিতে নতুন নতুন উদ্যোগ নেওয়া যাবে। মূলত ২০২২ সালের মধ্যে সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা দ্বিগুণ করার লক্ষ্যে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়।’
এরই অংশ হিসেবে সুন্দরবনে আরো ১৮টি অভয়ারণ্য করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের খুলনা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোঃ মদিনুল আহসান জানান, গত বছরের ১লা ডিসেম্বর সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জে বাঘ গণনা শুরু হওয়ার পর তা এ বছরের ১মার্চ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বিভিন্ন কারণে তা পিছিয়ে ১৫মার্চ শেষ হয়। এবার বাঘের খাদ্য, যেমন- হরিণ এবং শূকরও মনিটর করা হয়েছে। ক্যামেরায় তোলা ছবি এবং অন্যান্য তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেণ করে বাঘের সংখ্যাসহ সার্বিক মনিটরিংয়ের ফলাফল প্রকাশ করতে পারবো আগামী আগস্ট মাসে। তবে এ বছর পুরো সুন্দরবন জুড়ে নয় শুধু সাতক্ষীরা রেঞ্জে বাঘ গণনা হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে সুন্দরবনের এক বন কর্মকর্তা বলেন ‘বর্তমানে বাঘ গণনায় অর্থাভাব দেখা দেওয়ায় পুরো সুন্দরবনে বাঘ গণনা থেকে পিছিয়ে এসেছে বনবিভাগ।’
তবে এ ব্যাপারে বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের খুলনা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. মদিনুল আহসানের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি সরাসরি উত্তর না দিয়ে বলেন, ‘আমরা চাই পুরো সুন্দরবনে বাঘ গণনা হোক। এজন্য সরকারের কাছে অর্থ চেয়েছি। সরকার বা অন্যকোনো দাতা সংস্থা অর্থ দিলে আগামী বছর আবার বাকি রেঞ্জগুলোয় বাঘ গণনা শুরু হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।’
কি পরিমাণ টাকা লাগতে পারে এমন প্রশ্নের জাবাবে তিনি বলেন ‘এগুলো আগের থেকে বলা মুশকিল’।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ১৯৭৫ সালের পর থেকে সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা ছিল অনেকটা অনুমানভিত্তিক। ২০০৪ সালে পাগ মার্ক (পায়ের ছাপ) পদ্ধতিতে সুন্দরবনের একটি জরিপে বাঘের সংখ্যা পাওয়া যায় ৪৪০টি। পায়ের ছাপ নিয়ে তৈরি করা শুমারি অনুযায়ী সুন্দরবনের ৪৪০টি বাঘের মধ্যে ১২১টি পুরুষ, ২৯৮টি স্ত্রী এবং ২১টি শাবক থাকার কথা প্রকাশ করেছিল বনবিভাগ। এর মধ্যে সুন্দরবন পশ্চিম বনবিভাগে ২৭১টি এবং পূর্ব বনবিভাগে ১৬৯টি বাঘ থাকার ঘোষণা দেওয়া হয় সে সময়। তবে ইউএনডিপি ও ভারত সংযুক্ত ওই জরিপ নিয়ে উঠেছিল সমালোচনা। পরে ক্যামেরা ট্রায়ালিংয়ের মাধ্যমে বাঘ শুমারি করার সিদ্ধান্ত হয়। অবশ্য ২০০৬ সালে ক্যামেরায় ছবি তুলে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মনিরুল হাসান খান ব্রিটিশ জুয়োলজিক্যাল সোসাইটির সহায়তায় বাঘ গণনা করেছিলেন। তাতে বাঘের সংখ্যা পাওয়া গিয়েছিলো ২০০টি।
প্রসঙ্গত, আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘ (আইইউসিএন) ২০১০ সালে রয়েল বেঙ্গল টাইগারকে বিপন্ন প্রজাতির প্রাণি হিসেবে ঘোষণা করে। ২০১০ সালে বন বিভাগ এবং ওয়াইল্ড লাইফ ট্রাস্ট অব বাংলাদেশ যৌথভাবে একটি জরিপ করেছিল। এতে বাঘের সংখ্যা ৪০০ থেকে ৪৫০টি বলে উল্লেখ করা হয়। সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা নিয়ে বিতর্ক তখন তুঙ্গে উঠে। ২০১৩ সালের নভেম্বর থেকে বাংলাদেশ-ভারত যৌথভাবে বাঘ গণনা শুরু করে যা ২০১৫ সালের জুনে শেষ হয়। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নের দুই কোটি ২৫ লাখ টাকা ব্যয়ে এ জরিপের ফলাফলে সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশে বাঘের সংখ্যা ১০৬টি জানানো হয়। –আবু সাইদ বিশ্বাস-সাতক্ষীরা –৬/৪/১৭
Check Also
আশাশুনি উপজেলা শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত
সভাপতি-অধ্যাপক শাহজাহান,সেক্রেটারী বোরহান উদ্দীন মনোনীত এস,এম মোস্তাফিজুর রহমান,আশাশুনি প্রতিনিধি।।বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন আশাশুনি উপজেলার দ্বি-বার্ষিক …