ভারতের সাথে অমীমাংসিত সব ইস্যুর সমাধানে প্রধানমন্ত্রীর আশাবাদ

ক্রাইমবার্তা রিপোট:প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ককে একটি প্রবাহমান নদীর সাথে তুলনা করে অমীমাংসিত সব ইস্যুর সমাধানের ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।17

ভারতের জনপ্রিয় পত্রিকা হিন্দু’র আজকের সংখ্যায় প্রকাশিত তার নিবন্ধে শেখ হাসিনা বলেন, ‘মেক্সিকান নোবেল পুরস্কার বিজয়ী সাহিত্যিক অক্টোভি লিখেছেন, বন্ধুত্ব একটি নদী। আমি মনে করি বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার বন্ধুত্ব একটি বহমান নদীর মতো- যা উদারতায় পূর্ণ। এটিই প্রতিবেশী দুটি দেশের জনগণের চেতনা।’

চারদিনের সরকারি সফরে বর্তমানে নয়াদিল্লীতে অবস্থানকারী শেখ হাসিনা বলেন, আমি মনে করি, আমাদের প্রতিশ্রুতি আন্তরিক। আমরা জনগণের স্বার্থে সবকিছু অর্জন করতে সক্ষম হবো।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি শান্তিতে বিশ্বাসী। একমাত্র শান্তিপূর্ণ সহযোগিতই এই শান্তি নিশ্চিত করতে পারে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে কিছু অমীমাংসিত বিষয় রয়েছে। তবে আমি মনে করি, যে কোন বিষয় শান্তিপূর্ণ আলোচনার মাধ্যমে সমাধান হতে পারে। স্থলসীমানা চুক্তি বাস্তবায়নের মাধ্যমে আমরা স্বদিচ্ছার প্রমাণ দেখাতে সক্ষম হয়েছি।

শেখ হাসিনা বলেন, তিস্তার মতো অভিন্ন কিছু নদীর পানি বণ্টনের মতো অনেকগুলো ইস্যু রয়েছে। এসব ইস্যুর সমাধান হওয়া প্রয়োজন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি একজন আশাবাদী মানুষ। আমাদের প্রতিবেশী দেশের জনগণ ও নেতৃবৃন্দের স্বদিচ্ছায় এসব ইস্যুর সমাধানে আমি আশাবাদী।

তিনি বলেন, আমি জানি সম্পদ অপ্রতুল, তবে আমরা দু’দেশের জনগণের কল্যাণে এই সম্পদের ব্যবহার করতে পারি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে তার চারদিনের সফর উপলক্ষে সে দেশের জনগণকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানান। তার এই সফর বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন।

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য অনেক ক্ষেত্রে বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গের মানুষের সাথে প্রায় অভিন্ন।

তিনি প্রশ্ন রাখেন, ‘আমাদের লালন, রবীন্দ্রনাথ, কাজী নজরুল, জীবনানন্দ ও আমাদের ভাষা প্রায় এক। আমরা আমাদের পদ্মা, ব্রম্মপুত্র, তিস্তার পানিতে লালিত-পালিত হচ্ছি। সুন্দরবন আমাদের অভিন্ন গৌরব। এ নিয়ে আমাদের মধ্যে কোনো বিরোধ নেই। তাহলে অভিন্ন নদীর পানি নিয়ে আমরা কেন সমাধানে আসতে পারবো না।’

শেখ হাসিনা আঞ্চলিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে তার নিবন্ধে বলেন, ‘আমি সবসময় দারিদ্র্যকে এ অঞ্চলের প্রধান শত্রু হিসেবে উল্লেখ করেছি। বাংলাদেশ ও ভারতের বিপুলসংখ্যক মানুষ পুষ্টিহীনতায় ভুগছে। তারা মৌলিক চাহিদা থেকে বঞ্চিত। পুষ্টিহীনতায় বিপুলসংখ্যক শিশুর বিকাশ ব্যাহত হচ্ছে। আমাদের এ অবস্থার পরিবর্তন করতে হবে। আমাদের সক্ষমতা আছে, তবে আমাদের যা প্রয়োজন তা হচ্ছে মানসিকতা পরিবর্তন করা। আমি মনে করি, দারিদ্র্য বিমোচনে আমাদের রাজনৈতিক নেতাদের প্রাধান্য দেয়া উচিত। আজ বিশ্বায়নের যুগে কোন কিছু এককভাবে করা কষ্টকর। বর্তমান বিশ্ব প্রেক্ষাপটে পারস্পরিক সহযোগিতা ও সহায়তা অনেক কিছুকে সহজ করে তুলতে পারে। এ কারণে আমি সবসময় আঞ্চলিক সহযোগিতা ও কানেক্টিভিটির উন্নয়নে গুরুত্ব আরোপ করি।’

শেখ হাসিনা বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিশেষ করে ২০০৯ সালে আমার দল দেশ পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণের পর বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সহযোগিতা বহুগুণ বৃদ্ধি পায়। রেল, সড়ক ও জলপথে কানেক্টিভিটির ব্যাপক উন্নয়ন হয় এবং ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বহুগুণ বেড়ে যায়। দু’দেশের মানুষের মধ্যে সম্পর্ক বৃদ্ধি পায় এবং এ ধরনের পারস্পরিক সহযোগিতার ফলে আমাদের জনগণ উপকৃত হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ব্যক্তিগত ও জাতীয় পর্যায়ে এ সম্পর্ক ব্যাপকভাবে দেয়া-নেয়ার প্রক্রিয়ার ওপর নির্ভরশীল।

শেখ হাসিনা বলেন, আমি সারাজীবন প্রতিবেশীর সাথে সুসম্পর্ক, সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো প্রতি বিদ্বেষ নয়- এ নীতি অনুসরণ করছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার বাবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অনুসৃত নীতি থেকে আমরা শিক্ষা ও অনুপ্রেরণা পেয়েছি। বাংলাদেশের সংগ্রাম হচ্ছে সার্বজনীন শান্তি ও ন্যায়বিচারের প্রতীক। এ জন্য এটাই স্বাভাবিক যে, জন্মের সময় থেকে বাংলাদেশ বিশ্বের নির্যাতিত মানুষের পাশে দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়েছে। আন্তর্জাতিক ফোরামে সমতা ও শান্তিপূর্ণ বিশ্ব প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ সকল প্রয়াসে সমর্থন দিয়ে আসছে।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার রাজনৈতিক চিন্তা-ভাবনার একমাত্র লক্ষ্য হচ্ছে সাধারণ মানুষের জন্য এমন একটি সমাজ গড়ে তোলা, যেখানে কেউ দারিদ্র্যের অভিশাপে দুর্ভোগ পোহাবে না এবং সবার মৌলিক চাহিদা পূরণ হবে। অর্থাৎ সাধারণ মানুষ খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা, উন্নত ও মানসম্মত জীবনযাপনের সুযোগ পাবে। এ ধরনের আত্মত্যাগ আমি বঙ্গবন্ধুর কাছ থেকে পেয়েছি।’

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে প্রতিবেশী দেশগুলোর অবদানের কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী তাঁর নিবন্ধে বলেন, প্রতিবেশী ও বন্ধু দেশগুলোর সহযোগিতা ও সমর্থন বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনকে ত্বরান্বিত করেছে। এর মধ্যে ভারত মুখ্য ভূমিকা পালন করেছে। ভারতের সরকার ও জনগণ মুক্তিযুদ্ধে এক কোটি শরণার্থীকে খাদ্য ও আশ্রয়সহ সর্বাত্মক সহযোগিতা দিয়েছে। তারা বাংলাদেশের পক্ষে বিশ্বব্যাপী জনমত সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে- যা আমাদের বিজয় অর্জন ও দেশকে দখলদার মুক্ত করতে সহায়ক হয়। ভারতের সরকার ও জনগণ পাকিস্তানের কারাগার থেকে বঙ্গবন্ধুকে মুক্ত করতেও ভূমিকা পালন করে। সূত্র: বাসস

 

Check Also

সাতক্ষীরা শহর শিবিরের উদ্যোগে আন্ত:থানা ক্রিকেট টুর্নামেন্ট।

স্টাফ রিপোটার: ১৬ই ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবসের ৫৪ বছর পূর্তি উপলক্ষে সাতক্ষীরা শহর শিবিরের উদ্যোগে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।