ক্রাইমবার্তা আন্তর্জাতিক ডেস্ক : রাসায়নিক হামলার সূত্র ধরে সিরিয়ায় অন্তত ৫৯টি টমাহক ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। পেন্টাগনের বরাত দিয়ে মার্কিন প্রভাবশালী গণমাধ্যম সিএনএন শুক্রবার এ তথ্য জানিয়েছে।
সিএনএন আরো জানিয়েছে, সিরিয়ার শায়রাত বিমানঘাঁটিতে ওই হামলা চালায় মার্কিন বাহিনী। এর আগে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন সিরিয়ার ভবিষ্যতের ব্যাপারে বাশার আল আসাদের কোন ভূমিকা থাকতে পারে না বলে মন্তব্য করেন।
সিরিয়ার বিরুদ্ধে যেসব সামরিক পদক্ষেপ নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, তার মধ্যে রয়েছে সিরিয়ার বিমান চলাচল করতে না দেওয়া, সামরিক অভিযান ক্রুজ মিসাইল হামলা চালিয়ে সিরিয়ার রাডার ব্যবস্থা অকার্যকর করে দেওয়া। এদিকে সিরীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে মার্কিন মিসাইল হামলায় তাদের অন্তত ৬ সেনা নিহত হয়েছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত সপ্তায় আসাদের পদচ্যুতির বিষয়টি তাদের সিরিয়া নীতিতে আর গুরুত্বপূর্ণ নয় বলে জানিয়েছিল এই ঘোষণা কয়েক দিনের মধ্যেই সিরিয়ায় সামরিক অভিযান চালালো ট্রাম্প প্রশাসন।
গত মঙ্গলবার বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত ইদলিব শহরে রাসায়নিক হামলায় শিশুসহ প্রায় শতাধিক বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়।
জাতিসংঘের হিসেব অনুযায়ী, ইদলিবের ওই হামলায় নিহতদের মধ্যে অন্তত ২৭টি শিশু রয়েছে। সিরিয়ার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের অভিযোগ তোলা হলেও, তা নাকচ করে দেয় আসাদ সরকার। রাসায়নিক অস্ত্র নিষিদ্ধকরণ সংস্থা জানিয়েছে যে, তারা এই ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে।
মার্কিন সেনা বাহিনীর একজন উর্ধতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সিরিয়ার রাসায়নিক গ্যাস হামলার পরিপ্রেক্ষিতেই সেখানে মিসাইল হামলা চালানো হয়েছে। মার্কিন প্রতিরক্ষা দফতর পেন্টাগন থেকে বলা হয়েছে, সিরিয়ায় সামরিক হামলার বিষয়ে পেন্টাগনে আলোচনার পর উর্ধতন কর্মকর্তারাদের ওই মিসাইল হামলা চালানোর নির্দেশ দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।
যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যসহ পশ্চিমা কয়েকটি দেশ সিরিয়ার বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত উত্তরাঞ্চলীয় শহরে বিমান থেকে এ রাসায়নিক হামলার জন্য আসাদের সশস্ত্র বাহিনীকেই দায়ী করে আসছে।
তারা সিরিয়ার বিমান থেকেই সারিন গ্যাস হামলা চালানো হয়েছে। রাসায়নিক গ্যাস হামলার অভিযোগ অস্বীকার করেছে সিরিয়া ও তাদের মিত্র রাশিয়া।
সিরিয়ার শায়রাত ঘাঁটিতে ৫৯টি টমাহুক ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ প্রশংসা ও সমালোচনায় মেতেছে বিশ্ব নেতৃত্ব। সমালোচকদের মধ্যে অন্যতম রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে সিরিয়ায় চালানো ওই মিসাইল হামলায় বিশ্বে চলছে আলোচনা ও সমালোচনার ঝড়।
সিরিয়ায় মার্কিন হামলাকে অবৈধ বলে মন্তব্য করেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন। বলেন, আমেরিকা সিরিয়ার ঘাঁটিতে যে ভয়ানক মিসাইল হামলা চালিয়েছে তা অন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন। সিরিয়ায় মার্কিন এ হামলা ওয়াশিংটন-মস্কোর সম্পর্কের ভিত্তিতেও ভাটা পরবে। ’
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের কার্যালয় ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেশকভ পুতিনের পক্ষে বলেন, রাশিয়া বিশ্বাস করে না যে সিরিয়ার সরকার রাসায়নিক অস্ত্র প্রয়োগ করেছে। এ বিষয়ে উগ্রবাদের উপর আমেরিকার কার্যক্রম বৈশ্বিক জোটে গভীর প্রভাব ফেলবে। একই সঙ্গে আঞ্চলিক শান্তি বিনষ্ট হবে।
রাশিয়া বিরোধিতা করলেও ট্রাম্পের সামরিক হামলা সমর্থন করেছে সৌদি আরব। সৌদি আরবের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র একটি বিবৃতিতে এ সমর্থন জানিয়েছে। সৌদি আরবের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা সৌদি প্রেস এজেন্সি (এসপিএ) এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, সিরিয়ার সাধারণ জনগণের উপর যে অত্যাচার চলছে তা বন্ধের জন্যে আমেরিকা যা করেছে তা সত্যিই একটি সাহসী সিদ্ধান্ত এবং সৌদি আরব এর সম্পূর্ণ সমর্থন করে’।
অন্যদিকে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের খাস মিত্র ইরান সিরিয়ায় মার্কিন মিসাইল হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। ইরানের পক্ষ থেকে ওই হামলাকে ট্রাম্পের একপক্ষীয় হামলা বলে আখ্যা দেওয়া হয়েছে।
ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বাহরাম কাসেমি গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ‘ইরান দৃঢ়ভাবে নিন্দা জানাচ্ছে সিরিয়ায় এক তরফা মার্কিন হামলাকে। শায়রাত ঘাঁটিতে মিসাইল হামলা নিন্দাজনক।’
এদিকে মার্কিন মিসাইল হামলার জন্য মাকির্ন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে সাধুবাদ জানিয়েছে তুরস্ক।
শুক্রবার সকালে তুর্কিশ গণমাধ্যম ফক্স টিভির এক সাক্ষাৎকারে দেশটির উপ-প্রধানমন্ত্রী নুমান কুরতুলমুস বলেন, ‘সিরিয়ার সাধারণ মানুষের উপর যে অত্যাচার চলছে তা শান্ত করা ও তার জন্যে দামেস্ককে শাস্তি দেওয়া উচিত। ’
প্রেসিডেন্টের হয়ে নুমান আরো বলেন, আমাদের প্রেসিডেন্ট পরিস্কারভাবে বলেছেন ‘আমরা কাজ দেখতে চাই কথা নয়। সেক্ষেত্রে মার্কিন হামলা বেশ কার্যকর হয়েছে। আসাদের বর্বরতা বন্ধে এই কার্যক্রম সারাবিশ্ব থেকে চালানো উচিত। তাতে করে আঞ্চলিক শান্তি আসবে’।
সিরিয়ায় মার্কিন মিসাইল হামলার সমর্থন জানিয়েছে ইসরায়েল। দেশটির পক্ষ থেকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে পূর্ণসমর্থন জানানো হয়েছে। শুক্রবার এক বিবৃতিতে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে একটি বিবৃতিতে ট্রাম্পকে সমর্থন জানান ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনজামিন নেতানিয়াহু।
নেতানিয়াহু বলেন, ‘কথায় ও কাজে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বুঝিয়ে দিয়েছেন যে, রাসায়নিক অস্ত্র বিস্তার কার্যক্রম ও তার ব্যবহার সহ্য করা হবে না’। ট্রাম্পের এই সামরিক হামলা থেকে শিক্ষা নিয়ে আসাদ তার কুৎসিত কাজ বন্ধ করবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন নেতানিয়াহু।
বুধবার হোয়াইট হাউজে জর্ডানের বাদশাহ আব্দুল্লাহর সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সিরিয়ার রাসায়নিক অস্ত্রের হামলাকে ‘মানবতার অপমান’ আখ্যা দিয়ে বলেন কোনোভাবেই এটি সহ্য করা হবে না। বাদশাহ আব্দুল্লাহ বলেন আন্তর্জাতিক কূটনীতির ব্যর্থতার কারণে ওই ঘটনা ঘটলো।
জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের এক জরুরী বৈঠকে ব্রিটেন ফ্রান্স ও যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার নিন্দা করেন। জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত নিকি হ্যালি এর জবাবে পরিষদ সদস্যরা পদক্ষেপ না নিলে যুক্তরাষ্ট্র একাই কাজ শুরু করার ঘোষণা দেন। তিনি আহত শিশুদের ছবি হাতে প্রয়োজনে সামরিক পদক্ষেপ গ্রহণ করে তা প্রতিরোধ করার ঘোষণা দেন। তারই পরিপ্রেক্ষিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সামরিক অভিযান চালানোর নির্দেশ দিলেন। সিএনএন, বিবিসি ও ভয়েস অব আমেরিকা, আল জাজিরা, রয়টার্স অবলম্বনে।
Check Also
ঢাকা প্রসঙ্গে বদলাতে পারে ভারতের পররাষ্ট্রনীতি
পাঁচ দশকের বিরতির পর গত মাসে বাংলাদেশের বন্দর নগরী চট্টগ্রামে একটি পাকিস্তানি পণ্যবাহী জাহাজ ডক …