ক্রাইমবার্তা রিপোট: সাভারে সিটি ইউনিভার্সিটিতে প্রেমঘটিত জটিলতার জের ধরে সোমবার বহিরাগত সন্ত্রাসীদের এলোপাথারি গুলিতে এক শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন। নিহত ছাত্রের নাম সিফাত হোসেন (২৩)। ১১তম সেমিষ্টারের ছাত্র। সিফাত হোসেন ময়মনসিংহ জেলার মুক্তাগাছা থানার নতুন বাজার এলাকার মাহফুজুর রহমান বাচ্চুর ছেলে। এ ঘটনায় বহিরাগত দুই সন্ত্রাসীকে ছাত্র-ছাত্রীরা আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেছে। আটককৃতরা হলেন সোহেল (২৪)ও মোশাররফ (২৫)।
সিটি ইউনিভাসির্টির নিহত শিক্ষার্থীর একই বিভাগের সহপাঠী প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত রোববার সিটি ইউনিভার্সিটি এলাকায় ক্রিকেট খেলার সময় সিনিয়র ও জুনিয়র কিছু শিক্ষার্থীরা বসে আনারস খাচ্ছিলেন। ওই সময় বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী শাহেদের সাথে অপর শিক্ষার্থী বাপ্পির একই বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীর প্রেমের সম্পর্ক নিয়ে তুমুল ঝগড়া হয়। এ ঘটনার জের হিসেবে সোমবার সোয়া ২টার সময় ক্লাশ চলাকালে ১০-১২টি মটর সাইকেলযোগে বহিরাগত সন্ত্রাসীদের একজন ক্যাম্পাসের ভিতরে ঢুকলে ইউনির্ভাসিটির সাধারণ শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ হয়ে এগিয়ে আসে। তারা কিছু বুঝে ওঠার আগেই বাপ্পির ভাড়াটে সন্ত্রাসীরা কিছু বুঝে ওঠার আগেই তাদের ওপর হামলা চালায় এবং এলোপাথারি গুলিবর্ষণ শুরু করে। ওই সময় পাশের সাহেব আলীর মালিকানাধীন একটি হোটেল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের টেক্সটাইল বিভাগের শিক্ষার্থী সিফাত হোসেন ও তার আরেক শিক্ষার্থী বাসুদেব (২৪) দুপুরের ভাত খেয়ে ওই স্থান দিয়ে আসার সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন।
গুলির শব্দে বাজারের দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। মানুষজন দিকবিদিক ছুটাছুটি শুরু করে। সন্ত্রাসীরা চলে যাওয়ার পর অন্য ছাত্ররা গুলিবিদ্ধ দুই ছাত্রকে উদ্ধার করে সাভারের এনাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেন। সেখানে সিফাতকে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন। বাসুদেবের অবস্থা গুরতর হওয়ায় তাকে আইসিইউতে ভর্তি করা হয়েছে।
খবর পেয়ে সাভার মডেল থানা পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। ঘটনার পরপর বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বহিরাগত দুই সন্ত্রাসীকে ঘটনার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেছে।
সড়ক অবরোধ : এ ঘটনার পর বিকেল পৌনে ৪টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বহিরাগত সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ও নিহত শিক্ষার্থীর বিচারের দাবিতে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা সিটি ইউনির্ভাসিটির সামনে থেকে চারাবাগ পর্যন্ত সাভার-আশুলিয়া ও মিরপুর সংযোগ সড়ক অবরোধ করে রাখে। এ সময় শিক্ষার্থীরা ড্রাম ও বিভিন্ন বোতলে জ্বালানি জাতীয় পদার্থ দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছলে শিক্ষার্থীরা চলে যায়।
নিহত শিক্ষার্থীর একই বিভাগের সহপাঠী সাদিউল আলম জানান, সিফাত এবং আমি একই সাথে এইচএসসি পড়াশুনা করে সিটি ইউনির্ভাসিটিতেও একই বিভাগে ভর্তি হই। সিফাত বাবার একমাত্র ছেলে। তার বাবা মুক্তাগাছার একটি কামিল মাদরাসায় শিক্ষকতা করেন। তিনি আরো জানান, ঘটনার সময় আমি ক্লাশে ছিলাম। আর সিফাত সাবেহ আলীর হোটেল থেকে দুপুরের খাবার খেয়ে আসার পথে সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন।
ঢাকা জেলা উত্তরের (ডিবি) পুলিশের পরিদর্শক এম এ আউয়াল জানান, প্রাথমিকভাবে আমাদের ধারণা, আগের দিনের ক্রিকেট খেলার জের ধরে এ ঘটনা ঘটে। তিনি আরো জানান, বহিরাগত দুই সন্ত্রাসীকে ঘটনার জড়িত থাকার অভিযোগে আটক করা হয়েছে।