ক্রাইমবার্তা রিপোট:তিস্তার পানির বদলে বাংলাদেশকে অন্য চারটি নদীর পানি নিতে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রস্তাবকে অবাস্তব ও ভয়ঙ্কর বলে মনে করেন দেশের পানিবিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, এক নদীর পানি না পেলে তা আরেক নদী দিয়ে পোষানো যায় না। তা ছাড়া, মমতার প্রস্তাবের নেপথ্যে অন্য কিছু রয়েছে বলে তারা মনে করেন। আসলে এই প্রস্তাবের অর্থ হচ্ছে প্রক্ষান্তরে ভারতের আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্প এগিয়ে নেয়া। এ ধরনের পরিবেশবিধ্বংসী প্রকল্পের ব্যাপারে পশ্চিমবঙ্গের এখন গ্রিন সিগন্যাল রয়েছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
দীর্ঘ ছয় বছর ধরে তিস্তা চুক্তি ঝুলিয়ে রাখার পর গত শনিবার সন্ধ্যায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পানি সমস্যা মেটাতে তোর্সা, জলঢাকাসহ উত্তরবঙ্গের কয়েকটি নদীর পানিবণ্টনের বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছেন। নয়াদিল্লিতে ভারতের রাষ্ট্রপতি ভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বৈঠক হয়। বৈঠক শেষে মমতা তৃণমূল নেতা মুকুল রায়ের বাড়ির লনে এ ব্যাপারে সাংবাদিকদের অবহিত করেন বলে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এতে বলা হয়, শনিবার নয়াদিল্লিতে রাষ্ট্রপতি ভবনে নৈশভোজের ফাঁকে মমতার সাথে বৈঠকে বসেন ভারত সফররত বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সন্ধ্যায় শেখ হাসিনার সাথে বৈঠক শেষে মমতা সাংবাদিকদের বলেন, তিস্তার সমস্যা তিনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে বুঝিয়ে বলেছেন। তিনি বলেন, তিস্তায় কোনো পানি নেই। পানির অভাবে এনটিপিসির বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ হয়ে গেছে। সেচের জন্য পানি পেতে সমস্যা হচ্ছে। তিনি বলেন, উত্তরবঙ্গে তোর্সা, জলঢাকাসহ চারটি নদী আছে। সেখানে পানি আছে। ফলে তিস্তার বিকল্প হিসেবে এই চারটি নদীর পানি ব্যবহার করা যেতে পারে। এর আগে ওই দিন সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে বৈঠকের একপর্যায়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ডেকে নেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজও বৈঠকে যোগ দেন। সেখানেও মোদি তিস্তার বিষয়টি তোলেন।
এ ব্যাপারে নদী, পানি ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞ ড. আইনুন নিশাত বলেন, তিস্তা চুক্তি নিয়ে দুই দেশের কারিগরি বৈঠক হয়েছে। সব কিছু বিবেচনা করে দুই দেশ একটি চুক্তি করতে প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে পৌঁছেছে। তাই এ নিয়ে নতুন করে কিছু করার নেই। আলোচনারও সুযোগ নেই।
অপর দিকে জাতিসঙ্ঘের সাবেক পরিবেশ বিশেষজ্ঞ ইঞ্জিনিয়ার ডক্টর এস আই খান নয়া দিগন্তকে বলেন, তিস্তার মালিক মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একা নন। এটি একটি আন্তর্জাতিক নদী। এই নদীর পানিতে বাংলাদেশের অধিকার রয়েছে, যা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। তিস্তার পানির ওপর বাংলাদেশের সেচ প্রকল্প নির্ভরশীল। তিনি বলেন, আসলে তিস্তার পানি নিয়ে যাওয়া হচ্ছে মানসে সংযোগ খালের মাধ্যমে। একইভাবে এই নদীর পানি নিয়ে যাওয়া হচ্ছে মহানন্দায়। সেখান থেকে গঙ্গায় ফেলা হচ্ছে। আর এসবই হচ্ছে আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্পের অংশ। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আসলে আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্পের পক্ষেই কাজ করছেন, যা বাংলাদেশের জন্য ভয়াবহ হবে।
এ ব্যাপারে পানিসম্পদ পরিকল্পনা সংস্থার (ওয়ারপো) সাবেক মহাপরিচালক প্রকৌশলী ম. ইনামুল হক বলেন, তোর্ষা দুধকুমার, ধরলা সম্পূর্ণ আলাদা অববাহিকা। এগুলোর কোনোটির সাথে তিস্তার বিন্দুমাত্র সম্পর্ক নেই। তিস্তা অববাহিকার চাহিদা এই নদীর পানি দিয়েই পূরণ করতে হবে। তোর্ষা দুধকুমার, ধরলার রয়েছে আলাদা আলাদা অববাহিকা। তিস্তা অববাহিকায় পানির প্রয়োজনীয় তোর্ষা দুধকুমার, ধরলা দিয়ে পোষানো যাবে না। অন্য নদীর পানি দিয়ে তিস্তার তৃষ্ণা মিটবে না। আসলে ভারত তাদের সেচ প্রকল্পে দেয়ার জন্য ও বিহারের মেচি নদীতে পাঠিয়ে দেয়ার জন্য তিস্তা নদী থেকে পানি সরিয়ে নিচ্ছে। আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখে ভারতের আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্পের কথাই উচ্চারিত হয়েছে, যা আসলে বাংলাদেশের জন্য খারাপই হবে।