ক্রাইমবার্তা রিপোট:প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারতে সফরে দেশের মানুষের আশা পূরণ হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশের মানুষ যা চেয়েছিল, ন্যুনতম আমার পানি বাঁচার জন্যে, আমার বেঁচে থাকার জন্যে, প্রায় তিনভাগের এক ভাগ মানুষ যে নদীর ওপর নির্ভর করে, কোটির উপরের বেশি মানুষে জীবন চলে, সেই নদীর পানির একটা মীমাংসা হবে, চুক্তি হবে। দুখজনক হলো সেটা হয়নি। হয়নি শুধু নয়, প্রধানমন্ত্রী নিজেই তার সফরের ফলাফল সম্পর্কে বলেছেন, ম্যায় পানি পাঙ্গা, মুচকো বিদ্যুৎ মিলা গা। কুচ তো মিলা। অর্থাৎ উনি নিজেই বলেছেন, মেলেনি, কোনোটাই মেলেনি, শুধু কুচ মিলেছে। সেটা বিদ্যুতের কথা বলেছেন তাও আবার পয়সা দিয়ে কিনতে হবে। উনি নিজেই বলে দিয়েছেন, আমাদের আর কিছু বলার আছে বলে আমি মনে করি না।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে ‘আমার দেশ’ পত্রিকাটি বন্ধের চার বছর পূর্তি উপলক্ষে এই আলোচনা সভা হয়। ২০১২ সালের এদিনে পত্রিকাটির প্রকাশনা বন্ধ করে দেয় সরকার।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, উনারা চিৎকার করে বলছেন, দুই দেশের সম্পর্ক উচ্চতর পর্যায়ে। একবারে স্পিরিচ্যুয়াল লেভেলে চলে গেছে। তো ভালো কথা। আমরা তো মাটির মানুষ আমাদের মাটিতে ফসল ফলাতে হয়, আমাদের নদীতে মাছ তুলতে হয়, জীবন-জীবিকা চালাতে হয়। আমাদের সরকার নতজানু। তারা নতজানু পররাষ্ট্র নীতি নিয়ে চলছে, তারা আদায় করতে পারবে না।
জিয়াউর রহমানের শাসনামলে গঙ্গা ব্যারেজ নিয়ে পানি সংকটের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আপনাদের মনে আছে- ফারাক্কা ব্যারেজ নিয়ে এই একই অবস্থা চলছিলো। জিয়াউর রহমান সাহেব সেটা জাতিসংঘে তুলেছিলেন, পরে বাধ্য হয়ে ভারত যেভাবে হোক একটা চুক্তি করতে সক্ষম হয়েছিলো।
সরকার দেশকে একদলীয় শাসনে নিয়ে গেছে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমরা ২০০৯ সাল থেকে একথা বলে এসছি- আওয়ামী লীগ ও গণতন্ত্র –এই দুইটা একসঙ্গে চলে না। তাদের চরিত্র এতটুকু বদলায়নি। ’৭৫ সালে যে কাজটি করেছিলো, সব সংবাদপত্র বন্ধ করে দিয়ে চারটি পত্রিকা রেখেছে, সব রাজণৈতিক দল নিষিদ্ধ করে দিয়ে একদলীয় শাসনের মতো ‘বাকশাল’ প্রতিষ্ঠা করেছিলো, সেই জায়গা থেকে তার তো সরেনি, শুধু তার কৌশলটা পাল্টিয়েছে।
তখন ছিলো সংসদে পাস করিয়ে একদলীয় শাসনব্যবস্থা বাকশাল করেছে। এখন দেখেছেন, পরিস্থিতি একটু ভিন্ন। সুতরাং ভিন্ন কৌশলে, ভিন্ন আঙিকে নতুন পোষাক পরিয়ে সেই একদলীয় শাসন ব্যবস্থাই এখানে করার জন্য সমস্ত ব্যবস্থা পাকাপোক্ত করে চলেছে। তারই ফলোশ্রুতিতে আমাদের দেখেছি, একটা একটা করে পত্রিকা-চ্যানেল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে, যেগুলোই তাদের বিরুদ্ধে স্পষ্ট সত্য কথা বলতে পেরেছে।
অন্যায়ের বিরুদ্ধে মাহমুদুর রহমানের বলিষ্ট ভুমিকার প্রশংসা করে তিনি বলেন, বর্তমান গণতান্ত্রিক আন্দোলনে অন্যতম একজন প্রধান ব্যক্তি যিনি সরকারের ষড়যন্ত্রের কাছে আপোষ করেননি। যিনি প্রতিবাদ করেছেন, রুখে দাঁড়িয়েছেন এবং তিনি সেই ব্যক্তি যিনি অন্যায়ের বিরুদ্ধে আদালতে গিয়েও নতি স্বীকার করেননি, মাফ চাননি আদালতের কাছে। এখানেই তিনি অন্যন্য।
দলের নেতা-কর্মীদের গুম-মিথ্যা মামলার পরিসংখ্যান তুলে ধরে ফখরুল বলেন, আমাদের নেতা-কর্মীরা নিজের এলাকায় থাকতে পারে না, অন্য এলাকায় থাকে। পুলিশ প্রতিদিন হয়রানি করছে, হয় টাকা নিচ্ছে নতুবা কারাগারে পাচ্ছে। এখন নতুন অস্ত্র বের করেছে জঙ্গি। এখন যার কাছ থেকে টাকা পাবে না, তাকে জঙ্গির কথা বলে গ্রেপ্তার করে আটকিয়ে রাখবে। বাংলাদেশে এক ভয়াবহ পরিস্থিতি শুরু হয়েছে। এটা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। যে নীলনকশা তৈরি হয়েছিলো ১৯৭১ সালের পরে বাংলাদেশকে একটা নিয়ন্ত্রিত রাষ্ট্র হিসেবে রেখে দেয়ার, সেই নীল নকশাই বাস্তবায়িত করতে তারা আজকে অনেক দূর এগিয়ে গেছে। এই অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবারও জানান বিএনপি মহাসচিব।
গণমাধ্যমের ওপর সরকারি হস্তক্ষেপের অভিযোগ করে স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, শুনেছি, দেশের সংবাদ-মিডিয়া নিয়ন্ত্রনে ১৮টি কমিটি আছে। প্রতিদিন, প্রতিঘন্টা, প্রতিদিন, প্রতি সাপ্তাহ তারা নিয়ন্ত্রণ করছে গণমাধ্যমকে। প্রতিদিন মিডিয়ার কর্মীদের সাথে আমাদের কথা হয়, তারা বলেন, বিশ্বাস করেন খসরু ভাই, আমরা আর সংবাদ কর্মী নাই, আমরা ম্যানেজার হয়ে গেছি। এখন আমাদের নিউজ ম্যানেজ করতে হয়।
অনেক সাংবাদিক দেশ ছেড়ে চলে গেছেন, দেশের মধ্যে যারা আছেন, তারা অনেকে দেশে ছাড়ার প্রক্রিয়ার মধ্যে আছেন। অনেকে সাংবাদিকতা ছেড়ে দিয়ে অন্যত্র চাকুরির খুঁজে আছেন। কারণ তারা ক্যারিয়ারের জন্য সাংবাদিকতা করতে এসেছেন, তারা বুঝতে পারছেন বাংলাদেশে সেটা সম্ভব হচ্ছে না।
সরকারের নতজানু নীতির প্রতি ইংগিত করে সভাপতির বক্তব্যে আমার পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান বলেন, ৪৫ বছরে আমরা স্বাধীনতা হারিয়ে ফেলেছি, বাংলাদেশ আর স্বাধীন দেশ নয়- এই বিষয়টি আজকে এখানে যারা উপস্থিত আছেন, সবাইকে বুঝবার জন্য আমি বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি।
আমি শুধু গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের স্বপ্নই নয়, স্বাধীনতা পুনরুদ্ধারের স্বপ্নও দেখি। আমাদের যে লড়াই সেটি ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে লড়াই, বর্তমান ফ্যাসীবাদের বিরুদ্ধে লড়াই-এই দুই লড়াইকে আমাদের এক করতে হবে, রাস্তায় নামতে হবে। যে হিন্দুত্ববাদের প্রেত্মাতা সরকার বাংলাদেশে ক্ষমতায় আছে, তাদেরকে উৎখাত করার জন্য আমাদের জীবনমরণ পণ করতে হবে। বুঝতে হবে বাংলাদেশে হিন্দুবাদ ও শিবসেনার ভারত শাসন করছে, সেই সরকারের প্রতিনিধিরা আজকে বাংলাদেশ শাসন করছে। এদের সরিয়ে দেশে একটি দেশপ্রেমিক সরকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে সকলকে অংশ নেয়ার আমি আহবান জানাচ্ছি।
ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের একাংশের সভাপতি আবদুল হাই শিকদারের পরিচালনায় আলোচনা সভায় অধ্যাপক এমাজউদ্দিন আহমেদ, ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, কবি ফরহাদ মজহার, অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী, ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি শওকত মাহমুদ, সাবেক সভাপতি রুহুল আমিন গাজী, আমার দেশ পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমেদ, আবদুস শহীদ, ইলিয়াস খান, কাদের গনি চৌধুরী প্রমূখ বক্তব্য রাখেন।
বিএনপির সেলিমা রহমান, রুহুল কবির রিজভী, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, হাবিব উন নবী খান সোহেল, প্রকৌশলী রিয়াজুল ইসলাম রিজু, শামীমুর রহমান শামীম, অঙ্গসংগঠনের সাইফুল আলম নিরব, সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, শফিউল বারী বাবু, আবদুল কাদের ভুঁইয়া জুয়েল, বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্বিবিদ্যালয়ের অধ্যাপক জিন্নাতুন নেসা তাহমিদা বেগম, বিএনপির অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন, অধ্যাপক সিরাজউদ্দিন আহমেদ, প্রকৌশলী আনহ আখতার হোসেন, অধ্যাপক ফরহাদ হোসেন ডোনার, অধ্যক্ষ সেলিম ভুঁইয়া, মীর সরফত আলী সপু, তকদির হোসেন জসিম, আবদুল লতিফ জনি, মোরতাজুল করীম বাদরু, সাংবাদিক নেতা এম আবদুল্লাহ, মুহাম্মদ বাকের হোসাইন প্রমুখ নেতা উপস্থিত ছিলেন।