বিনোদন প্রতিবেদক
চিত্রনায়ক শাকিবের সঙ্গে বন্ধুত্বের সম্পর্ক বিয়ে পর্যন্ত গড়িয়েছে বলে জানিয়েছেন চিত্রনায়িকা অপু বিশ্বাস। তাঁদের একটি ছেলেও রয়েছে। আজ সোমবার একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলকে তিনি এ কথা জানান।
অপু বিশ্বাস বলেন, ২০০৮ সালে ১৮ এপ্রিল তাঁদের বিয়ে হয়। শাকিবের ঢাকার বাসায় এই বিয়ে হয়। পরিবারের কাছের লোকজন সেই বিয়েতে উপস্থিত ছিলেন। বিয়ের সময় তাঁর নাম হয় অপু ইসলাম খান। শাকিবের ইচ্ছাতেই এত দিন বিয়ের বিষয়টি গোপন রাখা হয়েছে।
হঠাৎ আড়াল হয়ে যাওয়ার ১০ মাস পর গত ডিসেম্বরে ঢাকায় ফেরেন অপু বিশ্বাস। তবে তেমন করে গণমাধ্যমে হাজির হননি। আজ সোমবার আচমকাই তিনি বেসরকারি একটি টেলিভিশনের পর্দায় সাক্ষাৎকারে হাজির হন।
কেন এত দিন দর্শকদের চোখের আড়ালে ছিলেন উপস্থাপকের প্রশ্নের জবাবে অপু বলেন, প্রয়োজন ছিল। এটা জানাতেই মিডিয়ার সামনে হাজির হওয়া।
কিছু ছবির কাজ অসমাপ্ত রেখে আড়ালে যাওয়ার কারণ বলতে গিয়ে অপু বলেন, ‘প্রথমে একটা কথা বলে নেই, যেই ছবিগুলোর কাজ বাকি আছে সেগুলোর কাজ আগে শেষ করে দেব। কারণ মানুষের জীবনে বা ডিসিশন কখন কী হয়, এটা একটা মানুষ নিজেও বলতে পারে না । আমারও ১০ মাস আগে সেরকম একটা সিচুয়েশন হয়েছিল। …হারিয়ে যাওয়াটার নিশ্চয় কারণ আছে সে কারণটার অনেক লুকোচুরি ছিল।’
শাকিব-অপুর ভালো বন্ধুত্ব ছিল, দর্শক প্রিয় জুটি ছিল। কিন্তু হঠাৎ কী হলো? আপনি কেন চলে গেলেন এমন প্রশ্নের উত্তরে অপু বলেন, বন্ধু থেকে অনেক দূর সম্পর্ক গড়িয়েছে। আমরা বন্ধু ছিলাম, ভালো কাজও করেছি এক সাথে, এখনো করছি হয়তো ভবিষ্যতে করা হবে বা কী হবে জানি না। ডিপেন্ড করে সময়ের ওপর। প্রত্যেকটা মানুষ যে যতটা প্ল্যানিং করুক সময় কিন্তু তাদের কথা বলে।
সম্পর্কের গুঞ্জন বিষয়ে প্রশ্ন করলে টানলে অপু বলেন, সম্পর্ক বিয়ে অবধি। এটা আট বছর আগে আমাদের বিয়ে হয়েছে। কিন্তু যেহেতু আমরা মিডিয়ার মানুষ, তাই চেয়েছি মিডিয়ার ভালো হোক; নিজেদের ভালো ঢেকে রেখেও আমরা কথা বলেছি।
অপু বলেন, ২০১৮ সালের ১৮ এপ্রিল বিয়ে হয় তাদের। শাকিবের বাসায় বিয়ে হয়। তিনি বলেন, আমার মেজ বোন, শাকিবের ভাই মনির ও প্রডিউসার মামুনুজ্জামান মামুন উপস্থিত ছিলেন বিয়েতে। এর বাইরে কেউ ছিলেন না। বিয়ের জন্য কাজী এসেছিল শাকিবের দেশের বাড়ি গোপালগঞ্জ থেকে। বিয়ের সময় আমার নাম পরিবর্তন করে করা হয় অপু ইসলাম খান। অপু বিশ্বাস নামেই থাকতে চান তিনি।
বিয়ের পর কী হলো? শাকিব কলকাতায় এর মধ্যে শুটিং করতে গেলেও দেখা করেননি কেন জানতে চাইলে অপু বলেন, ওই সুযোগটি হয়ে ওঠেনি।
অন্য কোনো কারণে কি না জানতে চাইলে অপু বলেন, ‘মানুষ লাইফে নিজেকে ঠকাতে পারে, কিন্তু নিজের মানুষকে কেউ ঠকাতে পারে না। আমি ১০ মাস অনেক স্ট্রাগল করেছি।’ এ কথা বলেই কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।
এরপর এই নায়িকা বলেন, ‘একটা মানুষের ধৈর্য, স্ট্রাগল কত দূর হতে পারে। আমি তো জন্ম নিয়েছি মানুষ হিসেবে, অমানুষ হিসেবে নয়। আমি মানুষের ভালোই করতে চেয়েছি।…একটা মেয়ে কোন লেভেল পর্যন্ত কষ্ট করতে পারে?… ১০ মাসের কষ্টের ফল আমি কারও কাছে ছোট হয়ে যাব, আমাকে ছোট করা হবে এটা কাম্য ছিল না। আম সব সময় সবকিছু আমি জীবন দিয়ে আগলে রেখেছি। তার বিনিময়ে ছোট্ট একটা সম্মান চাইছি, আর কিছু চাইনি।’
অপু কেন এতটা ভেঙে পড়েছেন, আসলে কী হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার ছেলে আছে। শাকিব আর আমার একটা সন্তান আছে। সেই বাচ্চাটাকে আমি অনেক স্ট্রাগল করে জন্ম দিছি। শাকিব আমার পাশে ছিল না। আমাকে টাকা দিয়েছে। কোন মানুষ যদি অসুস্থ থাকে তাহলে তাকে টাকা দিয়ে কখনো …। ও-হওয়ার সময় আমি চেয়েছিলাম একবার ওর সঙ্গে হ্যালো বলি। আমি কী অন্যায় করেছিলাম। আমি তো শাকিবের ভালো চাই। এখনো চাই, চেয়ে আসছি। আমি নিজেকে অনেক সাফারার করছি। ওর মা আছে, বোন আছে। তারাও মেয়ে। তাঁদের জিজ্ঞেস করুক তাঁরা আমার মতো কষ্ট করে কিনা। আমার কী অন্যায়, আমি নায়িকা, আমার অন্যায় আমি শাকিবকে অনেক সাপোর্ট করেছি, এটা আমার অন্যায়। আমি ১০ মাস আড়ালে গিয়েছি। আমাকে নিয়ে অনেক বিদ্রূপ মন্তব্য হয়েছে। আমি গায়ে লাগাইনি। আমি জানি আমার শাকিবকে ঠিক রাখতে হবে।’
শাকিব ঠকিয়েছেন বলে অভিযোগ করেন অপু। বলেন, ‘আমাকে প্রতিনিয়ত সে ঠকিয়ে গেছে। কেন আমি তো ঠকাইনি। আমাকে বিয়ে করেছ, বলেছ অপু লুকায় রাখ। প্রত্যেকটা মুহূর্ত লুকায়ই রাখছি। আমি প্রেগন্যান্ট। আমাকে বলছে লুকায় রাখ। আমি এক মিনিটে প্রাণের ছবি ‘বসগিরি’; সেটা আমি এক মুহূর্তে ছেড়ে গেছি। টুঁ শব্দ করিনি।’
কেন শাকিব তাঁকে ছোট করল অপু এই প্রশ্ন করেন বেশ কয়েকবার। বিয়ের ব্যাপারটি কেন গোপন করেছে জানতে চাইলে অপু বলেন, ‘আমি চেয়েছি শাকিবের ক্যারিয়ার ভালো হোক। কিন্তু আমাকে ছোট করে নয়।’
নিজের ক্যারিয়ারের বিষয়ে জানতে চাইলে অপু বলেন, ‘আমি আমার ক্যারিয়ার চিন্তা করিনি। চেয়েছি ও ভালো থাকলে আমি ভালো থাকব। কিন্তু যে মানুষ আমি তাঁর ভালো চেয়েছি, আজকে সে আমাকে ছোট করে দিয়েছে।…আমার ওর প্রতি কোনো অভিযোগ নেই। আমার যেহেতু সন্তান, আমি তাকে নিয়ে সুখে শান্তিতে, থাকতে চাই। আমি অন্যায়কারী। তার জন্য আমি তার মর্যাদা মা হয়ে দিতে চাই।’
অপু জানান, ভারতে এই সন্তানের জন্ম হয়। শাকিব তখন দেশে শুটিং করছিলেন। ডিসেম্বরে তিন মাস বয়সী ছেলেকে নিয়ে তিনি বাংলাদেশে আসেন। এর দুই মাস পর শাকিব ছেলেকে দেখতে যান। শাকিব তাঁকে মানসিক সাপোর্ট করেননি।
বাচ্চাকে পেয়ে শাকিবের অনুভূতি কেমন ছিল জানতে চাইলে অপু বলেন, ‘বাচ্চা দেখে হ্যাপি সে। বাট, সেটা ঘরের মধ্যে; দরজার বাইরে না।’ তিনি বলেন, শাকিবের পরিবারের সবাই এসে তাঁদের সন্তানকে দেখে গেছে এবং তাঁদের সম্পর্কের ব্যাপারে পরিবার পজিটিভ।
একপর্যায়ে গণমাধ্যমের সামনে ছেলেকে হাজির করেন অপু। নাম আব্রাহাম খান জন। সন্তানকে শাকিব প্রতিনিয়ত বাসায় এসে দেখে যান, আদার করেন বলে জানান অপু।
সম্প্রতি এক নায়িকাকে নিয়ে অপু শাকিবের বাগ্বিতণ্ডা হয়। তবে অপু সেই নায়িকার নাম প্রথমে না নিলেও পরে তিনি স্বীকার করেন, ওই নায়িকার নাম বুবলী।
চলচ্চিত্র জগতে ক্যারিয়ারে প্রভাবের কথা ভেবে অনেক নায়ক নায়িকা বিয়ের কথা গোপন করলেও বাচ্চার বিষয়টি কেন গোপন করা হলো জানতে চাইলে অপু বলেন, শুধু ওর (শাকিব) কারণে। ওর ক্যারিয়ারে যেন সমস্যা না হয়। ওর ভালোটা আমি চেয়েছি। কিন্তু ও আমাকে ছোট করে দিয়েছে।’
শাকিব না করেছে কি না জানতে বলেন, ‘ও-না করার চেয়ে আমি চাইনি ওর প্রবলেম হোক। আমি এখনো চাইনা ওর প্রবলেম হোক।’
” onclick=”return false;” href=”http://paimages.prothom-alo.com/contents/cache/images/800x0x1/uploads/media/2017/04/10/4886e23be4cacc6202e2ddc01e846912-58eb589708358.jpg” title=”” id=”media_0″ class=”jw_media_holder pop-media-holder media_image jwMediaContent pop-active” data-image=”http://paimages.prothom-alo.com/contents/cache/images/800x0x1/uploads/media/2017/04/10/4886e23be4cacc6202e2ddc01e846912-58eb589708358.jpg” data-caption=”” data-author=”” url=”http://www.prothom-alo.com/entertainment#detail-image-1″>অপু বিশ্বাসদর্শকদের উদ্দেশে অপু বলেন, আমি ১০ মাস ছিলাম না। আপনারা আমাকে অপরাধী মনে করবেন না। আমি অবশ্যই কাজ করব। আপনারা আমার সন্তানের জন্য দোয়া করবেন। ও-যেন ভালো থাকে। মানুষের মতো মানুষ হতে পারে। …আমি অনেক কষ্ট সহ্য করেছি, অনেক অপমানিত, লাঞ্ছিত ও টর্চার (নির্যাতিত) হয়েছি। কোনো দিন মুখ ফুটে বলিনি। আজকেও বলতে চাইনি। কিন্তু আজ নিতান্ত অনেক ছোট করা হয়েছে। স্বামী হিসেবে বা বলা চলে যে অনেক ছবির হিরো সেখান থেকেও সে আমাকে উঁচু করে রাখতে পারত। সে আমাকে কখনো উঁচু করে রাখেনি।…আমি আট বছর চুপ ছিলাম। কারণ আমি একা ছিলাম। আজ ও (সন্তান ) আছে। আজকে আমার থেকে ওর ভালোটা দেখার দায়িত্ব আমার। আজকের এই প্রোগ্রাম যদি শাকিব দেখে থাকে তাহলে শাকিবের দায়িত্ব হবে দূর থেকে ওকে দোয়া করে যাওয়া। আফটার অল, সে বাবা।’ শাকিব যেন সন্তানকে না ঠকায়, সেই অনুরোধ জানান অপু।
অপমান বা টর্চার কীভাবে করা হয়েছে জানতে চাইলে অপু বলেন, ওটা আমাদের দুজনের ব্যাপার। আমি ওকে হেল্প করেছি। ও-আজকে আমাকে হেল্প করতে পারত। আজকে আমাকে ছোট না করলেও পারত।
সন্তানের সব খরচ শাকিব দেয় বলে জানান অপু। বলেন, ইচ অ্যান্ড এভরিথিং; যত খরচ লাগে অনেক টাকা লাখ লাখ টাকা ওকে দিয়ে গেছে।
শুধু টাকা দেওয়াই কী বাবার দায়িত্ব এই বিষয়ে জানতে চাইলে অপু বলেন, এ ব্যাপারে তাঁর কিছু বলার নাই। … আমি কেন দূরে? আমিতো ওকে পেটে নিয়েও দূরে। তবে সন্তান জন্ম দেওয়ার সময় অস্ত্রোপচারের সময় তিনি নিজে বন্ডে সই করে গেছেন বলেও জানান। তিনি আরও বলেন, আমার কী অন্যায়? আজকের আমাকে এতটা শাস্তি পেতে হলো। আমার কী চাওয়া-পাওয়া নেই? শুধু টাকা! শুধু টাকা দিয়ে মানুষের সেবা হয়ে যায়?
অপু জানান, বসগিরি চলচ্চিত্রটি তিনি ছেড়ে দিয়েছেন কারণ তখন তিনি অন্তঃসত্ত্বা। এত ছাড় দেওয়ার কারণে বিষয়গুলো দীর্ঘ হয়েছে কি না জানতে চাইলে বলেন, হ্যাঁ। এটা অমার এখন মনে হয়েছে। আমি ভুল করেছি। যেটা আমার অনেক আগে করা উচিত ছিল। এটা আমি বুঝেছি। যার জন্য আজকে ভাবলাম আমি এ জীবনে অনেক ছাড় দিয়ে দিয়ে আমি অনেক ঠকে গেছি। বাট, এ মাসুম বাচ্চাকে আমি ঠকাতে চাই না। আমি ওর পাল্লা ভারী করতে চাই না। আমার ঠকের পাল্লাতো অনেক ভারী হয়ে গেছে। আমি ধৈর্য ধরতে ধরতে… আসলে আমি জানি না আমি ধৈর্যের কতটা সীমায় চলে গেছি। …তার বিনিময়ে কিছু পাইনি।https://youtu.be/pwnkDD9dS_E
ফিট হয়ে ভালোভাবে কাজ করে আবার চলচ্চিত্র জগতে ফিরতে চান অপু। তিনি ছেলের জন্য সবার কাছে দোয়া চান। বলেন, ‘আমি ছেলেকে মানুষ করতে চাই। ও-তো ছেলে, আমি চাই ওর দ্বারা যেন কোনো মেয়ে প্রতারিত না হয়। এটা আমি ওকে শেখাব।’
অপুর এসব বক্তব্যের বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে শাকিব খান বিয়ে ও সন্তানের কথা স্বীকার করেন।