জনগণ প্রভুত্ব মেনে নেবে না : খালেদা জিয়া

ক্রাইমবার্তা রিপোট: বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদ জিয়া নতুন বাংলা বছরের দেশবাসীকে শুভেচ্ছা
জানিয়ে বলেছেনে, এ দেশের মানুষ কখনো প্রভুত্ব মেনে নেবে না। বাংলাদেশের
অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ জনগণ মেনে নেবে না বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ
করেন তিনি। আজ শুক্রবার বিকেলে পয়লা বৈশাখে দলের বাংলা নববর্ষবরণ
অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে এক সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, দেশের
জন্য, দেশের মানুষের জন্য সংগ্রাম যদি করতে হয়, আমরা সেই সংগ্রাম করবো
ইনশাল্লাহ এবং আমরা বিজয়ী হবো।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের অবস্থা দেখে অনেকে এগিয়ে আসতে চায় অভ্যন্তরীণ
ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করার জন্য এবং বাংলাদেশের উন্নয়নের নামে দেশের
অভ্যন্তরে ঢুকে দেশকে দূর্বল করার জন্য। বাংলাদেশে যখন ৮ কোটি লোক ছিলো
নিজেরা ঐক্যবদ্ধভাবে যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছিলো। আজকে ১৬/১৭ কোটি লোক
ঐক্যবদ্ধ, তাদের কারোর সাহায্যের প্রয়োজন নাই। আমরা স্পষ্টভাষায় বলতে
চাই, আমরা সকলকে বন্ধু হিসেবে দেখতে চাই, কিন্তু কেউ যদি আমাদের বন্ধু
হয়ে প্রভু হতে চায়, সেটা আমরা কখনো মেনে নেবো না, মানবো না। কারো
প্রভুত্ব বাংলাদেশের মানুষ স্বীকার করবে না। নতুন বছর সকলের জন্য শুভ হবে
কামনা করে দেশবাসীসহ নেতা-কর্মীদের অভিনন্দন জানান খালেদা জিয়া।
নয়া পল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ‘জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক
সংস্থা-জাসাস’-এর আয়োজনে বাংলা নববর্ষ-১৪২৪ উপলক্ষে এই অনুষ্ঠান হয়।
দুপুর থেকেই নয়া পল্টনের সড়কে হাজার হাজার নেতা-কর্মীর উপস্থিতিতে পহেলা
বৈশাখের অনুষ্ঠান সমাবেশে রূপ নেয়। বিকাল সাড়ে ৪টায় বেগম খালেদা জিয়া
গাড়ি থেকে নেমে হাজার হাজার নেতাকর্মীর উদ্দেশ্যে হাত নেড়ে নববর্ষের
শুভেচ্ছা জানান।
বর্ণাঢ্য আয়োজনে তবলা, হারমোনিয়া, ডুগযুগি, বাঁশিসহ নানা বাদ্যযন্ত্রের
মূর্ছনায় শুরু হয় পহেলা বৈশাখের জাসাসের এই অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে জাসাস
শিল্পীরা ভাটিয়ালী, দেশাত্মকবোধক, বাউল গান পরিবেশন করেন।
জাসাস সভাপতি অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক
হেলাল খানের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম
আলমগীর ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, তরিকুল ইসলাম, মাহবুবুর রহমান, মির্জা
আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, মোহাম্মদ শাহজাহান, ইনাম আহমেদ চৌধুরী,
এজেডএম জাহিদ হোসেন, আহমেদ আজম খান, নিতাই রায় চৌধুরী, আমানউল্লাহ আমান,
গাজী মাজহারুল আনোয়ার, আতাউর রহমান ঢালী, রুহুল কবির রিজভী, খায়রুল কবীর
খোকন, হাবিবউন নবী খান সোহেল, ফজলুল হক মিলন, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স,
শামা ওবায়েদ, সানাউল্লাহ মিয়া, মাসুদ আহমেদ তালুকদার, নুরী আরা সাফা,
আজিজুল বারী হেলাল, আমিনুল হক, হেলেন জেরিন খান, আমিরুল ইসলাম খান আলীম,
তাইফুল ইসলাম টিপু, নিপুন রায় চৌধুরী, সাইফুল আলম নিরব, সুলতান
সালাহউদ্দিন টুকু, মোরতাজুল করীম বাদরু, শফিউল বারী বাবু, আবদুল কাদের
ভুইয়া জুয়েল, রাজীব আহসান, আকরামুল হাসান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। জাসাসের
চিত্র নায়ক আশরাফউদ্দিন উজ্জ্বল, বাবুল আহমেদ, শায়রুল কবির খান,
মনিরুজ্জামান মুনির, আহসান উল্লাহ চৌধুরী, সালাহউদ্দিন ভুঁইয়া শিশির,
সানাউল হক, সিবা সানু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। পরে খালেদা জিয়া বর্ষবরণের
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন বিকাল সাড়ে ৫টায় গুলশানের উদ্দেশ্যে রওনা
হন।
সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে খালেদা জিয়া বলেন, নববর্ষ যেন বাংলাদেশের মানুষের
মনের সত্যিকারের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারে। আমরা কী চাই? আমরা চাই
গণতন্ত্র, আমরা চাই উন্নয়ন, আমরা চাই শান্তি, আমরা চাই জনগণের কল্যাণ,
প্রতিটি মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা, শিক্ষা সুযোগ প্রদানস ও
স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করা। তাই গণতন্ত্র ও জনগণের কল্যাণের জন্য
প্রয়োজন জাতীয় ঐক্য। বিএনপি সবসময়ে জনগনের কল্যাণ ও জাতীয় ঐক্যের বিশ্বাস
করে। আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকলে দেশের উন্নয়ন সম্ভব। আমরা দেশ থেকে বিদায় করবো
সন্ত্রাস, গুম-খুন-হত্যা ও জঙ্গি হামলা বিদায় করবো। বিদায় করবো নানারকম
ষড়যন্ত্র। এসব বিদায করে দেশে প্রতিষ্ঠা করবো শান্তি ও সুশাসন।
তিনি নেতা-কর্মীদের আহবান জানিয়ে বলেন, আজকে প্রয়োজন ঐক্যের, প্রয়োজন
শান্তির, প্রয়োজন কল্যাণের। আসুন বাংলা নতুন বছরে আমরা আজকে শপথ করি,
দেশের মানুষের দুঃখ-দুদর্শা দূর করবো এবং জনগণের কল্যাণ করবো।
দেশের মানুষ কষ্টে আছে মন্তব্য করে খালেদা জিয়া বলেন, কয়েকদিন আগের যে
বৃষ্টি ও বাইরে থেকে পানি এসে আমাদের হাওড় অঞ্চলের ফসলের ব্যাপক ক্ষতি
হয়েছে। সেজন্য গরীব কৃষকদের পাশে গিয়ে আমাদের দাঁড়াতে হবে। তাদের সাহায্য
করতে হবে তারা যেন এই দুযোর্গ কাটিয়ে উঠতে পারে।
সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের পানি সমস্যা একটা বড় সমস্যা। সামনে
শুকনো মৌসুম আসছে, এই মৌসুমে আমাদের পানির প্রয়োজন। সেজন্য আমরা বলতে
চাই, আমাদের যে পানির পাপ্য যে পানি আমরা চাই। আমরা কারো কাছে দয়া চাচ্ছি
না, কিন্তু আমরা আমাদের যতটুকু অধিকার, সেই অধিকারটুক চাই।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের প্রতি ইংগিত করে তিনি বলেন,
বর্তমান স্বঘোষিত প্রধানমন্ত্রী বেরিয়ে এসেছেন কিন্তু নিজের দেশের
মানুষের স্বার্থের কথা, নিজের দেশের মানুষের অধিকারের কথা বলতে পারেননি,
কিছু করতে পারেননি। বরং আজকে তিনি নিজের দেশের মানুষের জন্য কিছু না করে
দেশের মানুষের স্বার্থের কথা কিছু চিন্তা না করে নিজের দেশের সব কিছু
অন্যের কাছে দিয়ে এসেছেন, তার বিনিময়ে কিছুই আনতে পারেননি।
বেগম জিয়া বলেন, আজকে এতোগুলো চুক্তি ও এমইউ হয়েছে। আমরা বলতে চাই, যদি
তিনি (শেখ হাসিনা) সাহস করে শুধু একটা কথা বলতেই পারতেন, যে বলতে পারতেন
হ্যাঁ চুক্তি ও সমঝোতাগুলো আমার দেশের সাথে আলাপ করে আমরা করবো। কিন্তু
আজকে তিস্তার পানির ন্যায্য হিৎসা দেন, তাহলে আমি সমঝোতা করবো, তানাহলে
করবো না। এটা বললে আমরা সবাই তার পাশে থেকে সাহস ও সমর্থন জানাতাম।
অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, রুহুল কবির রিজভী
বক্তব্য রাখেন।

 

Check Also

আশাশুনিতে টঙ্গী ইজতেমায় হত্যার বিচারের দাবিতে মানববন্ধন

এস,এম মোস্তাফিজুর রহমান,আশাশুনি।।ঢাকার টঙ্গীত ইজতেমা-মাঠে নিরীহ মুসল্লিদের উপর উগ্রবাদী সন্ত্রাসী সাদ পন্থীদের বর্বরোচিত হামলা ও পরিকল্পিত …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।