ক্রাইমবার্তা রিপোট: সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে গ্রিক দেবী থেমিসের আদলে মূর্তি স্থাপন করে ‘সাম্প্রদায়িক মনোভাব প্রদর্শন করায়’ প্রধান বিচারপতিকে দায়িত্ব থেকে সরে যেতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির (চরমোনাই পীর) সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম। পাশাপাশি মূর্তির স্বপক্ষে কথা বলায় সরকারের দুই মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন ও হাসানুল হক ইনুর অপসারণ চেয়েছেন তারা।
রোববার দুপুরে রাজধানীর পুরানা পল্টনের আইএবি মিলনায়তনে মূর্তি অপসারণের দাবিতে মতবিনিময় সভার আয়োজন করে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ।
সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে মূর্তি স্থাপনের শুরুতেই কয়েকটি ইসলামী সংগঠন তা অপসারণের দাবি জানিয়ে আসছিল। সর্বশেষ সরকার প্রধান শেখ হাসিনাও মূর্তিটি সরাতে প্রধান বিচারপতির সাথে কথা বলবেন বলে জানিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রীর এমন মনোভাবের প্রতি আস্থা রয়েছে জানিয়ে সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম মতবিনিময় সভায় বলেন, প্রধানমন্ত্রী যে কথা বলেছেন, তার প্রতি আমরা সবাইই সম্মান প্রদর্শন করে কথা বলেছি। তবে তিনি কীভাবে তার কথা বাস্তবায়ন করবেন তাই আমরা গভীরভাবে লক্ষ করছি।
তিনি বলেন, আমরা ২০ এপ্রিল পর্যন্ত অপক্ষো করে দেখবো যে তিনি কতটুকু তার কথা বাস্তবায়ন করেছেন। যদি তার কথা বাস্তবায়ন না হয়, তাহলে ২১ এপ্রিল সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আমরা সমাবেশ করব। সেই সমাবেশে শুধু মূর্তি অপসারণ না, সাথে আরেকটি দাবিও থাকবে; প্রধান বিচারপতি, যিনি তার কাজের মাধ্যমে দায়িত্বে থাকার অধিকার আগেই হারিয়ে ফেলেছেন।
বক্তব্যের স্বপক্ষে যুক্তি তুলে রেজাউল করিম বলেন, মূর্তি বিজাতীয় ধর্মী কালচার হতে পারে। কিন্তু প্রধান বিচারপতি বাংলাদেশের সব মানুষের, যেখানে মুসলমানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। আর ইসলামের নীতিই হলো মূর্তির বিরোধিতা করা। কিন্তু সুপ্রীম কোর্টের সামনে মূর্তি স্থাপন করে তিনি তার নিরপেক্ষতা আগেই হারিয়ে ফেলেছেন। তিনি আর এই দায়িত্বে থাকতে পারেন না।
ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের আমির আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রীকে আমরা ধন্যবাদ জানাই। কিন্তু সরকারে কিছু লোক মাথা নিচু করে থাকে, যারা ইসলামের ক্ষতি করে। এই যে ইনু, তার মন্ত্রীত্ব তার কথার কারণেই থাকতে পারে না। কথার মাধ্যমে তিনি তার পদে থাকার যোগ্যতা হারিয়েছেন।
সংগঠনটির সিনিয়র নায়েবে আমীর সৈয়দ ফয়জুল করিম বলেন, মূর্তি না সরলে ২১ এপ্রিলের সমাবেশে কেবল মূর্তি না; এস কে সিনহা, দুইজনকেই সরতে হবে। সেই পদ্ধতিও আমরা আবিষ্কার করব।
ইসলামী আন্দোলনের আরেক নেতা ড. ঈসা সাহেবী বলেন, প্রধানমন্ত্রী প্রতারণা করছেন বলে মনে হয় না। কারণ তার কথা খেয়াল করলে বুঝা যায়, তিনি কিছু মনে রেখে বলেননি। আর এটি কে করেছে তা আমরা জানতাম না। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর কথার পর সেটি পরিষ্কার হয়েছে, এস কে সিনহা এটি করেছেন।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী এর বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার পর প্রধান বিচারপতির স্পষ্ট বক্তব্য শুনতে চাই আমরা। রাতারাতি যেমন এই মূর্তি বসানো হয়েছে, তেমনি অন্ধকারে সরিয়ে ফেললে হয়ে গেল। আপনি এটি রাখতে পারবেন না। রাতারাতি সরিয়ে ফেলেন।
এদিকে সুপ্রিমকোর্ট প্রাঙ্গণে মূর্তি স্থাপনকে প্রধান বিচারপতির সাম্প্রদায়িক আচরণ বলে মন্তব্য করেছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সাংগঠনিক সম্পাদক প্রকৌশলী আশরাফুল আলম। তিনি বলেন, এটি আপনার সাম্প্রদায়িক বিষয় হতে পারে। কিন্তু সেটি বাস্তবায়নের এটি সঠিক জায়গা না। এটি আপনার চেম্বার বা বাসা না।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পর বিচারবিভাগের ইঙ্গিত পাওয়া উচিত এ বিষয়ে। এবং সেটি বাস্তবায়ন করা উচিত। কিন্তু সরকারের মধ্যেও কিছু ঘাপটি মারা লোক রয়েছে।
এর আগে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পর তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় বিভিন্ন মহল থেকে। সরকারের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপি একে ধর্ম নিয়ে রাজনীতি বলে অভিযোগ তুলেছে। আর প্রগতিশীল রাজনৈতিক দলগুলো একে হেফাজতে ইসলামীর সঙ্গে সরকারের সমঝোতা বলে সমালোচনা করেছে। পরে শনিবার বিকেলে আওয়ামী লীগের পক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে মূর্তি সরানোর এখতিয়ার বিচার বিভাগের বলে জানান দলটির প্রচার সম্পাদক হাসান মাহমুদ।
এদিকে ইঙ্গিত করে খেলাফত আন্দোলনের নায়েবে আমীর মুজিবুর রহমান খালিদী মতবিনিময় সভায় বলেন, মন্ত্রীপরিষদের সদস্যদের মধ্যেও বিদেশি এজেন্ট, মেনন-ইনুদের গাত্রদাহ শুরু হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পর। এটিকে অশনিসংকেত বলে ইনু শপথ ভঙ্গ করেছে। তাকে মন্ত্রিসভা থেকে অপসারণ করো হোক।
মতবিনিময় সভায় আরও বক্তব্য দেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমীর সৈয়দ ফয়জুল করিম, মহাসচিব অধ্যক্ষ ইউনুস আলী, যুগ্ম মহাসচিব এটিএম হেমায়েত উল্লাহ, ইসলামী ঐক্য আন্দোলনের সাংগঠনিক সম্পাদক ড. আহমদ হোসেন প্রমুখ। পরিবর্তন
Check Also
ঢাকা প্রসঙ্গে বদলাতে পারে ভারতের পররাষ্ট্রনীতি
পাঁচ দশকের বিরতির পর গত মাসে বাংলাদেশের বন্দর নগরী চট্টগ্রামে একটি পাকিস্তানি পণ্যবাহী জাহাজ ডক …