ক্রাইমবার্তা রিপোট:তিস্তাসহ অভিন্ন ৫৪ নদীর ন্যায্য হিস্যার দাবি আদায়ে বাংলাদেশ সরকারকে জাতিসংঘে যাওয়ার জন্য সরকার পরামর্শ দিয়েছেন বিএনপির দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, আমাদের একটা কথা সব সময় মনে রাখতে হবে যে, আমাদের প্রয়োজন আমাদের মিটাতে হবে। সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি আপনারা পানি আনতে ব্যর্থ হয়েছেন, দাবি আদায়ে ব্যর্থ হয়েছেন। তাই অবিলম্বে তিস্তা নদীর পানি এবং ৫৪ টি অভিন্ন নদীর ন্যায্য হিস্যা আদায়ের দাবি জাতিসংঘে তুলে ধরুণ এবং সমস্যা সমাধানে তাদেরকে সম্পৃক্ত করুণ। কারণ আমরা কোনো দয়া চাই না, এটা আমাদের ন্যায্য অধিকার।
বুধবার (১৯ এপ্রিল) বেলা ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামে আয়োজিত এক মানববন্ধনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ‘‘রক্ত দিয়ে এনেছি স্বাধীনতা, জীবন দিয়ে রক্ষা করবো সার্বভৌমত্ব শীর্ষক’’ এ মানববন্ধনের আয়োজন করে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধাদল।
তিনি বলেন, আজকের এই মানব বন্ধন এটাই প্রমাণ করেছে দেশের মানুষ তাদের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব রক্ষার ক্ষেত্রে কোনো দিন আপোস করবে না। একটি কথা আমরা (বিএনপি) পরিস্কার করে বলতি চাই- বাংলাদেশে ১৯৭১ সালে আমরা যারা স্বাধীনতা যুদ্ধ করেছিলাম। আমরা কারো দয়ায় এই স্বাধীনতা পাইনি। আমাদের স্বাধীনতা এসেছে লক্ষ মানুষের রক্তের বিনিময়ে, মা-বোনদের ইজ্জতের বিনিময়ে। আমরা দীর্ঘ ৯ মাস লড়াই করে এই বাংলাদেশকে মুক্ত করেছি। আর সেই মুক্তিযুদ্ধের মুল চেতনা ছিল গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা। কিন্তু দুর্ভাগ্যের কথা আজকে স্বাধীনতার ৪৬ পরে সেই গণতন্ত্র নেই, গণতন্ত্রকে হরণ করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের প্রসঙ্গ তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, কিছুদিন আগে প্রধানমন্ত্রী ভারত সফরে গিয়ে অনেকগুলো চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সাক্ষার করে এসেছেন। কিন্তু আমাদের হাজারো লক্ষ মানুষের প্রাণের দাবি সেই তিস্তা পানির তিনি (প্রধানমন্ত্রী) চুক্তি করতে পারেনি। শুধু তিস্তা চুক্তিই নয়, অভিন্ন ৫৮টি নদীর ন্যায্যা হিস্যার কোনো চুক্তি করতে পারেননি। অথচ গত কয়েক বছর ধরে তারা যে বিষয়গুলো ছিল বাংলাদেমের জন্য ট্রাম্পকার্ড, যা ছিল বাংলাদেশের জন্য ধরকষাকষি বিষয় গুলো সেগুলো তিনি (প্রধানমন্ত্রী) অবলীলায় ভারতের কাছে তুলে দিয়ে এসেছেন। ট্রানজিট দিয়েছেন, ব্যবসা বাণিজ্যর সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছেন অথচ আমরা এখন পর্যন্ত কিছুই পাইনি। শুধু আশ্বাস পেয়েছি। প্রধানমন্ত্রী ভারত থেকে ফিরে এসে বলেছেন- পানি ম্যাংগা, ইলেকট্রিসিটি মিল্যা—কুছ তো মিল্যা। অর্থ্যাৎ আমাদের অবস্থা হয়েছে কুছ তো মিল্যা।
তিনি বলেন, যা পেয়েছি এতেই খুশি। এই যে নতজানু মনোভাব। এ মনোভাব দিয়ে কখনও দাবি আদায় করা যাবে না। আদায় করা যায় না। এবং এই সরকার ব্যর্থ হচ্ছে কারণ এরা জনগণের দ্বারা নির্বাচিত নয়। জোর করে ক্ষমতায় বসে আছে, দখল করে আছে। তাই যারা তাদেরকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রেখেছে তাদের কাছে আমাদের কোনো বিষয়ে ন্যায্য দাবি সেভাবে পেশ করতে পারছেন না। আদায়ও করতে পারছেন না।
তিনি বলেন, সম্প্রতি নেত্রকোনায় গিয়ে দেখে এসেছি উজান থেকে অসময়ে পানি এসে বন্যায় ব্যাপক ফসলের ক্ষতি হয়েছে। ফসল তুলিয়ে গেছে। এর একমাত্র কারণ হচ্ছে আমাদের কোনো চুক্তি নেই। তাই যখন বন্যা হয় তখন ভারত বাধাগুলো খুলে দেয় আমরা বন্যায় ভেসে যাই।
মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে যে আন্দোলন চলছে সেটা কোনো ব্যক্তি বা দলের জন্য নয়। এই আন্দোলন মানুষের অধিকার আদায়, বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষার আন্দোলন। তাই আমরা সরকারকে উদ্দেশ্য করে আবারও বলছি- আপনাদের শুভ বুদ্ধির উদয় হউক। নির্বাচন দিন। সেই নির্বাচন হতে হবে নিরপেক্ষ সরকার ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের অধীনে। কারণ আজকে গোটা বাংলাদেশের মানুষ একটা কারাগারের মধ্যে পড়ে গেছে। সেই কারাগার থেকে অবশ্যই বেরিয়ে আসতে হবে। তাই জনগণকে আহ্বান করবো আসুন- আমাদের ন্যায্য অধিকার আদায় ও রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ হই।
আয়োজক সংগঠনের সিনিয়র সহ-সভাপতি হাজী আবুল হোসেনের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক কর্ণেল (অব) জয়নুল আবেদীন, স্বনির্ভর বিষয়ক সম্পাদক শিরিন সুলতানা, সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান প্রমুখ বক্তব্যে রাখেন।
Check Also
ভোমরা বন্দরে চার মাসে ৪০০ কোটি টাকা আয়
দক্ষিণবঙ্গ সাতক্ষীরার আধুনিক নিরাপদ ও পরিবেশ বান্ধব বাণিজ্যিককেন্দ্র ভোমরা স্থল বন্দর। আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও দারিদ্র্য …