স্টাফ রিপোর্টার | ২০ এপ্রিল ২০১৭, বৃহস্পতিবার,
সিটিং সার্ভিস বন্ধ ঘোষণার টানা চারদিন নৈরাজ্য, কৃত্রিম বাস সংকট ও চরম যাত্রী ভোগান্তির পর ফের তা চালু করা হয়েছে। গতকাল বিকালে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) এক জরুরি সভায় আগামী ১৫ দিনের জন্য এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আর এ সিদ্ধান্তের ফলে সিটিং সার্ভিস আবার বহাল রইলো।
রাজধানীর এলেনবাড়ীর বিআরটিএ’র প্রধান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি, নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক শেষে বিআরটিএ’র চেয়ারম্যান মো. মশিয়ার রহমান সাংবাদিকদের জানান, আগামী ১৫ দিন রাজধানীতে সিটিং সার্ভিস চলবে। এই সময় সিটিং সার্ভিসের বিরুদ্ধে বিআরটিএ’র অভিযান বন্ধ থাকবে। তবে ভাড়া নিতে হবে সরকার নির্ধারিত হারে। কোনো কোম্পানির বাস নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বেশি আদায় করলে সড়কে কার্যরত ভ্রাম্যমাণ আদালত ব্যবস্থা নেবে।
তিনি বলেন, আগামী ১৫ দিনের মধ্যে সংশ্লিষ্ট সব অংশীজনদের নিয়ে বৈঠক করা হবে। যদি মনে করা হয়, সিটিং সার্ভিস নামে বিশেষ ব্যবস্থা থাকা উচিত, যাত্রী চাহিদা আছে। তাহলে সেটা আইনি কাঠামোর মধ্যে এনে চালু করা হবে। গত কয়েক দিনে গণপরিবহনে নারী-শিশুর দুর্ভোগের কথা বিবেচনায় নিয়ে আপাতত ১৫ দিন সিটিং সার্ভিসের বিরুদ্ধে অভিযান স্থগিত রাখার এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
বিআরটিএ’র চেয়ারম্যান বলেন, যারা অভিযানের কারণে বাস নামান নি, তাদের তালিকা করা হয়েছে। আরো কাজ চলছে। প্রথমে কারণ দর্শাতে হবে, তারপর শাস্তি দেয়া হবে। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন, ঢাকা সড়ক পরিবহন সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্যাহ, চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন, সাংবাদিক নাঈমুল ইসলাম খান প্রমুখ।
এদিকে গতকালও রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে যাত্রীদের। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন যাত্রীরা। গতকাল দুপুরে মতিঝিল খামারপাড় রুটে চলাচলকারী শতাব্দী পরিবহনের এক বাসের (ঢাকা মেট্রো-ব-১১-৮২৭৪) যাত্রী চৌধুরী জোসেন, শফিকুল ইসলাম পরাগ ও ইউসুফ সরকার ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তারা বলেন, গ্যারেজ থেকে গাড়ি না নামিয়ে যাত্রী দুর্ভোগ সৃষ্টি, আগের মতো স্বঘোষিত সিটিং সার্ভিসের বাড়তি ভাড়া আদায় ও যাত্রীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার বাড়িয়ে দিয়েছে। এনজিও কর্মী জোসেফ বলেন, তুরাগ থানার পাশে ঘেওর এলাকায় আমার বাসার পাশেই শতাব্দী পরিবহনের গ্যারেজ। মালিকরা চালক-শ্রমিকদের গালাগালি ও জোর-জবরদস্তি করেই বাস নামাতে দিচ্ছে না। জোসেফের কথার সত্যতা পাওয়া গেল স্বয়ং ওই গাড়ির সহকারী নাজমুল হাসান মোমেনের কথায়। তিনি বললেন, এ রুটে শতাব্দীর ৮০টা বাস আছে। বুধবার নেমেছে ২০টা। আগের দিন মঙ্গলবার নেমেছিল ১৩টা। মালিক নামতে না দিলে আমরা কী করবো।
একই গাড়িতে হাউজ বিল্ডিং থেকে বনানী পর্যন্ত আসা এক ছাত্রের কাছ থেকে জোর করে ২০ টাকা, তা না পেয়ে ১৫ টাকা আদায় করতে যাওয়ায় সহকারী মোমেনের সঙ্গে হাতাহাতিও হয়েছে। একইভাবে বনানী থেকে উঠে মগবাজারগামী যাত্রীদের কাছ থেকে ২০ টাকা ভাড়া দাবি করায়ও তর্ক হয় সহকারীর।
এছাড়া রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় কৃত্রিম গাড়ি সংকটের কারণে গতকালও বিভিন্ন সড়কে যাত্রী দুর্ভোগ চোখে পড়েছে। তেমনই একজন পঞ্চান্নোর্ধ আইমুন নেছা। হাতে দু’টি ভারি ব্যাগ। বাসের প্রতীক্ষায় এয়ারপোর্ট রোডের বনানীতে। যাবেন খিলগাঁও। একবার দাঁড়ান তো আবার ফুটপাথে বসে পড়েন। দুপুরের কড়া রোদে আধঘণ্টায়ও গাড়ির দেখা নেই। আইমুন নেছার পাশেই গাড়ির অপেক্ষায় ছিলেন, সেনানিবাসের শহীদ আনোয়ার হাইস্কুলের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী মাসুরী মারওয়া। তার হাত ধরে মা। তাদের অপেক্ষা ২০ মিনিটের। পাশেই গ্রামীণ পরিবহনে ওঠার জন্য দাঁড়িয়ে আছেন মিজানুর রহমান শামীম। তার অপেক্ষাও ২৫ মিনিটের কম না। তাদের সঙ্গে গাড়ির অপেক্ষায় সময় পার করছিলেন আরো অর্ধশতাধিক নারী-পুরুষ। অথচ সাধারণত স্টপেজহীন ওই স্থানে তেমন যাত্রী সমাগমই চোখে পড়তো না বলে জানান তারা।
শুধু বনানীর ওই স্থান নয়, গতকাল বুধবার রাজধানীর প্রায় সড়কে ও স্টপেজে বাসের জন্য অপেক্ষার এমন যাত্রী ভোগান্তি চোখে পড়েছে। কেবল তাই নয়। পকেট কাটার সিটিং সার্ভিস তুলে দেয়ার ঘোষণা ও মোবাইল কোর্ট চলার চতুর্থদিনও যাত্রীদের নাজেহাল করে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করেছে চালক-সহকারীরা। এনিয়ে যাত্রীদের সঙ্গে চালক-সহকারীর একাধিক ঝুট-ঝামেলাও চোখে পড়েছে।
গতকালও রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় মোবাইল কোর্ট চালানো হয়। সিটিং সার্ভিস বন্ধসহ আাইন লংঘনের দায়ে যানবাহন ও চালকদের শাস্তি দেয়া হয়েছে। বেলা প্রায় সাড়ে ১২টা। তিব্বত মোড়ে বিআরটিএ ভ্রাম্যমাণ আদালত-১ পরিচালনা করছিলেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মহিবুর রহমান। আল-মক্কা ট্রান্সপোর্টের একটি বাস থামানো হয়। যাত্রীরাও গাড়ি থেকে নামেন। চালকের খোঁজ নিতেই রাস্তায় গাড়ি রেখেই উধাও। অগত্যা যাত্রীদের অন্য একটি বাসে উঠিয়ে দেয়া হয়। তখন একাধিক যাত্রী তাদের কাছ থেকে সিটিং সার্ভিসের ভাড়া আদায়ের অভিযোগ করেন।
এ স্থানে সকাল ১১টা থেকে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত দেড়ঘণ্টায় ১৭টি মামলা ও জরিমানা আদায় করা হয়েছে।