ক্রাইমবার্তা রিপোট:সাতক্ষীরা জেলায় টাকার বিনিময়ে প্রাথমিক সমাপনি পরীক্ষায় প্রাপ্ত নাম্বার পাল্টে কম মেধাবী শিক্ষার্থীদের বৃত্তি পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ অভিযোগের তদন্তে একটি উপজেলাতেই ১০াট অনিয়মের সত্যতা মিলেছে। ইতোমধ্যে সাতক্ষীরার আরো ৪টি উপজেলা থেকে ৩৩ জন অভিভাবক তাদের সন্তানদের খাতা পুন:মূল্যায়ন করার জন্য জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে আবেদন করেছেন। ইতোমধ্যে তদন্ত শেষে ১০টি ফলাফল পরিবর্তনের অভিযোগে কালিগঞ্জ উপজেলার সাবেক ভারপ্রাপ্ত উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ফারুক হোসেন ও ডাটা এন্ট্রি অপারেটর ভবতোষ সরকারের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের পক্ষ থেকে অধিদপ্তরে সুপারিশ করা হয়েছে।
এদিকে, দুর্নীতির দায় থেকে মুক্তি পেতে কালিগঞ্জ উপজেলার তৎকালিন ভারপ্রাপ্ত উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ফারুক হোসেন ও ডাটাএন্ট্রি অপরেটর মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন স্থানে দরবার শুরু করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। অনিয়মের সাথে জড়িত কালিগঞ্জ উপজেলার তৎকালিন ভারপ্রাপ্ত প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ফারুক হোসেন তিন দিনের ছুটি নিয়ে ঢাকায় গিয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন কালিগঞ্জে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আব্দুল হাকিম। তবে এই দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির প্রামান পাওয়া গেলেও এখনো কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি জানিয়ে উপজেলা শিক্ষা অফিসার বলেন, বর্তমানেও ফারুক হোসেন সহাকারী শিক্ষা অফিসার হিসেবে এবং ভবতোষ সরকার ডাটাএন্ট্রি অপারেটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
চলতি বছর প্রাথমিক বৃত্তির ফলাফল ঘোষনার পরই কালিগঞ্জ উপজেলার ভারপ্রাপ্ত উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ফারুক হোসেন ও ডাটা এন্ট্রি অপরেটর ভবতোষ সরকার এর বিরুদ্ধে টাকার বিনিময়ে কম মেধাবি শিক্ষার্থীদের বৃত্তি পাওয়ার বিষয়টি নিয়ে কয়েকজন অভিভাবক প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের মাধ্যমে অধিদপ্তরে প্রেরণ করেন। মেধাবী শিক্ষার্থীদের পক্ষে মঞ্জুরুল হক নামে একজন অভিভাবক মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তর, সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক ও কালিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট প্রতিকার চেয়ে অভিযোগ করেন। মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তর, জেলা প্রশাসক ও উপজেলা প্রশাসন বিষয়টি আমলে নিয়ে জরুরী তদন্তের নির্দেশ দেন। নির্দেশ অনুযায়ী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. অহিদুল আলম বর্তমান কালিগঞ্জ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আব্দুল হাকিমকে দিয়ে তদন্ত করান এবং তিনি নিজেও ঘটনা স্থলে গিয়ে খোজ নেন।
অপরদিকে, কালিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার পক্ষথেকেও অভিযোগের তদন্ত করার জন্য পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কালিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নির্দেশে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) তদন্তে নাম্বার পাল্টে বৃত্তি পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগের সত্যতা খুজে পেয়েছেন বলে জানান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। অন্য তদন্ত কমিটি প্রায় ১০জন শিক্ষার্থীর নাম্বার বদলে দেওয়ার সত্যতা পেয়েছেন বলে তিনি জানান।
অভিযোগ , কালিগঞ্জ উপজেলার ভারপ্রাপ্ত শিক্ষা অফিসার ফারুক হোসেন ও ডাটা এন্টি অপরেটর ভবতোষ সরকার প্রতিটি ফলাফল বদলে দেয়ার জন্য ১০থেকে ২০হাজার টাকার বিনিময়ে কম নাম্বার প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের বেশি নম্বার দিয়ে নম্বার সিট তৈরি করে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে প্রেরণ করেন। জেলা শিক্ষা অফিস থেকে সেই নম্বার সিট অধিদপ্তরের প্রেরণ করা হয়। প্রাপ্ত বৃত্তির তালিকায়ও অনেক কম মেধাবী শিক্ষার্থীরা বৃত্তি পেয়েছে বলেও দেখা যায়। এছাড়া তৎকালিন ভারপ্রাপ্ত উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ফারুক হোসেন ও ডাটা এন্ট্রি অপরেটর তাদের নিকট আত্মীয়সহ একাধিক ব্যক্তির কাছ থেকে টাকার বিনিময়ে নাম্বার পাল্টে দিয়ে বৃত্তি পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. অহিদুল আলমের গঠিত তদন্ত কমিটি তৎকালিন কালিগঞ্জ উপজেলার ভারপ্রাপ্ত উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ফারুক হোসেন ও ডাটাএন্ট্রি অপরেটর ভবতোষ সরকারের বিরুদ্ধে ৯ জন শিক্ষার্থীর নাম্বার বদলে দেওয়ার সত্যতা পেয়েছে। একই সাথে কমিটি শিক্ষার্থীর ফলাফল বদলে বেশি নম্বার দিয়ে বৃত্তি পেতে সহযোগীতা করা এবং মেধাবী শিক্ষার্থীদের নাম্বার কমিয়ে দিয়ে বৃত্তি না পাওয়ার অভিযোগের সত্যতা খুজে পান। তদন্ত কমিটি এসব বিষয়ে সত্যতা পেয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের নিকট তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন।
সাতক্ষীরা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. অহিদুল আলম জানান, দুর্নীতির মাধ্যমে কালিগঞ্জ উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ফারুক হোসেন ও ডাটা এন্টি অপরেটর ভবতোষ সরকার ফলাফল বদলে দেয়ার অভিযোগ তদন্তে প্রমানিত হয়েছে। ইতোমধ্যে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে অধিদপ্তরের সুপারিশ করা হয়েছে। উল্লেখ্য, গত ১১এপ্রিল ২০১৭ মঙ্গলবার প্রাথমিকের বৃত্তির ফলাফল ঘোষনা করা হয়।